ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাসানীর কবর যে কারণে

মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৩:৩৮| আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৩:৪৪
অ- অ+

মাওলানা আবদুল হামিদ খান ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জে ধানগড়া পল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন। ভারতের আসাম রাজ্যের ধুবড়ী জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাসানচরে ১৯২৯ সালে প্রথম কৃষক সম্মেলনের আয়োজন করেন তিনি। এ সম্মেলন থেকে তার নাম রাখা হয়, ‘ভাসানীর মাওলানা’। এরপর থেকে নামের শেষে যুক্ত হয় ‘ভাসানী’।

১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর রাত ৮টা ২০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। পরে তার মরদেহ ঢাকা থেকে নিয়ে এসে টাঙ্গাইলের সন্তোষে দাফন করা হয়।

জানা যায়, তিন নেতার মাজার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দোয়েল চত্বরের উত্তর পাশে (বাংলার তিন বিখ্যাত রাজনৈতিক নেতা হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী, খাজা নাজিমুদ্দিন ও শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হক) তাকে কবর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

মাওলানা ভাসানী স্টাডিজ এর কোর্স শিক্ষক সৈয়দ ইরফানুল বারী বলেন, ‘তার কবর যেনো টাঙ্গাইলের সন্তোষে দেওয়া হয় তিনি মৃত্যুর আগেই বলে গিয়েছিলেন।’

তিনি বলেন, ১৯৭৬ সালের অক্টোবরে মাসের প্রথম সপ্তাহে সন্তোষ মসজিদে জুমার নামাজ শেষে মসজিদের ইমাম এবং আমরা ৪/৫ জন উপস্থিত ছিলাম। ভাসানী তখন আমাদের সবাইকে মসজিদের পাশে নিয়ে এলেন। এরপর বললেন, ‘তোমরা শুনো, আমার মৃত্যুর পর নানান জনে নানান জায়গায় দিতে চাইবে আমার কবর। আমার ইচ্ছে এবং তোমাদেরও করণীয় থাকবে আমার কবর যেন এখানে হয়।’

সন্তোষ কেন হবে? দুস্থ, হতদরিদ্রদের সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করেছেন। যারা মজলুম, শ্রমজীবী, মেহনতি মানুষ, জেলে কামার, কুমার, তাতী তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার, অধিকার কায়েম করার জন্য এবং দেশ সচেতন করা, রাজনীতি সচেতন করার কঠোর সংগ্রাম করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমার কবর যদি ঢাকায় হয়। শেরে বাংলা , হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পাশে হয় রাজনীতিবিদ হিসেবে হতে পারে। আমিতো শুধুমাত্র রাজনীতিবিদ ছিলাম না, একজন সমাজ বিপ্লবীও ছিলাম। সারা জীবনের আন্দোলনে সংগ্রাম ছিলো আসাম-পূর্ববঙ্গ। সমাজ বিপ্লবী সমাজের সাথে থাকতে চায় রাজধানীতে নয়।’

মাওলানা ভাসানী আরও বলেন, ‘রাজধানী হচ্ছে আরাম আয়েশী উচ্চবিত্ত মানুষের জন্য। আমার অনুগামী, অনুরাগী বা শিষ্য আছে সবাই দরিদ্র। ওরা খরচ করে কোথায় আমার কবর খুঁজবে, কোথায় থাকবে, কোথায় খাবে, কোথায় বসবে, কোথায় রাত্রিযাপন করবে? তাদের ভিতর একটা ভীতি কাজ করবে। হতদরিদ্র মানুষ যেন সহজে দেখতে পারে তাই এখানে দাফন করা হয়।’

মাওলানা ভাসানীর নাতি ও ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের সহকারী রেজিস্ট্রার এম. এ. আজাদ সোবহানী খান ভাসানী বলেন, ‘মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৭৬ সালে ১৭ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাত আটটা বিশ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন। সেসময় ঢাকার কোথাও সরকারিভাবে তাকে কবরস্থ করার চিন্তাভাবনা ছিলো। যতদূর জেনেছি, তিন নেতার মাজারে কবর দেওয়ার কথা ছিলো।’

এম. এ. আজাদ সোবহানী বলেন, আমাদের পরিবারের ইচ্ছানুযায়ী, জীবিত থাকতে দাদি বলেছিলেন, মাওলানা ভাসানীর শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী উনার কবর যেনো সন্তোষে দেওয়া হয়। কেনো না সন্তোষ একটি নিভৃত গ্রাম। উনি সারা জীবন গ্রামে থেকে রাজনীতি করেছেন। ওনার করবটা যেন গ্রামে দেওয়া হয়। যাতে করে খুব সহজেই বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষ উনার কবরে এসে দোয়া করতে পারেন।’

এরফলে ১৯৭৬ সালের ১৮ নভেম্বর সন্তোষে আজকের এই মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এখানে উনাকে সমাধিত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে তার কবরের পাশেই রয়েছে তার সহধর্মিণী বেগম আলেমা খাতুন ভাসানীর কবর।

(ঢাকাটাইমস/১২ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/জেডএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
রাঙ্গুনিয়ায় আম গাছের চূড়া থেকে ৭ ঘণ্টা পর উদ্ধার  কিশোরী
রামগঞ্জে নারীকে গলা কেটে হত্যা
ইতালির সক্রিয় আগ্নেয়গিরি মাউন্ট এটনা ভয়ানক লাভা ছড়াচ্ছে
রোনালদোপুত্রের অভিষেকে পর্তুগালের জয়, পিতার আবেগঘন পোস্ট
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা