কপ-২৮ সম্মেলন: জলবায়ু বিপর্যয়ে কার্যকর তহবিল গঠন ও সুষ্ঠু বণ্টনের প্রত্যাশা উন্নয়নশীল দেশগুলোর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪:৪০
অ- অ+

জাতিসংঘের জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ (কপ)-২৮ সম্মেলন শুরু হয়েছে। সম্মেলনের প্রথম দিনেই বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়ে তহবিল গঠন করেছেন প্রতিনিধিরা। তবে জলবায়ু বিপর্যয় মোকাবিলায় বৈশ্বিক কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও তহবিলের সুষ্ঠ বন্টনের প্রত্যাশায় থাকবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এবং ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো।

বৃহস্পতিবার দুবাইয়ের এক্সপ্রো সিটিতে থেকে শুরু হয় কপের ২৮তম সম্মেলন। ১৩ দিন ব্যাপী এই শীর্ষ সম্মেলন ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এতে বিশ্বের প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন ও রাশিয়ার কোন রাষ্ট্রপ্রধান এবারের সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন না। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ব্রিটেনের রাজা চার্লস সম্মেলনে অংশ নেবেন।

বার্তা সংস্থা রয়টাসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্মেলনের প্রথম দিনেই বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়ে তহবিল গঠন করেছেন প্রতিনিধিরা। যদিও এ তহবিলে কোন দেশ কী পরিমাণ অনুদান দিবে তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। তবে ইতোমধ্যে বেশ কিছু দেশ অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে কপ-২৮ সম্মেলনের আয়োজক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং জার্মানি ১০ কোটি ডলার, ব্রিটেন ৫ কোটি ১০ লাখ ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১ কোটি ৭৫ লাখ ডলার এবং জাপান ১ কোটি ডলার অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে।

দরিদ্র দেশগুলোর জন্য জলবায়ু বিপর্যয় তহবিল গঠন করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে কপ-২৮ এর প্রেসিডেন্ট সুলতান আল-জাবের বলেন, দুবাইয়ের এই পদক্ষেপ বিশ্বের কাছে একটি ইতিবাচক সংকেত।

চলতি বছর কপ-২৮ সম্মেলনের আগে জাতিসংঘের ক্লাইমেট অ্যাম্বিশন সামিটের পাশাপাশি জি৭, জি২০-তে বেশ কয়েকটি জলবায়ু সম্মেলনেই জলবায়ু সংকট আলোচ্যসূচিতে প্রাধান্য পেয়েছে। জলবায়ু পরির্বতের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী চীন-যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকগুলোতেও বিষয়টি উঠে এসেছে। ফলে এবারের সম্মেলনে ভাল কিছু হওয়ার প্রত্যাশা করছে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো।

প্রসঙ্গত, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রশ্নটি অনেক দিন ধরেই একটি বিতর্কিত বিষয় হয়ে ছিল।

উন্নয়নশীল দেশগুলো অনেকদিন ধরেই বলে আসছে যে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য তাদের দায় খুবই সামান্য। কিন্তু তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে, এবং সে কারণেই তারা জলবায়ু সংকট মোকাবিলার জন্য আরো বেশি অর্থ চায়। সে ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবিলার খরচ মেটানোর বিষয়টি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

এদিকে এতদিন ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের আলোচনায় বড় বিষয় হয়েছিল কীভাবে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমানো যায়, কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করা যায়। তবে তৃতীয় প্রশ্নটি হচ্ছে, এই সমস্যার প্রধান কারণই তো শিল্পোন্নত দেশগুলো, কিন্তু এর পরিণামে যে দেশগুলোকে সবচেয়ে প্রত্যক্ষভাবে ভুগতে হবে তারা হচ্ছে দরিদ্রতর উন্নয়নশীল দেশগুলো। তাই শিল্পোন্নত দেশগুলোর উচিত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করা।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাধারনত ঘন ঘন বন্যা, খরা, সামুদ্রিক ঝড়, ভূমিধস এবং দাবানলের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে। যে দেশগুলো সবচেয়ে বেশি মাত্রায় এগুলোর শিকার হচ্ছে তারা অনেক দিন ধরেই বলে আসছে এর মোকাবিলায় তাদের অর্থ দরকার। এর আওতায় যেমন বাড়িঘর, জমি, খামার, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতির মত অর্থনৈতিক ক্ষতি পড়বে, তেমনি পড়বে অন্যান্য ক্ষতিও যেমন মানুষের মৃত্যু, সাংস্কৃতিক এলাকা বা প্রাণবৈচিত্র্য ধ্বংসের মত বিষয়গুলোও।

এদিকে ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে বসবাসকারী শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠী রয়েছে, যা তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। এছাড়াও বৈশ্বিক পর্যায়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৬৫টি দেশের মধ্যে রয়েছে নেপাল ও শ্রীলঙ্কা।

“জলবায়ু সংকট কার্যত শিশু অধিকারের সংকট: শিশুদের জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (সিসিআরআই) প্রবর্তন” শীর্ষক প্রতিবেদনের এই সূচকটি ইউনিসেফের প্রথম শিশু-কেন্দ্রিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচক। শিশুদের ঘূর্ণিঝড় ও তাপপ্রবাহের মতো জলবায়ু ও পরিবেশগত ঝুঁকির সম্মুখীন হওয়ার বিষয়টির ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনে দেশগুলোকে ক্রমানুসারে স্থান দেওয়া হয়েছে।

যেখানে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও ভারত – দক্ষিণ এশিয়ার এই চার দেশে শিশুরা জলবায়ু সংকটের প্রভাবসমূহের শিকার হওয়ার অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিতে আছে। এই চার দেশের অবস্থান যথাক্রমে ১৪, ১৫, ১৫ ও ২৬ নম্বরে। নেপালের অবস্থান ৫১, শ্রীলঙ্কা আছে ৬১তম স্থানে। ভুটান আছে ১১১তম অবস্থানে, যেখানে শিশুরা অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিতে আছে। এ ছাড়া প্রায় ১০০ কোটি শিশু “অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ” হিসেবে চিহ্নিত করা ৩৩টি দেশে বসবাস করে করে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ।

(ঢাকাটাইমস/০১ডিসেম্বর/এমআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এক ডিআইজি ও তিন এসপিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত
জুলাইকে সবার গণজাগরণ ও ঐক্যের মাসে পরিণত করার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কার্টুন প্রকাশের অভিযোগে তুরস্কে সংঘর্ষ, গ্রেপ্তার ৪ জন
২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ দিনে রেকর্ড রিজার্ভ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা