ঘরে কাঁদে দুধের শিশু খোঁজ মেলেনি মায়ের

আহম্মেদ মুন্নী, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:২০| আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭:৩২
অ- অ+
ট্রেনে আগুনের ঘটনায় নিখোঁজ এলিনা ইয়াসমিন।

এলিনা ইয়াসমিন। বসবাস করেন ঢাকায়। শীতের ছুটিতে তার ৬ মাসের বাচ্চাসহ পরিবারের ৬ সদস্য একসঙ্গে বেড়াতে যান রাজবাড়ীতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে। বেড়ানো শেষে শুক্রবার রাতে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকায় ফিরছিলেন তারা। ট্রেনটি যখন গোপীবাগ এলাকায়, অর্থাৎ আর দু-তিন মিনিটের মধ্যেই ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছাবে। ঠিক এ সময়ই আগুন ধরে যায় ট্রেনে। সেই আগুনে পরিবারের ৫ জন প্রাণে বাঁচলেও এখনো নিখোঁজ এলিনা ইয়াসমিন। আহত সদস্যরা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন।

শনিবার সকাল ৯টায় সরেজমিনে বার্ন ইনস্টিটিউটের সামনে নিখোঁজ এলিনা ইয়াসমিনের ভাই ইমতিয়াজের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা টাইমসের। এ সময় তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার বোনকে হারিয়ে ফেলেছি। বোনের বাচ্চাটার বয়স ৬ মাস। দুধের শিশু। বাচ্চাটা হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তার মায়ের জন্য কাঁদছে। এদিকে আশপাশের অসংখ্য মানুষ বাসায় এসে ভিড় করছে। কিন্তু তার মাকে তো কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।

ট্রেনে আগুনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ট্রেনে আগুন দেখতে পেয়ে যাত্রীরা নামার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করেন। কেউ জানালার গ্লাস ভাঙছে নামার জন্য। কেউ লাফিয়ে পড়ছে। এমন সময় আমার বোন এলিনা নিজের কোলে থাকা ছয় মাসের শিশুকে আরেক বোন ডেইজির কোলে তুলে দিয়ে ট্রেন থেকে পরিবারের বাকি সদস্যদের নামতে সহযোগিতা করে। তারা নামতে পারলেও শেষে এলিনা ইয়াসমিন নিজেই নিখোঁজ হয়ে যায়। দুর্ঘটনার স্থান ও পুরো এলাকা তন্নতন্ন করে খুঁজেও তাকে এখনো পাওয়া যায়নি।

ইমতিয়াজ আরও বলেন, আমার পরিবারের ছয় সদস্যের মধ্যে বোনের দুই ছেলে রেহান ও দেহান, দুলাভাই ইকবাল খান, বোন ডেইজি আক্তার, আরেক স্বজন আরফান। আমার বোন এলিনা আক্তারও তাদের সঙ্গে ছিল।

কান্না থামিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে ইমতিয়াজ আরও বলেন, আমার পরিবারের লোকজন ধোঁয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। আল্লাহর রহমতে তারা এখন সুস্থ আছে। তাদের সবার চিকিৎসা চলছে বার্ন ইউনিটে।

বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছোট শিশু রেহানের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ। প্রতিবেদককে সে বলে, ‘অনেকগুলা আগুন ছিল, আমার ফুফু (এলিনা ইয়াসমিন) বলে যাও যাও লাফ দাও, আমি লাফ দিছি। আমার কাশি হইছে, আমি কান্না করছি, আমাকে নিয়া আসছে ।’

বার্ন ইউনিটে ভর্তি ইকবাল হোসেন খান ট্রেনে আগুনের সেই দুর্বিষহ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ‘অমরা যখন গোপীবাগে, হঠাৎ তখন দেখলাম আগুন, এক মিনিটের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ট্রেনে। আর সামনের বগিটা ছিল এসি কম্পার্টমেন্ট। আর এসি কোচের জন্য আমরা আটকে যাই। কোনো গার্ড বা কেউ ছিল না যে আমরা ট্রেনকে থামাতে বলবো। আগুন নিয়েই আমাদের ট্রেনটি প্রায় দুই-তিন মিনিট চলছিল। যেহেতু সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনটি থামানোর ব্যবস্থা ছিল না, তাই মুহূর্তটি এত ভয়াবহ ছিল যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমি চ-নম্বর বগিতে ছিলাম। সেই বগিতে আরও ৩০ জনের মতো যাত্রী ছিল। তাদের সবারই কমলাপুর স্টেশনে নামার কথা ছিল। তবে আকস্মিক আগুন দেখতে পেয়ে সবাই ছোটাছুটি করে এবং জানালার কাচ ভেঙে জীবন বাঁচাতে লাফ দিয়ে নিচে নামতে থাকে।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাত সোয়া ৯টার দিকে রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। অগ্নিদগ্ধ আরও ৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তারা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।

(ঢাকাটাইমস/৬জানুয়ারি/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এপ্রিলের ২৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬০ কোটি ৭৬ লাখ ডলার
নির্ধারিত সময়ের দুই মাস আগেই সব দেনা পরিশোধ করল পেট্রোবাংলা
ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব: অর্থ উপদেষ্টা
উপদেষ্টাদের সঙ্গে পুলিশের মতবিনিময়, বিভিন্ন প্রস্তাব বাস্তবায়নের আশ্বাস
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা