দ্বাদশ নির্বাচন ক্ষমতাসীনদের ভাগাভাগির নির্লজ্জ খেলা: ইসলামী আন্দোলন

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম (পীর চরমোনাই) বলেছেন, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচন জনগণের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়ার নির্বাচন। এই নির্বাচন ভোট জালিয়াতি, ক্ষমতাসীনদের সীমাহীন লুটতরাজ, জুলুম, খুন, গুম ও অনিয়ম জারি রাখার নির্বাচন। এই নির্বাচন দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করা, ব্যাংকগুলো শূন্য করা, চুরি করে কোটিপতি হওয়ার অবৈধ পদ্ধতিকে অব্যাহত রাখার, পারস্পরিক ক্ষমতা ভাগাভাগির নির্লজ্জ খেলা। ফলে এই নির্বাচনে ভোট দেয়ার মানে এই ক্ষমতাসীনদের সব অন্যায়, জুলুম ও দুর্নীতিকে বৈধতা দেয়া, যা কোনোভাবেই জায়েজ নয়।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে দলটির পল্টনস্থ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘সরকারের আজ্ঞাবহ দলদাস নির্বাচন কমিশন আগামী ৭ জানুয়ারি প্রহসনমূলক একতরফা নির্বাচনের যে ঘোষণা দিয়েছে, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নির্লজ্জ ও শঠতাপূর্ণ নির্বাচন কেউ কখনো দেখেছে বলে মনে হয় না। ক্ষমতাসীন সরকার ২০১৪ সালে করল একতরফা প্রহসনের নির্বাচন, ১৮ সালে করল রাতের ভোট আর ২৪ সালে এসে করছে ডামি নির্বাচন। নিজ দলের একাধিক প্রার্থী বিভিন্ন নামে দাড় করানো, জেল থেকে মুক্তি দেয়ার লোভ দেখিয়ে বিরোধী নেতাদের নির্বাচনে দাড় করানো, কিংস পার্টি গড়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ানোর অপচেষ্টা করার মতো যা করছে এই সরকার, তাতে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম নির্বাচনের উদাহরণ হয়ে থাকবে এই নির্বাচন। নির্বাচন নিয়ে কতবড় নোংরামি হয়েছে তার উদাহরণ হয়ে থাকবে কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য। তিনি প্রকাশ্যেই বলেছেন, নির্বাচনে অংশ নেয়ার শর্তে কারাগারে থাকা সব বিরোধী নেতাকে মুক্তির প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। তার এই বক্তব্য প্রমাণ করে যে, কারাগারে থাকা না থাকার মতো যে বিষয় আদালতের ওপরে নির্ভরশীল তাও এখন এই সরকার কুক্ষিগত করে নিয়েছে।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির বলেন, ‘যাদের মধ্যে হালপ্রেম আছে, যারা দুর্নীতি, জুলুম-লুটতরাজকে ঘৃণা করেন, যারা মানুষের অধিকারকে সম্মান করেন তারা মঞ্চে ভোট কেন্দ্রে যাবেন না। যারা আল্লাহকে ভয় করেন, যারা মজলুমের বদদোয়াকে ভয় করেন, তারা কোনো ভোট দেবেন না। যারা ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করেন, যারা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারীদের সম্মান করেন তারা কেউ ৭ জানুয়ারি ভোটকেন্দ্রে যাবেন না।’
নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কেউ এই দেশবিরোধী অবৈধ নির্বাচনে জালিমদের সহযোগিতা করবেন। না। প্রশাসনের কর্মচারী-কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলব, আপনারা জনগণের বিপক্ষে গিয়ে সরকারের কোনো অবৈধ হুকুম তামিল করবেন না। আপনারা কেউ প্রহসনের নির্বাচনে সহযোগিতা করবেন না।’
‘এই জনবিরোধী প্রহসনের নির্বাচনে যারা সহযোগিতা করবে, জনগণ তাদেরকে কিছুতেই ক্ষমা করবে না’ এমন মন্তব্যও করেন ইসলামী আন্দোলন আমির।
নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি নিজেদের ভালো চান এবং দেশের মঙ্গল চান তাহলে এখনো সময় আছে, নির্বাচনি কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে পদত্যাগ করে চলে যান। জনগণ আপনাদের নাটক আর দেখতে চায় না।’
সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পাঁচটি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো- ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বন্ধ করতে হবে, বিদ্যমান জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নিবন্ধিত এবং আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে, জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিতে হবে এবং জাতীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পুনঃতফসিল ঘোষণা করবে এবং রাজনৈতিক কারণে বিরোধীদলের কারাবন্দি সব নেতাকর্মীকে মুক্তি দিতে হবে।
(ঢাকাটাইমস/৪জানুয়ারি/জেবি/এফএ)

মন্তব্য করুন