একদফা থেকে সরে যাচ্ছে বিএনপি!

জাহিদ বিপ্লব, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:৩০| আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৩৩
অ- অ+

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো দ্বাদশ নির্বাচনের ভোটও বর্জন করেছে বিএনপি। যেকোনো মূল্যে এবারের নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছিল দলটি। সেই লক্ষ্যে আন্দোলন চালিয়ে শেষ পর্যন্ত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করতে না পেরে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে।

এদিকে সরকার পতনের একদফা দাবিতে বিএনপির আন্দোলনও এখন আর দৃশ্যমান নেই। নেই কোনো কর্মসূচি। একদফার আন্দোলন বা দাবি কার্যত আর নেই বলে মনে করছেন দলটির কর্মীরা। যদিও বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন, আমরা একদফা দাবিতে এখনও আছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

দলটির একজন ভাইস চেয়ারম্যান ঢাকা টাইমসকে বলেন, যে হাঁকডাক নিয়ে আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল তা বিগত ছয় মাসেও প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি দলটি। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, যখন নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এসেছে তখন কঠোর কর্মসূচি না দিয়ে লিফলেট বিতরণের মতো দুর্বল কর্মসূচি আন্দোলনে হতাশা সৃষ্টি করেছে।

২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর দলটির নেতাকর্মীরা মনে করেছিলেন সরকার পতন আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে। কিন্তু তা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে ব্যর্থ হয় দলটি। তফসিল জারির পর দেশে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেও প্রকাশ্যে রাজপথে নামতে পারেনি বিএনপির নেতাকর্মীরা। তফসিল জারির পর এদেশে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলেও হুমকি দেন দলটির শীর্ষ নেতারা। নির্বাচন পরবর্তীতে বলা হয়, নির্বাচন হলেও সরকার টিকতে পারবে না। একদফার দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখার কথা বললেও রাজপথে নেই কোনো কর্মসূচি।

সম্প্রতি বিএনপির সমমনা জোটগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসে দলটির শীর্ষনেতারা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বৈঠকে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন। সমমনা জোট নেতারা চলমান আন্দোলন অব্যাহত রাখার বিষয়ে মতামত দিলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি।

পশ্চিমা দেশগুলো বিএনপির দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে বাংলাদেশে নির্বাচন বন্ধ করে দেবে- এমন ভাবনাও অবশেষে নস্যাৎ হয়ে গেছে। বিএনপির ধারণা ছিল নির্বাচন হবে না, নির্বাচন হলেও সরকার গঠন করা সম্ভব হবে না। আর সরকার গঠন করা হলেও নতুন সরকার দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। বিদেশি শক্তি বাংলাদেশকে সেই সুযোগ দেবে না। বাস্তবে তার কোনোটার প্রতিফলন দেখা যায়নি।

দলটির নেতাকর্মীরা মনে করেন, বিএনপির বিদেশ নির্ভরতাই দলটিকে ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে মূল বাধার সৃষ্টি করেছে। যেভাবে পশ্চিমাদের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল তা না করে শুধু রাজপথকেই প্রাধান্য দিলে হয়ত কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যেত।

বিএনপির কয়েকজন মধ্যম সারির নেতার সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে আছি। সরকারকে বিদায় করার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আন্দোলনে কাঙ্ক্ষিত সফলতা না আসায় হতাশ না হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমাদের সবার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। ঘরে থাকতে পারি না। অধিকাংশের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে সরকার আবারও ক্ষমতায় এসেছে। কাজেই হতাশ হওয়া ছাড়া পথ নেই। তবে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে দলে বড় ধরনের সংকটের শঙ্কা রয়েছে।

তারা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এসেছে সেটা বড় কথা নয়, যতদিন এই সরকারের বিদায় না হবে ততদিন আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম চলবে। সফল হয়েই আমরা ঘরে ফিরবো।

নির্বাচনের পর বিএনপির এমন ধীরগতির আন্দোলন দেখে দলটির অনেক নেতাকর্মীই হতাশা ব্যক্ত করেছেন। কেউ কেউ বলছেন, এতো সহজে সরকার পার পেয়ে যাবে চিন্তাও করিনি। সার্বিক প্রেক্ষাপট দেখে মনে হচ্ছে এই সরকারকে বিদায় করা কঠিন হবে। তবে জনগণ ভোট বর্জন করেছে এটাই বিএনপির সফলতা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা বলেন, রাজনীতিতে সফলতা ব্যর্থতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। জনগণকে উপেক্ষা করে যারা জোর করে ক্ষমতায় থাকে তাদের পতন অনিবার্য। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে দলের অনেকেই হতাশ। কারণ, দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা। অনেকে ঘর ছাড়া। এমন পরিস্থিতি অনেকে নিঃস্ব হয়ে গেছে। অবস্থায় আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় আসায় অনেকে হতাশ।

বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা মনে করছেন, সরকারের নানামুখী নিপীড়নের কারণে একদফার কর্মসূচিতে কিছুটা শিথিলতা এসেছে। তবে এখনো সময় পার হয়ে যায়নি। সরকারের বিদায় করেই আমরা ঘরে ফিরবো।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান বিষয়ে ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমরা একদফা থেকে সরে এসেছি অভিযোগটি সত্য নয়। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন অব্যাহত আছে। আমরা সমমনা জোটগুলোর সঙ্গে আলোচনা পর্যালোচনা করছি। দ্রু সময়ের মধ্যে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকা টাইমসকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ জাতীয় নেতাদের মুক্তি, ডামি নির্বাচন বাতিল এবং সরকার পতনের একদফা দাবি অব্যাহত আছে। আমরা এখনো রাজপথে আছি। দাবি আদায় করেই আমরা ঘরে ফিরবো।

(ঢাকাটাইমস/১৬জানুয়ারি/জেবি/বিবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
কসবায় ৭০ লাখ টাকার ভারতীয় চশমা জব্দ
লিটারে ১ টাকা কমল সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম
নারী সংস্কার কমিশন মানি না, বাধ্য করলে আন্দোলন: জামায়াত আমির
এবার চিন্ময়ের জামিন স্থগিতের আদেশ প্রত্যাহার, শুনানি রবিবার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা