বুটেক্সে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে নেই কাঙ্ক্ষিত সুযোগ-সুবিধা 

রাবী সিদ্দিকী জুবায়ের, বুটেক্স
 | প্রকাশিত : ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৪৭

লাইব্রেরির বর্তমান সময়সীমা এবং কার্যসম্পাদন পদ্ধতি নিয়ে অসন্তুষ্ট বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) অধিকাংশ শিক্ষার্থী। ডিজিটাল লাইব্রেরির নির্মাণ এখন সময়ের দাবি বলে মনে করছেন অনেকেই। এছাড়াও সময়মতো লাইব্রেরি খোলা না পাওয়া, প্রয়োজনীয় বই না থাকাসহ নানান অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম হল ও আজিজ হলে পাঠাগার নেই। অপরদিকে ওসমানী হলে ও শেখ হাসিনা হলে পাঠাগার থাকলেও সেখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক চেয়ার নেই।যার কারণে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করার জন্যে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিকে বেছে নেন। এরই প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি ছিলো যেনো লাইব্রেরির সময়সীমা বাড়ানো হোক এবং যথাযথভাবে লাইব্রেরি পরিচালনা করা হোক।

কিন্তু নির্ধারিত সময়ের বিলম্বে লাইব্রেরি খোলা এবং শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ক্লাস শেষ হবার পূর্বেই লাইব্রেরি বন্ধ করে দেওয়াসহ আরও নানা অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের। লাইব্রেরি পরিচালনায় সময়ানুবর্তিতার অভাবে অনেক শিক্ষার্থী প্রয়োজনমতো লাইব্রেরি ব্যবহার করতে পারছেন না। তাছাড়া বসার স্থানের অভাবও রয়েছে লাইব্রেরিতে। সহস্রাধিক শিক্ষার্থী সম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে বসার স্থান আছে মাত্র অর্ধশতাধিক।

৪৬তম ব্যাচ এর ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল মাহফুজ বলেন, বসার জায়গার বেশ অভাব রয়েছে এবং বই এর সংখ্যাও কম। বসার চেয়ার টেবিলেও বেশ সমস্যা রয়েছে, ঠিকভাবে লিখা যায় না। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিষয়ভিত্তিক বই আরও প্রয়োজন।

বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় চিন্তাবিদ, বুদ্ধিজীবী এবং ভবিষ্যত তৈরির প্ল্যাটফর্ম। আর এই প্ল্যাটফর্ম তৈরির প্রাণকেন্দ্র হলো লাইব্রেরি। লাইব্রেরি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বয়ং সম্পূর্ণতা আর সমৃদ্ধির মানদণ্ডের নিয়ামক। দেশের একমাত্র টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বুটেক্সের লাইব্রেরিতে টেক্সটাইল ও ইঞ্জিনিয়ারিং বইয়ের প্রাচুর্যতা থাকাটাই অনুমেয় ছিলো। কিন্তু বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএফডি বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সুমাইয়া বিনতে সামজাদ বলেন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক রেফারেন্স কপি থাকলেও বাসায় নিয়ে আসার মতো বইয়ের সংখ্যা অনেক কম। প্রয়োজনীয় অনেক বইই পাওয়া যায় না। ম্যাথ রিলেটেড বইতো নেই বললেই চলে। তাছাড়া নন একাডেমিক বইয়ের সংখ্যাও খুবই নগণ্য। নন একাডেমিক বইয়ের পরিধি বাড়ানো উচিত। লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে নির্দিষ্ট সময় পর বই জমা দেওয়ার নিয়মটা কড়াকড়ি থাকলে হয়তো লাইব্রেরিতে গিয়ে খালি হাতে ফেরত আসতে হয় না। অনেকে প্রয়োজন ছাড়াই নিজেদের অলসতায় দীর্ঘসময় বই নিজেদের কাছে রেখে দেয়।

৪৬তম ব্যাচ এর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান বলেন, লাইব্রেরিতে টেক্সটাইল বিষয়ের বিভিন্ন রিসার্চ পেপার, জার্নাল এর সংখ্যা বাড়ানো উচিৎ।

লাইব্রেরির বই সংগ্রহের পদ্ধতি নিয়েও অনেক অসন্তুষ্টি রয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। প্রচলিত লাইব্রেরি কার্ডে দুটার বেশি বই নেয়া যায় না। যখন দুটার বেশি বই নেওয়ার প্রয়োজন হয় বিশেষ করে পরীক্ষার সময়ে তখন শিক্ষার্থীদের বিপাকে পড়তে হয়। তাছাড়া লাইব্রেরি থেকে যারা কোনোসময়ে কোনো ধরনের বই নেয়নি তাদেরও সেমিস্টার পরীক্ষার পূর্বে লাইব্রেরি ক্লিয়ারেন্স সংগ্রহ করার প্রয়োজন হয় যা নিতান্তই অমূলক।

বুটেক্সের লাইব্রেরিতে বর্তমানে লাইব্রেরি ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মাহফুজা বেগম, বুক শাটার হিসেবে রয়েছেন নূর আলম এবং স্মুথ আরা। এছাড়া কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করছেন নাজিম কাউসার এবং তাসলিমা আক্তার। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে কোনো লাইব্রেরিয়ান নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

শিক্ষার্থীদের দাবি ছিলো লাইব্রেরির সময়সীমা বৃদ্ধি করে দেওয়া। কেন না দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও দিনে ১২ ঘণ্টা লাইব্রেরি খোলা থাকার নজির আছে। লাইব্রেরির সময়সীমা সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে লাইব্রেরিতে কর্মরত কর্মকর্তারা জানান, সরকারি কর্ম প্রতিষ্ঠানের নিয়মানুযায়ী লাইব্রেরি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এই সময়সীমা বৃদ্ধি হওয়ার সুযোগ নেই। লাইব্রেরির পাঠ্যপুস্তক সংখ্যা বৃদ্ধি করা বিষয়ে তারা বলেন, নতুন কিছু বই প্রতি বছর আনা হয়। আগামীবছর ও অনেক বই আসবে।

কর্মকর্তারা আরও জানান, শিক্ষার্থীদের মাঝে রিসার্চ পেপার বা জার্নালের চাহিদা কম। যার কারণে এই ধরনের বইয়ের সংখ্যাও কম।

তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে ডিজিটাল লাইব্রেরি বা ই-লাইব্রেরি সময়ের দাবি। দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বুটেক্সেও ই-লাইব্রেরির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা এবং লাইব্রেরি কর্মকর্তারাও।

ই-লাইব্রেরি প্রসঙ্গে আশার বাণী হচ্ছে অতি সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহ আলিমুজ্জামান ডিজিটাল লাইব্রেরি নির্মাণ এর চিন্তা করছেন এবং লাইব্রেরির সময় সংক্রান্ত সমস্যা দূর করতে পূর্বের মতো দুই শিফটে লাইব্রেরি পরিচালনা করার পরিকল্পনা করছেন। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার্থীরা এর সুফল ভোগ করতে পারবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

উল্লেখ্য, যথেষ্ট লোকবলের অভাবে লাইব্রেরির সময়সীমা বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না বলে একসময় অজুহাত দিলেও এখন লাইব্রেরি কর্মকর্তাদের নতুন যুক্তি হলো, তারা সরকারি নির্দেশনার সময়সীমার বাইরে লাইব্রেরি পরিচালনা করবেন না।

(ঢাকাটাইমস/১৯জানুয়ারি/প্রতিনিধি/জেডএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

ঢাবি বিএনসিসির প্রাক্তনদের হাতপাখা বিতরণ কর্মসূচি

কুবি শিক্ষকের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন 

শনিবার খুলবে স্কুল-কলেজ: শিক্ষা মন্ত্রণালয়

যে কারণে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ভলিবল টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে না নোবিপ্রবি

ব্যতিক্রমী উদ্যোগ: শিক্ষার্থীদের জন্য শরবতের আয়োজন ঢাবি অধ্যাপকের

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মেজবাহ্ উদ্দিন

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান কুবি শিক্ষার্থীদের

পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রতি বছর ফিলিস্তিনের ২০ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

পরীক্ষায় বসতে রাজি বুয়েট শিক্ষার্থীরা

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :