মাদকের টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বে বাকপ্রতিবন্ধী লেগুনা চালককে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:০৫

রাজধানীর সবুজবাগ থানার বসাবো এলাকায় বাকপ্রতিবন্ধী লেগুনা চালক নাদিম হোসেনকে হত্যার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- হৃদয় গাজী, মো. সাকিব, কাঞ্চন খাঁ, মো. ইয়াছিন ও আতাউর রহমান রনি।

রাজধানীর বাসাবো, যাত্রাবাড়ী ও মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি জব্দ করা হয়।

পুলিশ বলছে, তারা সবাই মাদকাসক্ত ও মাদকের খুচরা কারবারি। মাদক বিক্রির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে নাদিমকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন সহযোগীরা।

রবিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

হারুন অর রশীদ বলেন, ‘চলতি মাসের ১০ তারিখ বাকপ্রতিবন্ধী লেগুনা চালক নাদিমকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। ঘটনার দিন সকালে সবুজবাগ থানা এলাকার ওহাব কলোনির বোনের বাসা থেকে বের হয়ে দক্ষিণ বাসাবো বালুর মাঠের পাশের একটি নির্মাণাধীন ভবনে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দিতে যায়। এই ভবনে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদকাসক্তদের আড্ডা জমতো। নাদিম একই এলাকার চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা।’

হত্যার আগে টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়ে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, “নির্মাণাধীন ভবনে নিয়মিত মাদকের আসর বসতো। ঘটনা দিন সকালে নাদিমের সঙ্গে হৃদয় গাজী, সাকিব, পাঞ্চ পিয়াস, কাঞ্চন খাঁ, ইয়াসিন ও রনিসহ অনেকে আড্ডা দিচ্ছিল। তারা সবাই চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। সাকিবের সঙ্গে নাদিমের মাদক ব্যবসা নিয়ে বিরোধ ছিল। নাদিমের মামা মাদক ব্যবসায়ী ঠোঙ্গা সুমন ও তার মামী বানু মিলে সাকিবকে মাদকসহ পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। এই পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে সাকিব তার বন্ধু হৃদয় গাজীকে দিয়ে ঠোঙ্গা সুমনকে কুপিয়ে আহত করে এবং এর জন্য হৃদয় গাজীকে জেলও খাটতে হয়।’

এছাড়া এলাকায় মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নাদিমের সঙ্গে সাকিবসহ অন্য মাদক ব্যবসায়ীদেরও বিরোধ চলে আসছিল বলে জানান হারুন অর রশিদ। বলেন, ‘সাকিবসহ অন্য মাদক কারবারিরা মিলে নাদিমের মাদক ব্যবসা থেকে উপার্জিত টাকার ভাগ দিতে বলে। নাদিম তার কাছে টাকা নেই বললে বিকাশ থেকে টাকা তোলার জন্য নাদিমের মোবাইল ফোন দিতে বলে। নাদিমের কাছে বিকাশ অ্যাকাউন্ট থাকা মোবাইল ফোন না পেয়ে তারা নির্মাণাধীন ভবনে নাদিমকে আটকে ফেলে। এরপর পাঞ্চ পিয়াস ও হৃদয় গাজী নাদিমের বড় বোনের বাসায় গিয়ে বাটন ফোনটির খোঁজ করে। সেখানে বাটন ফোনটি না পেয়ে তারা পুনরায় নির্মাণাধীন ভবনে ফিরে আসে।’

হৃদয় গাজী নাদিমকে টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিলে তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এক পর্যায়ে হৃদয় গাজীর কাছে থাকা ছুরি দিয়ে নাদিমের ডান উরুতে আঘাত করেন। পরে পাঞ্চ পিয়াস ও কাঞ্চন মিলে নাদিমকে সিএনজিতে করে ওহাব কলোনি এলাকার নূরে মোহাম্মাদীয়া আরাবিয়া ফাজিল মাদ্রাসার সামনে রাস্তায় ফেলে চলে যান। হৃদয় গাজী ও ইয়াছিন মুগদা স্টেডিয়ামের পাশের একটি পরিত্যক্ত স্থানে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি লুকিয়ে রেখে পালিয়ে যান।

জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা ডিবিকে জানিয়েছেন, সাকিব, হৃদয় গাজী ও ইয়াছিন ঘটনার পর সকালেই কুমিল্লা গিয়ে ৩ হাজার পিস ইয়াবা কিনে রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় আসেন বিক্রি করার জন্য। ডিবি পুলিশ মুগদা এলাকায় একটি বাড়ির ছাদের ওপর একটি পরিত্যক্ত টিনের ঘরের সন্ধান পায় যেখানে তারা প্রায়ই রাতে মাদক সেবন করেন। পরিত্যক্ত টিনের ঘরটিতে যাওয়ার স্বাভাবিক কোনো রাস্তা নেই। পাশের ভবনের দেয়াল টপকে সেখানে যেতে হয়। যা একজন স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।

গ্রেপ্তাররা আরও জানিয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই গাঁজা, ইয়াবা ও হেরোইনসহ একাধিক মাদকে আসক্ত। মূলত এই মাদকের টাকা যোগাড় করতেই তারা মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েন। প্রত্যেক আসামির বিরুদ্ধে এক ডজনের বেশি মামলা রয়েছে। নাদিম হত্যা মামলার অন্যতম আসামি সাকিব ঘটনার চারদিন আগে জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন।

নির্মাণাধীন ভবনে মাদকের কারবার ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আড্ডার বিষয়ে বাড়ির মালিকদের অবহেলা রয়েছে উল্লেখ করে ডিবি প্রধান বলেন, ‘যেসব নির্মাণাধীন ভবন এমন মাদকের আসর ও কেনাবেচা হয় সেসব বাড়ির মালিদের অবহেলা রয়েছে। কারণ প্রতিটি ভবনেই নিরাপত্তা কর্মী থাকেন, তারা পুলিশকে জানালে আমরা ব্যবস্থা নিতাম। আর নিরাপত্তা কর্মীরা না পারলে বাড়ির মালিকরা অন্তত জানাতে পারেন। কিন্তু তারা এটা করেন না। এমন ঘটনায় তাদের দায় রয়েছে। না হলে আমরা বুঝব মাদক কারবারিদের কাছে ভবন ভাড়া দিয়ে তারা লাভবান হচ্ছেন। তারা যদি ব্যবস্থা না নেন তাহলে আমরা বাড়ির মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

(ঢাকাটাইমস/১৪জানুয়ারি/এসএস/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অপরাধ ও দুর্নীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :