চুয়াডাঙ্গায় জমে উঠেছে ৩শ’ বছরের ঐতিহ্যের খেজুর গুড়ের হাট

চুয়াডাঙ্গা শহর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ বাজার। বাজারটি সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার বসে সরোজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে। প্রায় ৩শ’ বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড়ের এ হাটের নামডাক দেশজুড়ে।
শীতের সময় যেখানে প্রতিহাটে বিক্রি হয় কোটি টাকার খেজুর গুড়। প্রকারভেদে এখানে পাটালি ও গুড় বিক্রি হয়ে থাকে। খেজুর গুড়ের জন্য চুয়াডাঙ্গা জেলা বিখ্যাত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ী, ক্রেতারা আসতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যেই জমে উঠতে শুরু করেছে ঐতিহ্যবাহী এ খেজুর গুড়ের হাট।
তবে, ইটভাটার আগ্রাসী আগুনে পুড়ে দিন দিন খেজুর গাছ কমতে শুরু করেছে। সেকারণে খেজুর গুড়ও কমতে শুরু করায় এবারে প্রকারভেদে দাম একটু বেশি।
স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর শীত মৌসুমে সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেজুরে গুড়, পাটালি কেনাবেচা হয় এ হাটে। বিভিন্ন মোকাম থেকে আসা ব্যাপারী ও ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে জমজমাট হয়ে ওঠে এ হাট।
হাটের সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছরের তুলনায় প্রতি কেজিতে গুড়ের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। প্রকারভেদে প্রতি কেজি গুড় বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২১০ টাকা এবং এক ভাঁড় গুড় ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া পাটালি গুড় বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ কেজি দরে। যা গত বছরের তুলনায় ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি। প্রতি সপ্তাহে এ হাটে প্রায় ১ কোটি টাকার গুড় বেচাকেনা হয়। মাটির হাঁড়ি বা ভাঁড়ের আকার ও ওজনভেদে দাম ওঠানামা করে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২৩ সালে জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৭২ হাজার। ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২৩-২৪ অর্থবছরে জেলায় ১০০ টন গুড় বেশি উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। গত বছর গুড়ের হাটে ৪৮ কোটি টাকা কেনাবেচা হয়েছিল। চলতি বছর গুড়ের হাট থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকার গুড় কেনাবেচা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরোজগঞ্জ হাট ইজারাদার আব্দুল মালেক বলেন, ‘৩০০ বছরের এই ঐতিহ্যবাহী গুড়ের হাট পুরোপুরিভাবে জমে উঠেছে। তবে ওজন ও প্রকারভেদে ভাঁড়ে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে দাম বেড়েছে। পাটালিতেও একই দাম বৃদ্ধি হয়েছে। প্রতি সপ্তাহ প্রায় ১ কোটি টাকার মতো কেনাবেচা হচ্ছে। আশা করা যায়, গতবারের তুলনায় এবার কেনাবেচা বেশি হবে।’
গুড় ব্যবসায়ী আলামিন হোসেন বলেন, ‘এ বছর গুড়ের দাম বেড়েছে। ১২ থেকে ১৪ কেজি ওজনের এক জোড়া গুড়ের ভাঁড় ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাটালি ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। হাজারও ক্রেতা আসছেন গুড় কিনতে। এই হাটের গুড়ের বিশেষ চাহিদা রয়েছে। গুড় ভেজালমুক্ত হওয়ায় কদর বেশি। চিনি বা কোনো রাসায়নিক উপাদান নেই।’
সিলেট থেকে গুড় কিনতে আসা ভবতোষ কুমার বলেন, ‘গতবারের তুলনায় গুড়ের দাম বেশি। তবে দাম বেশি হলেও ভেজালমুক্ত গুড় কেনার জন্যই এই হাটে আসা।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী এ হাটে গুড় কেনাবেচা শুরু হয়েছে। গতবারের তুলনায় জেলায় গুড় উৎপাদন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এখানে স্থানীয় কৃষকরা পরম যত্নে চিনিমুক্ত গুড়-পাটালি উৎপাদন করে হাটে বিক্রি করে থাকেন। এ কারণে গুড়ের চাহিদা বেশি। আমরা অসাধু ব্যবসায়ীদের দিকেও নজর রাখছি। কেউ ভেজাল বা চিনিযুক্ত গুড়-পাটালি বিক্রি করলে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
(ঢাকাটাইমস/১৫জানুয়ারি/প্রতিনিধি/জেডএম)

মন্তব্য করুন