দিনাজপুরে গরম কাপড়ের ক্রেতাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ‘লন্ড্রি বাজার’ 

শাহ আলম শাহী (নিজস্ব প্রতিবেদক) দিনাজপুর
 | প্রকাশিত : ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০৭:৪৩

‘ছিঁড়া-ফাটা হোউক, এনা মোটা দেখি দেও ভাই। পিন্ধার পর যেনো জাড় পালায়। ঠান্ডায় কাঁপেছে, বাড়ির অবলা প্রাণি-গরু-ছাগল্লা। অসুখ ধরি গেইছে। দুদিন থাকি পাতলা পায়খানা করেছে তিনটা ছাগল। ওমাক গরম কাপড়া পরাবা হবি। ওইল্লার তন্ন্যেই কাপড়া নিবা আইছো। হামার তন্ন্যে নাহায়। একনা বাছি-বাছি দাও ভাই। ছিঁড়া-ফাটা হোউক, মোটা হইলেই হবি।’

দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানস্থ লন্ড্রি বাজারখ্যাত হকার্স মার্কেটে পুরোনো কাপড় নিতে এসে বিড়বিড় করে বিক্রেতাকে এসব কথা বলছিলেন ষাটোর্ধ আজাহার আলী। তিনি বিরল উপজেলার পলাশবাড়ী এলাকা থেকে এসেছেন। হাকডাকের পর স্তুপ থেকে ৭টি মোটা কাপড় বাছাই করেছেন। প্রতি পিস ৩০ টাকা দরে দোকানদারকে দিয়েছেন ২০০ টাকা। ৭ পিসের মূল্য ২১০ টাকা হলেও ২০০ টাকা দিয়ে তিনি দোকানদারকে ১০ টাকা দিতে চাইলেন না।

শুধু আজাহার আলী নয়, অনেকেই এই হকার্স মার্কেটে এসে স্তুপ থেকে কাপড় বাছাই করছেন। কিনছেন পছন্দের কোনো গরম কাপড়। নিম্নআয়ের মানুষের একমাত্র ভরসা এই হকার্স মার্কেটে প্রতি পিস গরম কাপড় ২০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকায়ও বিক্রি করছেন দোকানিরা।

বড় ময়দানস্থ লন্ড্রি বাজার খ্যাত হকার মার্কেট থেকে শুরু করে বড় বড় শপিংমল এবং ফুটপাতের দোকানসহ সব জায়গাতেই ক্রেতার ভিড় বেড়েছে। এসব গরম কাপড় বিক্রিও হচ্ছে হরদম। তবে চাহিদার তুলনায় এসব কাপড়ের দামও এখানে বেড়েছে। সাধ আর সাধ্যের সমন্বয় করতে বেশিরভাগ ক্রেতাই পুরাতন কাপড়ের হকার মার্কেটেই বেশি ঝুঁকছেন। কিনছেন পছন্দের শীতবস্ত্র। বিক্রি বেশি হওয়ায় খুশি দোকানিরাও।

এ দিকে তীব্র শীতে কাঁপছে দিনাজপুর। জেলায় আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৪ রেকর্ড করা হয়েছে। তাপমাত্রা বাড়লেও কমেনি শীতের দাপট। তীব্র শীত অনুভূত হওয়ায় অনেকে অফিস-আদালতে কাজ-কর্ম সেরে ভিড় করছেন এই হকার্স মার্কেটে।

‘লন্ড্রি বাজার’খ্যাত এই গরম কাপড়ের মার্কেটটি একসময় বসতো দিনাজপুর আদালত পাড়ায়। তাই অনেকে বলতো কাচারি বাজার। সাধারণ নিম্নআয়ের মানুষের আস্থার বাজার এটি। পরে দিনাজপুর ঐতিহাসিক বড় ময়দানে স্থানান্তর হয়। এখনো অনেকে এই বাজারটিকে ‘কাচারি বাজার’ নামেই চেনেন।

চিরিরবন্দরের আন্ধারমুহা এলাকা থেকে কাপড় কিনতে আসা রফিকুল ইসলাম জানালেন, ভাই কাচারিত একটু কাজ ছিলো। শেষ করি চলি আনু কাপড়ের বাজারত। যে ঠান্ডা পইছে। মোর মা আর দুইটা ছোইলের জন্যে স্যুয়েটার কিনিম। দেখি পছন্দ করেছো। মেলায় দাম চাহেছে।

বীরগঞ্জ উপজেলার সুজালপুর থেকে আসা আকলিম খাতুন জানালেন, তিনজন একসঙ্গে আইছি, গরম কাপড় কিনিবার বাবত। আত্মীয়ের বাড়িত বেড়াবা আইছনো। যাবার বেলায় এন্না ঘুরি যাছি। যদি ভালায় ভালায় কিছু পাওয়া যায়। দেখিনো, দুটা কিনিওছি। আরও দেখেছি। এবার মেল্লায় দাম। তারপরও কম দামেরলা বাছি বাছি নেছি।

দিনাজপুর হকার মার্কেট সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানালেন, এবার গাইডের দাম খুবই বেশি। তারপরও বেশি টাকায় গাইড কিনে পোশাচ্ছে না। অনেক ছিড়া-ফাটা বের হচ্ছে। যা হাক-দিয়ে ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। মানুষ কিনে নিয়ে যাচ্ছে কেউ নিজে অথার পরিবারের সদস্যদের পড়ানোর জন্য নিচ্ছে আবার কেউ নিচ্ছে গরু-ছাগল, কুকুর, বিড়ালকে পড়ানোর জন্য।

শুধু হকাস মার্কেট নয়, রেল ঘুমটি থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সড়ক পর্যন্ত শীতের গরম পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে ওইসব ফুটপাতের দোকানগুলোতেও।

ফুটপাতের ক্রেতা আফাজ উদ্দিন বলেন, ‘মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তদের ক্রয়সীমায় মোটামুটি সবরকম পোশাকেই ফুটপাতে পাওয়া যাচ্ছে। শপিংমলগুলোতে কেনাকাটার চেয়ে ফুটপাতে কেনাকাটা ভালো এবং সাশ্রয়ী।’

দোকানি মনোয়ার হোসেন বলেন, বিক্রি শুরু হয়েছে কম্বলের, তাই প্রতিবারের মতো আমি এবারও কম্বল তুললাম দোকানে। বিক্রি ভালো হচ্ছে। মানভেদে বিভিন্ন কম্বল ১৫০ থেকে শুরু করে ৫০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

জেলার বিরল উপজেলা থেকে ছেলের জন্য শীতের কাপড় কিনতে আসা শাহজাদা বলেন, এবছর বেশ ঠান্ডা। নিজের জন্য কোনমতে চলে গেলেও ছেলের জন্য একটি নতুন জ্যাকেট লাগবে। গার্মেন্টস এর দোকানগুলোতে যে দাম তাতে আমাদের মতো গরীব মানুষের পক্ষে কেনা সম্ভব নয়। তাই এখানে এসেছি।

শহরের মালদহপট্টি থেকে শীতের কাপড় কিনতে আসা সবিতা বলেন, স্বামী সামান্য দিনমজুরের কাজ করে। যা আয় হয় তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালানোই মুশকিল। যে শীত তাতে শীতের কাপড় না হলেই নয়। এখানে কম টাকায় পাওয়া যায়, তাই এখানেই এসেছি।

মেয়ের জন্য শীতের কাপড় কিনতে আসা রাজেকুল বলেন, আমি প্রতিবারে এখান থেকে আমার পরিবারের জন্য শীতের কাপড় কিনি এখানে কম দামে ভালো মানের কাপড় পাওয়া যায়।

দোকানদার রহমত আলী বলেন, প্রচণ্ড শীত আসায় মানুষ কাপড় কিনতে আসছে। কিছুটা ভালো ব্যবসা হচ্ছে। তবে ক্রেতারা কেনার থেকে অকে কম দাম বলছে। আমাদের সারা বছর এখানে বেচাকেনা হয় না তোমন একটা শীতের দুই থেকে তিনমাস একটু ভালো বেচাকেনা হয় তা দিয়ে আমরা সারা বছর চলি।

আরেক দোকানদার মোয়াজ্জেম জানান, গত এক সপ্তাহ থেকে একটু কাস্টমারের ভিড় বাড়ছে। এখানে সর্বনিম্ন ২০ টাকা থেকে বিভিন্ন দামের মাল পাওয়া যায়। ভিড় অনুযায়ী বিক্রি কম, কয়েকদিন থেকে বেচাবিক্রি মোটামুটি হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/১৭জানুয়ারি/প্রতিনিধি/জেডএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :