ত্রিশাল-৭ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ভিক্ষুক আবুল মুনসুর

দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভিক্ষা করেন আবুল মুনসুর। পেশায় ভিক্ষুক হলেও গত ইউপি নির্বাচনে ত্রিশাল উপজেলার বইলর থেকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হন। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে মাঠে নেমেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম জমা দেন ভিক্ষুক আবুল মুনসুর।
জানা যায়, বইলর ইউনিয়নের বড়পুকুরপাড় গ্রামের বাসিন্দা আবুল মুনসুর। পারিবারিক দৈন্যের কারণে অল্প বয়সেই দিনমজুরের কাজে নামতে হয় তাকে। বিয়ের পর অন্যের রিকশা ভাড়ায় চালিয়ে রোজগারের পথ বেছে নেন। তার ১০-১২ বছরের মাথায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তি। তার চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে দুই ছেলে কর্মঠ। এরপরও ১৪ বছর ধরে ভিক্ষা করেই চলছে তার সংসার। কিন্তু সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা জোটেনি তার কপালে। এই ক্ষোভ থেকেই জনপ্রতিনিধি হওয়ার স্বপ্ন জাগে তার মনে। স্বপ্নপূরণে গত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বইলর থেকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হন ভিক্ষুক আবুল মুনসুর। তখন পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে চশমা প্রতীক নিয়ে ৩৭৭ ভোট পেয়ে চতুর্থ অবস্থানে থেকে আলোচনায় আসেন তিনি।
এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে মাঠে নেমেছেন ষাটোর্ধ্ব বয়সী আবুল মুনসুর।
স্থানীয়দের ভাষ্য, প্রত্যেক চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থী বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করেন নির্বাচনে। অথচ কোনো খরচ ছাড়াই গত ইউপি নির্বাচনে মুনসুর পেয়েছিলেন ৩৭৭ ভোট। গতবারের মতো এবারও ভোর থেকে রাত অব্দি পাড়া মহল্লা, হাট-বাজারে একাই পোস্টার সাঁটানোর পাশাপাশি জনগণের কাছে ভোট চাইছেন তিনি। অনেকেই এটাকে পাগলামি বললেও, কেউ কেউ নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ বলে মনে করছেন এবং তাকে উৎসাহ দিচ্ছেন।
স্থানীয় মাহবুব আলম বলেন, ‘কতজনকে যোগ্য ভেবে ভোট দিলাম, কিন্তু কই এলাকার বা জনগণের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন কিংবা উপকার তো হলো না। এবার এই ফকিরকেই ভোট দেবো।’
আবুল মুনসুর ফকির জানান, ইউপি নির্বাচনে অনেক ভোটার তাকে সমর্থন করেছিলেন, সাড়া দিয়ে পাশে ছিলেন। নিরীহ প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ব্যাপক সাড়া পাবেন বলে আশা তার।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মতো অসহায় মানুষের ডাকে সাড়া দিয়ে যারা পাশে থাকছেন, তাদের কথা আমি সারাজীবন মনে রাখব। আর যদি আপনারা আমাকে এমপি বানান তাহলে সরকারি সব মালামাল যে পাওয়ার যোগ্য তার হাতে তুলে দেবো। কোনো গরিবই আর সরকারি সুযোগ-সুবিধার বাইরে থাকবে না।’
(ঢাকা টাইমস/০১ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/এসএ)

মন্তব্য করুন