শীতে হাসি ফোটে ফেনীর গাছিদের, মাসে আয় অর্ধলাখ টাকা 

এম শরীফ ভূঞা, ফেনী
| আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:০৪ | প্রকাশিত : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১৩:৩৮

ফেনীতে তীব্র শীত উপেক্ষা করে খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। তারা খেজুর ও রস বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। স্থানীয় অনলাইন উদ্যোক্তারাও উদ্যোগী হয়ে গাছিদের কাছ থেকে এ রস সংগ্রহ করে ক্রেতাদের বাড়ি-বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন।

মূলত হেমন্তের শেষ থেকে বসন্তের শুরু পর্যন্ত গাছিরা খেজুরের গাছে-গাছে রস সংগ্রহ করেন। মৌসুমের এ চারমাসে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় হয় তাদের।

উপজেলা উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, শীতের শুরুতেই কৃষি বিভাগ গাছিদের রস সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন পরামার্শ দিয়ে যাচ্ছে। খেজুর গাছ ফসলের কোনো ক্ষতি করে না। এই গাছের জন্য বাড়তি কোনো খরচ করতে হয় না। যা সকলে এই গাছ যে কোথাও বাড়ির পাশে লাগাতে পারে।

গাছিরা জানান, শীত মৌসুমের শুরুতেই খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করা হয়। বছরের পাঁচমাস রস সংগ্রহ করা যায়। এ রস থেকে বিভিন্ন রকমের পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করা হয়।

অনলাইন উদ্যেক্তা তাকিয়া ফুড প্রোডাক্টস এর পরিচালক নজরুল ইসলাম সোহাগ জানান, শীতের পিঠা ও পায়েসের জন্য খেজুরের রস ও গুড়ের বাড়তি চাহিদা রয়েছে। তবে খেজুর গাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। তাই একসময় হয়তো খেজুর রসের ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বেশি বেশি খেজুর গাছ রোপণ করা প্রয়োজন।

শরীরে প্যাঁচানো দড়ি। কোমরের পেছনে বাঁশের তৈরি ঝুড়ি। ভেতরে বাটালি, হাঁসুয়া ও কাস্তে। এসব নিয়েই তরতর করে খেজুরগাছ বেয়ে উঠেন গাছি নুর ইসলাম (৫০)। শীত এলেই ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার উত্তর চর সাহাভিকারী এলাকায় খেজুরগাছ প্রস্তুত করতে দেখা যায় নুর ইসলামকে। তিন দশক ধরে গাছ প্রস্তুত ও রস সংগ্রহের কাজ করছেন। শীত বাড়তে থাকায় গত তিন সপ্তাহ ধরে রস সংগ্রহের জন্য গাছির কাজ শুরু করেছেন। পুরো শীত মৌসুমজুড়ে চলবে রস সংগ্রহ ও গাছ কাটার কাজ।

গাছি নুর ইসলাম বলেন, খেজুরগাছ থেকে পুরো দমে রস সংগ্রহ শুরু হলে কাজে একজন শ্রমিক নিই। দুজন মিলে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত গাছ কেটে হাঁড়ি ঝুলিয়ে দিই। সারারাত রস পড়তে থাকে। ভোর থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত রসের হাঁড়ি নামাই। কিছু রস বিক্রি হয়। বাকি রস দিয়ে গুড় তৈরি করে বিক্রি করি।

বাপ-দাদার হাত ধরেই এই গাছি পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন নুর ইসলাম। ফেনীর উত্তর চর সাহাভিকারী এলাকার বিভিন্ন সড়ক ও বাড়ির আঙিনায় অন্তত শতাধিক খেজুরগাছ আছে। রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত করতে গাছপ্রতি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা নেন তিনি। আবার নিজেও গ্রামে-গঞ্জের ৭০ থেকে ৮০টি খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। সেই রস থেকে গুড় তৈরি করে বিক্রি করেন। আবার রসও বিক্রি হয়। প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত উপজেলার কাজীরহাট বাজার এলাকায় রস বিক্রি করেন তিনি।

ফেনী সিভিল সার্জন ডা. শিহাব উদ্দিন বলেন, ঐতিহ্যের ধারক এই খেজুরের রসের মাধ্যমে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়ছে নিপা ভাইরাস। তবে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ফোটানো হলে নিপা ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে না। তাই নিপা ভাইরাস থেকে রক্ষায় খেজুর রস ফুটিয়ে খাওয়া উচিত।

(ঢাকাটাইমস/১৪জানুয়ারি/প্রতিনিধি/জেডএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :