তীব্র শীতে জবুথবু দেশ

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
| আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮:৫৭ | প্রকাশিত : ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮:৪৩

শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তরের জেলা পঞ্চগড় ও কুড়িগ্রামে সূর্যের দেখা মিলছে না তিনদিন যাবৎ। তীব্র ঠান্ডায় কুড়িগ্রামে কাবু শ্রমজীবী মানুষ। শীতের প্রবল আবহে কাবু সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের অসহায় মানুষ। শীতের দাপটে এক কথায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। উত্তরাঞ্চলসহ দেশজুড়েই বাড়ছে শীতের তীব্রতা। এদিকে শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে তুলে ধরা হলো—

  • ৬ জেলায় শীতের প্রকোপ
  • বিপর্যস্ত জনজীবন
  • কষ্টে দিন পার করছে খেটে খাওয়া মানুষ

কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে টানা শীতে জবুথবু অবস্থা বিরাজ করছে জনজীবনে। ঘন কুয়াশা আর হিম বাতাসে হিমশিম অবস্থা বিরাজ করছে উত্তরের এই জনপদে।

জানা গেছে, গত তিনদিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না এ জেলায়। ঠান্ডাজনিত কারণে বের হতে পারছেন না শ্রমজীবীরা। মানুষের স্বাভাবিক চলাচলও কমে গেছে। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। তিনদিন ধরে কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাসের কারণে বোরো বীজতলা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। শুক্রবার কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসন থেকে উপজেলাগুলোতে ৬০ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। চাহিদার তুলনায় শীতবস্ত্র কম হওয়ায় ভোগান্তিতে রয়েছে নিম্নআয়ের মানুষ।

উলিপুর হাসপাতালে আসা উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের হৃদয় (৪ মাস) নামে এক শিশুর মা মোছা. কুলছুম বেগম বলেন, আমার ছেলের ডায়রিয়া হয়েছে বুধবার হাসপাতালে নিয়ে এসেছি এখন একটু সুস্থ আছে।

বজরা ইউনিয়নের খামার বজরা এলাকার মিম বেগম বলেন, ঠান্ডা লাগার কারণে আমার ছেলের ডায়রিয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। চিকিৎসা চলছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত উলিপুর হাসপাতালে গত তিনদিনের চিত্রে দেখা গেছে ১৫ জন শিশু ও বয়স্ক ২ জন ঠান্ডাজনিত রোগে ভর্তি রয়েছেন বলে জানা গেছে।

পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ে শৈত্যপ্রবাহ নেই। তবে চারদিন ধরে মেঘলা আকাশ ও কুয়াশার কারণে ঠিকমত দেখা মেলেনি সূর্যের। সঙ্গে উত্তরের হিমশীতল বাতাসে বেড়েছে শীতের প্রকোপ। দেখা দিয়েছে জনদুর্ভোগ। রাতের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও দিনের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে সর্বত্র।

এদিকে মঙ্গলবার থেকে রাতে ঘনকুয়াশা আর দিনে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে থাকছে। ঠিকমতো সূর্যের দেখা না মেলায় শীতের তীব্রতা যেন বেড়েই চলেছে। শুক্রবারও দিনভর সূর্যের দেখা মিলেনি। শিরশির বাতাসের দুর্ভোগ বেড়েছে ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষের। সকালে কাজে যেতে পারছেন না দিনমজুরসহ রিকশাভ্যান চালকরা।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, এখানে চারদিন ধরে সূর্যের উত্তাপ নেই। কিন্ত বাতাস রয়েছে। বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় শীতের প্রকোপ বেড়েছে। শুক্রবার সকাল ৯ টায় সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৯ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস। বৃহষ্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি। দিনের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৬ ডিগ্রি। বুধবার দিনের তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজবাড়ী: দিনের পর দিন পদ্মা পাড়ের রাজবাড়ীতে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এই জনপদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। ফলে রাজবাড়ীর রাজারা এবার শীতে কাবু হয়ে পড়েছে।

পদ্মা নদীর হিমেল বাতাসে কাহিল হয়ে পড়েছে মানুষ। গত দুইদিন ধরে সারাদিন সূর্যের দেখা মেলেনি। কাজে যেতে না পারায় মানুষের হাতে টাকা নাই। ফলে অর্থের অভাবে খাদ্য ও শীত বস্ত্রও কিনতে পারছেন না কেউ কেউ। রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর প থেকে পাওয়া কম্বল জেলার পৌরসভা ও প্রতিটি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে বণ্টন শুরু হয়েছে।

ঘন কুয়াশা থাকায় দিনের বেলায় হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহনগুলো। খড়কুটোয় শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন অনেকে।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে হিমেল বাতাস। অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত। দুর্ভোগে পড়েছে ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষ। বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া জনসাধারণ।

পদ্মার আমবাড়ীয়া চর এলাকার ভ্যানচালক ওমেদ আলী বলেন, কয়েক দিন ধরে কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহ চলছে। সেই সঙ্গে ঠাণ্ডা বাতাসে বাইরে কাজ করতে কষ্ট হচ্ছে। চর নারায়নপুর এলাকার আমজেদ মণ্ডল নামে এক দিনমজুর বলেন, শীতে মানুষ কাঁপছে। কিন্তু তাদের সহায়তায় রাজনৈতিক নেতা আর চেয়ারম্যান—মেম্বারদের দেখা নেই।

