দুপুরের পরই পাল্টে যায় ভোটের পরিবেশ

হাসান মেহেদী, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:১৪| আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১৩:০৯
অ- অ+

নির্বাচনের দিন সকালে দেশের প্রায় সকল কেন্দ্রেই ভোটের পরিবেশ অবাধ সুষ্ঠু থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে অশান্ত ভীতিকর পরিস্থিতি করে তোলে নৌকা সমর্থিত এজেন্ট এবং দলীয় লোকজন। এজেন্ট বের করে দেওয়া, জালভোট প্রদান, গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন ঘটনা ঘটানো হয়। এমন পরিস্থিতির জন্য দুপুরের পর থেকে ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কমতে থাকে।

বেসরকারি ফলাফলে ৩শ আসনের মধ্যে ২২৩টি আসনে জয়ী হয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন অবাধ. সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হয়েছে বলা হলেও আসলে কেমন ছিল ভোটের দিনের পরিবেশ, সেই বিষয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ করেছে ঢাকা টাইমস।

ভোট শুরু হওয়ার আগে রবিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর করাতিটোলা সিএমসি মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, (মহিলা ভোটার) কেন্দ্রের মূল গেটে আনসার সদস্যদের লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। সময় ভিডিপি সদস্য অন্তর আলী আহত হন।

সকাল ৮টা থেকে ১০টাÑ রাজধানীসহ সারাদেশে এই প্রথম দুই ঘন্টায় ভোটারদের উপস্থিত ছিল খুবই কম। কোনো কোনো কেন্দ্রে প্রথম দুই ঘন্টায় ভোট পড়েছে এক থেকে দেড়শ মত। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় অনেক কেন্দ্রেই কিছুটা ভোটারের উপস্থিত লক্ষ করা যায়। তবে সেই সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে কম ছিল। অনেক কেন্দ্রেই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ফাঁকা দেখা গেছে।

বেলা ১১ টার দিকে রাজধানীর কমলাপুরের একটি কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে এমপি প্রার্থীদের এজেন্ট থাকলেও ভোটার সংখ্যা দুই একজন। সময় চীন থেকে আগত বিদেশী পর্যবেক্ষক কেন্দ্রটি পর্যবেক্ষণ করেন।

ভোট কেন্দ্রের ভেতরে ক্ষমতাসীন দলের নৌকা মার্কা ছাড়া অন্যান্য মার্কার পোলিং এজেন্ট ছিল খুবই কম। আবার অনেক কেন্দ্রের ভেতর নৌকা সমর্থিতদেরই কয়েকজন বিভিন্ন প্রার্থীর এজেন্ট কার্ড গলায় ঝুলিয়ে বসে থাকতেও দেখা গেছে।

এদিকে, খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ভোটকেন্দ্রে নৌকার পোলিং এজেন্ট ছাড়া অন্য কারও এজেন্ট তিনি দেখতে পাননি।

এছাড়া, ভোট কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগের নৌকার সমর্থক ব্যতিত অন্য দলের নেতাকর্মীদের তেমন উপস্থিতি লক্ষ করা যায়নি। ভোটের মাঠে বিভিন্ন কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বেশ কিছু সংসদ সদস্য, মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী এমনই হ্যাভিওয়েট প্রার্থীদের প্রভাব বিস্তারে ভোটের মাঠে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করেছে বলে জানিয়েছেন অনেক সাধারন ভোটার।

দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা-১০ আসনের সিটি কলেজের ৩৩ ৩৫ নম্বর কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের ঘুমিয়ে, পেপার পড়ে গল্প করে সময় কাটাতে দেখা যায়। আসনে জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও এজেন্ট ছিল নৌকাসহ - জনের।

৩৩ নম্বর কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মোসাদ্দেক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ঢাকা-১০ আসনে ৩৩ নম্বর কেন্দ্রে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৯৪টা ভোটগ্রহণ হয়েছে। এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ১৩৩৩ জন।

৩৫ নম্বর দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৬৮টি ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রিজাইডিং অফিসার সৌমিত্র সরদার। তিনি বলেন, ‘আমার এখানে লাঙ্গলের কোনো এজেন্ট নেই। নৌকাসহ - প্রার্থীর এজেন্ট আছে।

ঢাকা-১৪ আসনের রূপনগরের মণিপুর উচ্চ বিদ্যালয় কলেজ এর নম্বর শাখা, ভোট কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী এজেন্ট সমর্থক ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর সমর্থক দেখা যায়নি। এমনকি কেন্দ্রের বাইরেও অন্য কোনো সমর্থকদের চোখে না পড়লেও নৌকার পক্ষের লোক ছিল অগণিত।

ঢাকা-১৪ আসনের নৌকা প্রতীকের বিপরীতে এমপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন সাবিনা আক্তার তুহিন। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, সকাল থেকেই বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বেড় করে দেওয়া হয়। এছাড়া, সকাল ১১টা থেকে কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের কাছ থেকে স্বাক্ষর রেখে তাদের বেড় করে দেওয়ার অভিযোগ করেন তিনি।

এছাড়া, দুপুরের পর থেকে দুই একটি কেন্দ্র ব্যতিত প্রায় অধিকাংশ কেন্দ্রেই তার এজেন্টদের বের করে দিয়ে ভোট কারচুপির অভিযোগ করেন তিনি।

রাজধানীসহ সারাদেশেই দুপুরের পর পাল্টে যায় ভোটের পরিবেশ। অনেক কেন্দ্রেই কিছু কিছু ভোটার উপস্থিত লক্ষ করা যায়। তবে সেই সুযোগে নৌকা সমর্থিতদের এজেন্টরা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের সামনেই একের পর এক জাল ভোট দিতে থাকেন। যা সাধারণ ভোটারদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি করে। কেন্দ্রের মধ্যে এমন পরিবেশের ঘটনা বাইরে ছড়িয়ে পরলে ভোটারদের মাঝে ভোট প্রদানের উৎসাহ হারিয়ে যায়। এর পর থেকে প্রায় সব কেন্দ্রেই ভোটার উপস্থিতি কমতে থাকে।

নারায়ণগঞ্জ- (রূপগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বস্ত্র পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর বিরুদ্ধে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে ভোটের দিন। রূপগঞ্জের বেশির ভাগ কেন্দ্র দখল, কেন্দ্রের বাইরে নৌকার ক্যাডার বাহিনীর মহড়া, বিভিন্ন কেন্দ্রে সাংবাদিকসহ অন্যান্য এজেন্টদের ওপর হামলা, বিপুলসংখ্যক জাল ভোট প্রদানসহ নানা অভিযোগ তাদের রয়েছে এই আসনটিতে।

দুপুরের পর রূপগঞ্জের চনপাড়া এলাকায় বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে প্রকাশ্যে জাল ভোট দেয় নৌকার এজেন্টরা। সময় গণমাধ্যকর্মীদের ওপর কয়েকটি হামলারও ঘটনা ঘটে। এছাড়া, কায়েতপাড়া ইউনিয়নে কয়েকটি কেন্দ্র ছিল নৌকার দখলে সেখানে নৌকা ব্যতিত অন্য কোনো প্রার্থীদের এজেন্ট দেখতে পাওয়া যায়নি। তবে ভোট কেন্দ্রের মধ্যে অন্য প্রার্থীদের কার্ড গলায় ঝুলিয়ে নৌকার লোকজনদের বসে থাকতে দেখা গেছে।

দুপুরের পর থেকে ঢাকা- আসনের বেশ কিছু কেন্দ্রে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বর্তমান সাংসদের বিপরীতে এই আসনের নৌকাসহ আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। বেশ কিছু কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়া এজেন্টদের রেড় করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে।

ঢাকা- আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ঢাকা টাইমসকে বলেন, এই আসনে সকালে শান্তিপূর্ণ ভোট উৎসব হচ্ছিল। তবে কিছুক্ষণ পরই নৌকা প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে।

তিনি বলেন, দুপুরের পর থেকেই বেশ কিছু কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়া, দুপুরের পর বিভিন্ন কেন্দ্রের জাতীয় পার্টির এজেন্টদের বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

নারায়ণগঞ্জ- আসনে ফতুল্লার একটি ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য কে এম শামীম ওসমানের পক্ষে নৌকায় জাল ভোট দিতে গিয়ে আটক দুই কর্মীকে দুই বছরের জেল দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

বিকালে দেলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার সময় আটক হন ওই দুই যুবক। নির্বাচনি মামলায় ওই দুই ব্যক্তিকে একইসঙ্গে হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

(ঢাকাটাইমস/০৯জানুয়ারি/এইচএম/বিবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এপ্রিলের ২৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬০ কোটি ৭৬ লাখ ডলার
নির্ধারিত সময়ের দুই মাস আগেই সব দেনা পরিশোধ করল পেট্রোবাংলা
ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব: অর্থ উপদেষ্টা
উপদেষ্টাদের সঙ্গে পুলিশের মতবিনিময়, বিভিন্ন প্রস্তাব বাস্তবায়নের আশ্বাস
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা