কিশোরগঞ্জে পৌষের শেষে জেঁকে বসেছে হাড় কাঁপানো শীত

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১৪:৩৬ | প্রকাশিত : ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১৪:১৪

কিশোরগঞ্জে পৌষের শেষে জেঁকে বসেছে হাড় কাঁপানো শীত। টানা কয়েকদিন ধরে এ জেলার ওপর বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে গ্রাম, শহর-হাওরাঞ্চল ও মাঠ প্রান্তর। গত ৩ দিন ধরে মেঘাচ্ছন্ন আকাশে উদয়-অস্তে দেখা মিলছে না সূর্যের। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছেন বেকায়দায়।

জানা গেছে, উত্তর থেকে ধেয়ে আসছে শিরশিরে হিমেল বাতাস। এমন বৈরী আবহাওয়ায় বেড়েছে প্রচণ্ড শীতের প্রকোপ। শীতের এ সাঁড়াশি আক্রমণে জীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। হাড় কাঁপানো কনকনে ঠান্ডায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। ঠান্ডায় কাজে যোগ দিতে না পারায় তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। মোটা শীতবস্ত্রের অভাবে ছিন্নমূল, অসহায়, নিম্নআয়ের মানুষসহ বিভিন্ন মাদরাসা-এতিমখানায় অধ্যয়নরত দরিদ্র-এতিম শিক্ষার্থীরা নিদারুণ কষ্টে আছেন। তারা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে শীতের এই অসহ্য যন্ত্রণা। এ যন্ত্রণা থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে তারা সকাল-সন্ধ্যা ও নিশিরাত পর্যন্ত খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।

অপরদিকে শীতের এমন বিরূপ আবহাওয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, পাতলা পায়খানা, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ-বালাই। এসব রোগ-বালাইয়ে শিশু-বৃদ্ধরাই আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। হাসপাতালসহ নানা চিকিৎসাকেন্দ্রে তারা সেবা নিচ্ছেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, ঠান্ডাজনিত কারণে নানা বয়সি রোগীর ভিড় বাড়লেও যথাযথ চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুগুলো শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে।

নিম্নআয়ের মানুষ ছুটছেন সস্তা দরের ফুটপাতের দোকানে। সাত সকালে রাস্তায় বিভিন্ন যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীর গতিতে চলাচল করছে। এ সময় মিশু চালক হারিছ মিয়া বলেন, শীত, কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাসে হাত-পা বরফ হয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের না হওয়ায় যাত্রীর সংখ্যাও কমে গেছে। এতে সংসার চালনোা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

মহিনন্দ গোয়ালাপাড়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ তুতা মিয়া ও মনোয়ারা বলেন, এমন শীত কখনো দেখি নাই। তিনদিন হচ্ছে সূর্যের দেখা মেলেনি। শীতে পুরো শরীর কাঁপছে। তাই আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছি।

নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল কালাম বলেন, তীব্র শীতের কারণে ভাস্করখিলা বিলে বোরো আবাদের জন্য জমিনে যেতে পারছি না। এভাবে শীত জেঁকে বসলে মানুষের শীতজনিত অসুস্থতা বেড়ে যাবে কিশোরগঞ্জে শুক্রবার ও বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত উপজেলা নিকলীতে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

নিকলী প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহেদুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘আজ সকাল ৯টায় এখানে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.৬ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবারও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০.৩ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয় জেলার নিকলীতে। ২০১৪ সাল থেকে নিকলীতে পর্যবেক্ষণাগারের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চলতি বছরের দুদিন ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় এখানে। এর আগে কখনো এমন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়নি।

আবহাওয়া অধিদপ্তর ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, কিশোরগঞ্জের নিকলী ছাড়াও চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

এদিকে কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবদুস সাত্তার বলেন, তীব্র শীতে কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে চলমান বোরো ধানের আবাদে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। শীতের তীব্রতা স্থায়ী হলে বোরো বীজতলা নষ্ট হওয়াসহ বোরো আবাদে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

এদিকে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বিপাকে পড়েছেন ‘দিন আনি দিন খাই’ শ্রেণির কৃষি শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশাচালকসহ নিম্নআয়ের মানুষ। তীব্র শীতে তাদের রুটি-রোজগার প্রায় বন্ধ। এতে করে তাদের কপালে পড়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। এখনো কোথাও শীতবস্ত্র বিতরণ করতে দেখা যায়নি।

(ঢাকাটাইমস/১৩জানুয়ারি/প্রতিনিধি/জেডএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :