পাল্টে যাচ্ছে অনুভূতি

পাল্টে যাচ্ছে অনুভূতি
নাজমীন মর্তুজা
থরহরি শরীরে কতো শত বাস্তব জ্ঞানের সঞ্চার হয়েছে,
সাত ঘাটের জল খেয়ে
বড়ো হতে হয়েছে।
এ জীবন স্পষ্ট,
সমগ্র জগৎ একই!
একটা ঠাট্টা মাত্র
এসবকিছুর মানে কী?
কেন রচিত জড়জগৎ, এই চৈতন্য; এই প্রাণ?
জবাব পাই না ...
হেমন্তের কুয়াশার মতোই
সৃষ্টির সত্যগুলি অবগুণ্ঠনে ঢাকা,
স্থির নিরুত্তর,
সাত ঘাটের জল খেয়ে খেয়ে
ভিন দেশে নোঙর ফেলে বসে আছি অনেক বছর।
আর কোনো বন্দর ডাকলো না,
কোথাও যাওয়ার নাই।
এ শহরের রাস্তায় আঁতিপাঁতি
খুঁজি প্রিয় ঋতুগুলি,
সেতাবগঞ্জ, মঙ্গলপুর, কাহারোল,
মোল্লাপাড়া, বাজনাহার বকুলতলার সীমানা
ছিল আমার খেলা,
কোথায় তারা?
খুঁজি আর খুঁজি,
ভাঙাচোরা উপচে পড়া বিন,
বৃক্ষহীন ফুটপাত, জনাকীর্ণ ময়দান, পিঙ্গল আকাশ,
কোথায় তুই?
স্মৃতির আনাচে-কানাচে পদশব্দ শুনি
ত্রস্ত হরিণের মতো পালায়,
যে ঢাকা শহরে বাস করেছি
এক যুগেরও অধিক,
সেখানে কোটি ছাড়িয়ে মানুষ
পোকামাকড়দের, জীবজন্তুর,
গাছপালার জায়গা কেড়ে নিচ্ছে
লুটেরার মতো।
প্রকৃতি-লক্ষ্মী পিছুতে পিছুতে
চৌকাঠের বার
ঋতুচক্র উঁকি ঝুঁকি দিয়ে ফিরে যায়,
ঢাকা শহর গভীর গভীরতর
অসুস্থ এখন
দেশের সবচেয়ে বড়ো বিপদ
জনগণের বাড়বাড়ন্ত।
বুদ্ধিমান কূটনীতিকরা বুঝতে পারলেন না মোটে!
মনুর সন্তানেরা চোরাপথে স্রোতের
মতো এসে দেশ ভাসিয়ে দিলো,
সারা দেশ জুড়ে ধস্ত করে
দিলো প্রকৃতিকে, উবে গেল
দণ্ডক বন, দাঁতন কাঠির
টানপড়ে যায় সুন্দরবনে।
হারিকেনের মায়াবী আলোয়
শুরু হয়েছিল শৈশব
বাড়িতে প্রথম টেলিভিশন
এলো যখন, আমার মায়ের তখন
বয়স বাইশ,
গ্যাসের উন্নয়ন চুরাশিতে, এক জীবনে
মায়ের অনেকবার জন্মান্তর ঘটে গেল,
টেলিভিশন, মাইক্রোওয়েভ,
কম্পিউটার, স্মার্টফোনের ঘেরাটোপের
মধ্যে বসেও কেন যেন
ভ্রমবশে চমকে উঠি,
জীবনের কন্ট্রাক্টর কেউ কি চেঁচিয়ে বলছে...
পিছনের দিকে বড্ড এগিয়ে গেছেন ম্যাডাম!নাজমীন মর্তুজা: বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ঐতিহ্যসচেতন কবি ও লোকসাহিত্য-সংস্কৃতির নিবিষ্ট একজন গবেষক। এই লেখকের মৌলিক ও গবেষণাগ্রন্থের সংখ্যা দশের অধিক। বর্তমানে তিনি সপরিবারে বাস করছেন অস্ট্রেলিয়ার এডেলেড শহরে।

মন্তব্য করুন