সাকরাইন আজ, নেই সেই চিরচেনা উৎসব

দেশের প্রাচীন উৎসবগুলোর মধ্যে পুরান ঢাকার সাকরাইন অন্যতম। উৎসবটি বহু বছর ধরে পুরান ঢাকায় বসবাসকারী সবাই পালন করছে। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসবকে ‘পৌষ সংক্রান্তি’ বা ‘ঘুড়ি উৎসব’ও বলা হয়। বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে ছোট-বড় সবাই মেতে ওঠে এ উৎসবে।
সাকরাইনের অন্যতম প্রধান অংশ ঘুড়ি উৎসব। তবে, এই উৎসব ঠিক আগের মতো নেই। এখন অনেকটাই আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে।
রবিবার পুরান ঢাকার সবচেয়ে জনপ্রিয় উৎসব সাকরাইন অনুষ্ঠিত হবে। সকাল থেকেই শুরু হবে পুরান ঢাকার বিভিন্ন বাসার ছাদে এই উৎসব। উৎসবকে কেন্দ্র করে দিনভর পুরান ঢাকার আকাশ থাকবে নানা রঙ বেরঙের ঘুড়ির দখলে।
পুরান ঢাকার বাসার ছাদে সাকরাইন উৎসব আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দিনের শুরু থেকেই তারা শুরু করেন উৎসব। ঘুড়ি উড়ানো, আতশবাজি ফোটানো, মশালমারা ও ডিজেপার্টিসহ নানা আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। তবে তারা বলেছেন, সেই আগের সাকরাইন এখন আর হয় না। আগে এই উৎসব শুরু হতো তিন-চার দিন আগ থেকেই। ঘুড়ি বানানো হতো হাতে, স্পিকারের পরির্বতে মাইক ব্যবহার করা হতো।
শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
পুরান ঢাকার সাকরাইন উৎসবরে আয়োজক নিরব হোসেন মুক্তি ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমাদের সকাল থেকেই শুরু হয় উৎসব। কিন্তু আনন্দটা জমে ওঠে সন্ধ্যায়। সাকরাইন উৎসবের মূল উৎসব ঘুড়ি উড়ানো। এছাড়া সন্ধ্যায় মশালমারা, আতশবাজি ফোটানো, নানা রঙের লাইটিং করা ও নানান পদের পিঠাও বানানো হয়।
তিনি বলেন, দুইদিন আগ থেকে আমাদের প্রস্তুতি শুরু হয়। ঘুড়ির সুতায় মানজা দিই। ঘুড়ি আনা হয়। মাগরিবের নামাজের পর আমাদের মশালমারা ও আতশবাজি শুরু হয়। বিকাল ৪টা থেকে ডিজে গানপার্টি চলতে থাকে। পুরান ঢাকার প্রতিটা বাসার ছাদে এই সাকরাইন উৎসব হয়।
সেই আগের সাকরাইন এখন আর হয় না জানিয়ে মুকিত বলিন, আগে আমার বাপ-চাচারা ৩ থেকে ৪ দিন আগ থেকে সাকরাইন উৎসব শুরু করত। তারা নিজেদের বানানো ঘুড়ি উড়াতো। আগেরদিন রাত থেেক পিঠা বানানো শুরু হতো। আগে ছাদের উপর মাইক লাগিয়ে সাকরাইনের দিন সকাল ৭টা বাজতেই মাইকে একজন আরেকজনকে ডেকে উঠাতো। আর এখন তো আর মাইক নেই, স্পিকারের যুগ।
তিনি বলেন, এখন তো যুগ ডিজিটাল হয়েছে। সবকিছুতে ডিজিটালের ছোঁয়া। এখন সব রেডিমেট করা হয়। আগে ঘুড়িতে পুরো আকাশ ছেঁয়ে যেত এখন ঘুড়ি কম উড়ানো হয়।
জানা যায়, পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার, কলতাবাজার, ধোলাই খাল, বাংলাবাজার, শাঁখারীবাজার, রায়সাহেববাজার, নবাবপুর, বংশাল, গেণ্ডারয়িা, ধূপখোলা, দয়াগঞ্জ, মুরগীটোলা, নারিন্দা, সূত্রাপুর, কাগজিটোলা, নাজিরাবাজার, তাঁতীবাজার, লালবাগ এবং হাজারীবাগ এলাকার মানুষ এ উৎসবে দিনব্যাপী ঘুড়ি উড়ান। আতবাজি ফোটানো, নানা ধরনের খাবার ও রাতে ডিজে পার্টিরও আয়োজন থাকে।
(ঢাকাটাইমস/১৪জানুয়ারি/টিআই/বিবি/এসআইএস)

মন্তব্য করুন