চুয়াডাঙ্গা: হাড়কাঁপানো শীতে দিনের বেশিরভাগ সময় দেখা মিলছে না সূর্যের। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে চারপাশ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে উত্তর থেকে বয়ে আসা কনকনে ঠান্ডা বাতাস। এতে তীব্র ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে চুয়াডাঙ্গায়। মাঘের আগেই পৌষের শেষে হাড়কাঁপানো ঠান্ডার জবুথবু এ অঞ্চলের জনজীবন। তাপমাত্রার পারদ ওঠানামা করছে অস্বাভাবিকভাবে।

শুক্রবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা আবহাওয়া অফিস।

শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিমেল বাতাসে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। কয়েক দিন ধরে দেখা মিলছে না সূর্যের। মধ্য বেলায় কিছুণের জন্য রোদের দেখা মিললেও হিমেল বাতাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উত্তাপ ছড়াতে পারছে না সূর্য। এ কারণে দিনভর শীতে জবুথবু থাকতে হচ্ছে। ঠান্ডার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগের প্রকোপ। সবচেয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষরা।

এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক জামিনুর রহমান বলেন, চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থাকে। মূলত ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত না হওয়ায় বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ: শীতের প্রবল আবহে কাবু সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের অসহায় মানুষ। সারাদিন ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকছে চারপাশ। সেই সঙ্গে প্রবাহিত হচ্ছে মৃদু হিমেল বাতাস।

রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডার প্রকোপ অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। দিনে কুয়াশায় সূর্যের মুখ দেখা মিলছে না। যতই সময় বাড়ছে শীতের তীব্রতাও বাড়ছে।

সরকারি বেসরকারি অফিসে কর্মজীবীরা এলেও কাজে কর্মে চলছে স্থবিরতা। রিকশা—ভ্যান চালক, দিনমজুর, কৃষি শ্রমিকরা পথে ও মাঠে নেমে সামান্য কাজ করেই শীতে কাবু হয়ে পড়ছে। হাসপাতালে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুরা সংখ্যা। জেলার মাটিয়ান হাওর পাড়ের কৃষক রুহিন মিয়া জানান, এখন বোরো ধানের চারা রোপণের সময়। কিন্তু কুয়াশা ও বাতাসের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বোরো জমিতে চারা রোপণ করাও যাচ্ছে না। ফলে চারা রোপণ কাজেও ব্যাঘাত ঘটছে।

জীবিকার তাগিদে নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষ বের হলেও কাজ না পেয়ে অনেকে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। তাই কাজ ছেড়ে হাত গুটিয়ে একটু তাপের জন্য ছুটতে হচ্ছে আগুনের আঁচ পেতে।

রিকশাচালক আমিনুল ইসলাম জানান, শীতের তীব্রতা বেশি হওয়ায় মানুষজন বাসা থেকে বের হচ্ছে না। আর যাও পাই একবার এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে গেলে ঠান্ডায় জবুথবু অবস্থা হয়ে আগুনের তাপ লাগাতে হয়। তাই উপার্জন একবারেই কম। খুব কঠিন অবস্থা বিরাজ করছে।

হাওর বেষ্টিত তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মির্জা রিয়াদ হাসান জানান, শীতের তীব্রতা বেড়েছে, ঠান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে অনেকেই ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশি।

সৈয়দপুর (নীলফামারী): ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়ার প্রভাবে শীত বেড়েছে অনেকগুণ। হাড় কাঁপানো এ শীতে কাঁপছে সৈয়দপুরসহ উত্তরের জেলা নীলফামারী। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টির ফেঁাটার মতো ঝরছে কুয়াশা। গত পাঁচ দিনেও দেখা মেলেনি সূর্যের। দিন রাত কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে পুরো অঞ্চল। ফলে দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে চালতে হচ্ছে বিভিন্ন যানবাহনকে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরে বিমান ওঠা নামায়ও বিঘ্ন ঘটছে।

সকাল ৯টায় নীলফামারীর সৈয়দপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন। শীতের এ প্রভাব আরও কয়েক দিন থাকবে বলে জানান তিনি।

এদিকে রাত ও দিনে তাপমাত্রা প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় দিনের চেয়ে রাতে অনেক বেশি ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। মানুষ আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। প্রচণ্ড শীতে কাজে বের হতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ছেন শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। ঘন কুয়াশা আর ঠাণ্ডায় নষ্ট হচ্ছে ধানের বীজতলা ও আলুতে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাতভর পড়া কুয়াশায় ভিজে আছে পিচঢালা পথ। তীব্র শীতকে উপো করেই কাজের সন্ধানে ছুটছে কর্মজীবী মানুষ। তবে শহরে অন্যান্য সময়ের চেয়ে লোক সমাগম থাকছে কম।

আরমান আলী নামে আরেক ইজিবাইক চালক বলেন, ‘চার দিন থাকি ঠান্ডা খুব বেশি হইছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কুয়াশাত আস্তা দেখা যায়ছে না। লাইট জ্বালে জানটা হাতোত নিয়া গাড়ি চালাইছি।’

এদিকে ঠান্ডা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের হারও বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বেড়েছে। চিকিৎসকরা সকলকে সাবধানতার সঙ্গে চলাফেরা করাসহ শিশু ও বয়স্কদের ঠান্ডা না লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/১২জানুয়ারি/ইএইচ/এসআইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :