জাপায় ‘বিদ্রোহ’: নেপথ্যে জিএম কাদেরের ঘনিষ্ঠরা!

জিএম কাদেরের ঘনিষ্ঠজনরাই জাতীয় পার্টির চলমান বিদ্রোহে ইন্ধন জুগিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির অনেক নেতা। এই ঘনিষ্ঠজনরাই কলাবাগানে ৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বৈঠকের কারিগর ছিলেন।
ওই বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, যে কয়জন নেতা আমাদের ফোন দিয়ে সেখানে যেতে বলেছেন তারাই এখন জিএম কাদেরের সঙ্গে ভিড়েছেন।
ইতোমধ্যে এই বিদ্রোহের অভিযোগে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে দলটির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, শফিকুল ইসলাম সেন্টু ও ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরীকে।
দলটির নেতাদের অভিযোগ, বিদ্রোহে ফাঁসিয়ে নেতাদের একের পর এক বহিষ্কারের ঘটনা ঘটলেও নেপথ্যের হোতারা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। বরং খোলস পাল্টে তারাই এখন চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর আশপাশে অবস্থান করছেন।
কলাবাগানের বৈঠকে উপস্থিত জাতীয় পার্টির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য ঢাকা টাইমসকে বলেন, সমাঝোতার ভিত্তিতে মনোনয়ন পাওয়া বৃহত্তর ঢাকার এক প্রেসিডিয়াম সদস্য সেদিন বলেছিলেন, এরশাদ পরিবারের কাউকে চেয়ারম্যান রাখা হবে না। সেই প্রেসিডিয়াম আমাকেও ফোন করে সেখানে যেতে বলেছেন। একপর্যায়ে তার কথার জবাবে বৈঠকে উপস্থিত অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী তাকে বলেন, ব্যারিস্টার আনিস সাহেব ডাকলেতো আপনি চলে যাবেন। তখন সে প্রেসিডিয়াম উত্তেজিত সুরে বলেন, আমি কি তার (আনিস) চাকরি করি?
কলাবাগানের বৈঠকে উপস্থিত আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, সেখানে জাতীয় পার্টির জিএম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি আগ্রাসী মনোভাব দেখান বৃহত্তর ঢাকার এক প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং ময়মনসিংহ থেকে সমাঝোতা ভিত্তিতে আসন পাওয়া পরাজিত দুই এমপি প্রার্থী।
সূত্র জানায়, ৯ জানুয়ারির বৈঠকে ১০ জানুয়ারি বনানীর জাপা কার্যালয়ে পরাজিত প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের বিক্ষোভের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জিএম কাদেরের ঘনিষ্ঠরাই সেই বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের ফোন দেন। সেদিনের বিক্ষোভেও অগ্রণী ভূমিকা নেন সেই নেতারা। এমনকি গণমাধ্যমেও প্রকাশ্যে জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন।
আরেকটি সূত্র জানায়, কলাবাগানের বৈঠকে জাপা থেকে বহিস্কৃত ও রওশন এরশাদ অনুসারী কাজী মামুনুর রশীদ উপস্থিত থাকায় জন্ম নেয় বিতর্কের। তার উপস্থিতি প্রসঙ্গে বৈঠকে থাকা এক নেতা বলেন, যে মামুন জাতীয় পার্টির এত ক্ষতি করেছে, তার কাছ থেকে যখন জিএম কাদেরের ঘনিষ্ঠজন ঢাকা বিভাগের সেই প্রেসিডিয়াম সদস্য ৫ লক্ষ টাকা নেন, তখন কি এটি নীতির মধ্যে পড়ে?
বনানীতে বিক্ষোভকালে নেতৃত্ব দেওয়া সাবেক ছাত্রনেতা, দলটির অপর প্রেসিডিয়াম এবং জিএম কাদেরের ঘনিষ্ঠজন সেও এখন আবার ভিড়েছেন জাপা চেয়ারম্যানের সঙ্গে। নেতাদের অভিযোগ, সেই প্রেসিডিয়াম সদস্যও গণমাধ্যমে চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন।
১০ তারিখে বনানী কার্যালয়ে জাপার বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু (সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত), সুনীল শুভ রায় ছাড়াও বেশি তৎপর দেখা গেছে প্রেসিডিয়াম সদস্য জহিরুল আলম রুবেল, জহিরুল ইসলাম জহির, এমরান হোসেন মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান সরদার শাহজাহান, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, বেলাল হোসেনকে।
জাতীয় পার্টির একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্যকে কলাবাগান বৈঠকে এবং বনানীর বিক্ষোভে উপস্থিত হওয়ার জন্য জিএম কাদেরের ঘনিষ্ঠজনরাই ফোন করেছেন বলে ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন নেতারা। এমন বেশ কয়েকটি কল রেকর্ড ঢাকা টাইমস-এর কাছে রয়েছে।
জাতীয় পার্টির এক যুগ্ম মহাসচিব ঢাকা টাইমসকে বলেন, পার্টিতে জিএম কাদের সাহেবের কাছ থেকে যারা সুবিধা নিয়েছেন, সমাঝোতার আসন ভাগিয়ে নিয়েছেন, এমনকি নির্বাচনের সময় আর্থিক সহযোগিতাও পেয়েছেন তারাই এসব বিদ্রোহের ইন্ধনদাতা। ব্যবস্থা নিলে আগে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর দলীয় চেয়ারম্যান হিসেবে এই প্রথম গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের নেতৃত্বে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জাতীয় পার্টি। যোগ্য নেতাদের বাদ দিয়ে তৃণমূলের মতামত ছাড়া নিজ স্ত্রীর আসন নিশ্চিত শর্তে ২৬ আসনে সমঝোতা করে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। সারাদেশে মোট ২৮৩ আসনে প্রার্থী দেয় দলটি। কিন্তু সেই নির্বাচনে চরম ভরাডুবি ঘটে জাপার। মাত্র ১১টি আসনে জয় পায় তারা।
অর্থ সংকটে পড়ে দলীয় সহযোগিতা না পেয়ে অনেক প্রার্থী নির্বাচনের আগে সরে যান। অধিকাংশ প্রার্থী নির্বাচনের দিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গে না পেরে মাঠ ছেড়ে দেন। এসব প্রার্থী দলের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি। দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব প্রার্থীদের খোঁজ-খবর পর্যন্ত নেননি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/১৭জানুয়ারি/জেবি/বিবি)

মন্তব্য করুন