ভোটের টানে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ

তাওহিদুল ইসলাম, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:৩৪ | প্রকাশিত : ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ২২:১৬

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৭ জানুয়ারি। ইতোমধ্যে ভোটের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। নির্বাচন উপলক্ষে ভোট গ্রহণের দিন ৭ জানুয়ারি দেশের সব সরকারি, আধা—সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিস ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। শুক্র, শনি ও রবিবার— টানা তিন দিনের ছুটিতে মানুষ রাজধানী ছেড়ে গ্রামে ছুটছেন।

বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে দুপুর থেকেই বাস, ট্রেন ও লঞ্চে করে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেন সাধারণ মানুষ।

রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, গাবতলী বাস টার্মিনাল, আব্দুল্লাহপুর, সায়েদাবাদ ও সদঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সরেজমিনে দেখা গেছেÑ এসব বাস, লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলওয়ে স্টেশনে আগের চেয়ে কয়েকগুন যাত্রীর চাপ বেড়েছে।

যাত্রীরা বলেন, বছরের শুরুতে শীতে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া হয়। এ বছর আবার ভোটও আছে। একইসঙ্গে দুই কাজ হবে। টানা তিন দিনের ছুটিতে বেড়ানোও হবে আবার ভোটও দেওয়া হবে।

ঢাকা থেকে পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে আসেন মো. কাওসার হোসেন। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘নির্বাচন উপলক্ষে পরিবার নিয়ে গ্রামে যাচ্ছি। ৭ তারিখ ভোট দিয়ে ৮ তারিখ আবার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেব।’

কাওসার বলেন, ‘এবার নির্বাচনে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারব জেনে পরিবারের সবাইকে নিয়েই গ্রামে যাচ্ছি। টার্মিনালে এসে মনে হচ্ছে ঈদের মতই মানুষের ভিড়।’

ঢাকার সদরঘাটের ১৮ নম্বর গেট ২০নং পন্টুনে রাখা চাঁদপুরগামী রাজদূত লঞ্চের সুপারভাইজার মোহাম্মদ হাবিব ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘অন্য দিনের তুলনায় যাত্রী বেশি সেটা ঠিক আছে, কিন্তু নির্বাচন উপলক্ষে অন্যবারের তুলনায় এবার কম।’

রাজদূত লঞ্চের যাত্রী আক্তার হোসেন। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমার সংসদীয় আসন চাঁদপুর—৪। তিন দিন ছুটি পেয়েছি পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাবো আর যদি সুযোগ পাই তাহলে ভোটও দিয়ে আসবো।’

যাত্রাবাড়ি থেকে গোপালগঞ্জের উদ্দেশ্যে ধোলাইপার চেয়ারম্যান পরিবহন বাস কাউন্টারে আসেন কলেজ ছাত্র শাহ নেওয়াজ। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, শুক্র থেকে রবিবার পর্যন্ত বন্ধ থাকায় ভোটের আগেই গ্রামে যাচ্ছি। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বাসের টিকিট পেয়েছি।’

এই কলেজ শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘আমি এবার প্রথম ভোট দেব। এজন্য একটা আলাদা আনন্দ কাজ করছে।’

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মৌ আক্তার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘টানা তিন দিনের ছুটি পেয়ে গ্রামে যাচ্ছি। লম্বা লাইনে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে ট্রেনের টিকিট পেয়েছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে মৌ বলেন, ‘ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেব। আর যদি দেখি পরিস্থিতি ভালো না, তাহলে যাব না।’

কমলাপুর রেল স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সরোয়ার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গত কয়েকদিনের থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার যাত্রীদের ভিড় বেশি ছিল। আর স্বাভাবিকভাবেই বৃহস্পতিবার ভিড় বেশি থাকে। কিন্তু সামনে ভোট উপলক্ষে টানা তিন দিনের ছুটিতে ভিড় একটু বেশিই। মানুষ একই সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে আবার ভোটও দিতে পারবে।’

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের বেপারী পরিবহন কাউন্টার ম্যানেজার জাহাঙ্গীর বলেন, ‘প্রতি বৃহস্পতিবারই সাধারণত যাত্রীদের ভিড় থাকে। তবে তুলনামূলক গত সপ্তাহগুলো থেকে এই বৃহস্পতিবার যাত্রীদের ভিড় কিছুটা বেশি।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ—পরিবহনের (ঢাকা নদী বন্দর, সদরঘাট) নৌ—নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সূত্রে জানা যায়, অন্যান্য দিনের তুলনায় যাত্রীর চাপ মোটামুটি বেশি। টানা তিন দিনের ছুটিতে যাত্রীর চাপ রয়েছে। বুধবার বিভিন্ন রুটে সর্বমোট ৫৯টি জাহাজ চলাচল করলেও বৃহস্পতিবার ৬৫টিরও বেশি জাহাজ চলছে। এছাড়া বুধবার বরিশাল রুটে দুটি জাহাজ চলাচল করেছে কিন্তু বৃহস্পতিবার এই রুটে ঢাকা থেকে চারটি জাহাজ ছেড়ে গেছে।

সদরঘাটে বরিশালগামী যাত্রীবাহী লঞ্চের পরিস্থিতি জানিয়ে বিআইডব্লিউটিএর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. জহিরুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘অন্য দিনগুলোতেও যাত্রীর চাপ ছিল। তবে বৃহস্পতিবার তুলনামূলকভাবে যাত্রী অনেক বেশি। সবচেয়ে বেশি চাপ কেবিনে।’

জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন উপলক্ষে মানুষ কয়েকগুন বেশি যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত প্রায় ৮০টা লঞ্চ ছেড়ে যাবে। প্রতি লঞ্চেই ৭০০ এর বেশি যাত্রী যাচ্ছে।’

এদিকে ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে প্রাইভেট পরিবহন সিএনজি, বাইকে করে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে।

গাবতলী থেকে মানিকগঞ্জ সিঙ্গাইর উপজেলায় যাচ্ছেন অনন্ত। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘নিজের মোটরসাইকেলে বাড়িতে যাচ্ছি। ভোটের পর ঢাকায় ফিরব।’

প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের প্রচার শেষ হয়েছে আজ শুক্রবার ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টায়। নির্বাচনের প্রার্থীরা প্রচারের সময় পেয়েছেন ১৯ দিন। এই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৪২ হাজার ১০৩টি। আর ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। আর হিজড়া ভোটার রয়েছেন ৮৫২ জন।

নির্বাচনে চার লাখ ছয় হাজার ৩৬৪ জন প্রিজাইডিং অফিসার, দুই লাখ ৮৭ হাজার ৭২২ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪৩ জন পোলিং অফিসার, মোট নয় লাখ নয় হাজার ৫২৯ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, ভোটের আগে পরে ১৩ দিন নিয়োজিত থাকবে আইন—শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আনসারের পাঁচ লাখ ১৬ হাজার সদস্য, কোস্টগার্ডের ২ হাজার ৩৫০ জন, বিজিবির ৪৬ হাজার ৮৭৬ সদস্য, পুলিশের (র্যা বসহ) থাকবে ১ লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন সদস্য। অর্থাৎ সাত লাখ ৪৭ হাজার ৩২২ জন সদস্য ভোটের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়া মাঠে থাকবে সশস্ত্র বাহিনীও।

(ঢাকা টাইমস/০৪ জানুয়ারি/টিআই/এসআইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :