খাবারের দাম নিয়ে অসন্তোষ চুয়েট শিক্ষার্থীদের

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) খাবারের অতিরিক্ত মূল্য নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএসসির ক্যাফেটেরিয়া শিক্ষার্থীদের অসন্তুষ্টির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। খাবারের অতিরিক্ত দাম ও নিম্নগামী মান এর মূল কারণ বলে জানা যায়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এক নাম্বার ও দুই নাম্বার ক্যান্টিন বন্ধ হওয়ার পর একচেটিয়া ব্যবসা করার সুযোগ পাওয়ায় এই সমস্যা আরও বেড়ে চলেছে।
চুয়েটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অভিষেক তালুকদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের দামগুলো আরও সহজলভ্য হওয়া উচিৎ ছিল। খাবারের পরিমাণের তুলনায় দাম অনেক বেশি। যেদিকে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর খাবারের দাম তুলনামূলক কম সেদিকে আমাদেরকে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত দাম দিয়ে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে।
পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারজিয়া আহমেদ রাফা ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্যান্টিনে খেয়েছি। খাবারের মান এবং দাম তুলনা করলে সবদিক থেকেই চুয়েটে অতিরিক্ত দাম মনে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর খাবারের দাম শিক্ষার্থীবান্ধব হওয়া উচিত ছিল।
এ ব্যপারে জিজ্ঞেস করলে ক্যাফেটেরিয়ার ম্যানেজার খাইরুল হোসেন বলেন, বাজারের উঠতি মূল্যের কারণে আমাদের এখানে দাম এমন। আমরা চেষ্টা করি খাবারের দাম আর মানের যাতে ভারসাম্য থাকে। আমাদের এখানের সকল মূল্য ছাত্রকল্যাণ দপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত এবং মূল্যের তালিকা সবসময় টাঙানো থাকে। এই দাম থেকে কম দামে খাবার বিক্রি করার কোনো সুযোগ আমাদের কাছে নেই।
দামের দিক থেকে একই অবস্থা চুয়েটের তিন নাম্বার ক্যান্টিনেরও। বাড়তি দামের পাশাপাশি অব্যবস্থাপনা নিয়েও মিলছে নানান অভিযোগ। তাছাড়া প্রশাসনিক সময় ছাড়া সাধারণত বন্ধ থাকে এই ক্যান্টিনটি।
চুয়েট শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই দুবেলা আবাসিক হল ডাইনিংয়ে খাওয়া দাওয়া করে থাকেন। চুয়েটের কয়েকটি হলের ডাইনিং ম্যানেজারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে তাদের পক্ষে ৪০ টাকায় প্রতিবেলা সুষম খাবার সরবরাহ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক একজন ব্যক্তি যে খাবার খান তাতে কার্বহাইড্রেট, প্রোটিন, স্নেহ জাতীয় উপাদানের অনুপাত ৪:৪:১ হওয়া প্রয়োজন। পরিমাণ কম হওয়ায় ডাইনিংয়ের খাবারের মাধ্যমে এই চাহিদা পূরণ করা কষ্টসাধ্য।
চুয়েটের হল ক্যান্টিনগুলোতে সরেজমিনে দেখা যায় খাবারের দাম তুলনামূলক বেড়েছে। শামসেন নাহার খান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম বলেন, হলের ক্যান্টিনে খাবারের দাম খুব একটা বেশি নয়। তবে মান কিছুটা অস্বাস্থ্যকর। আগে মোটামুটি ভালো খাবার পাওয়া গেলে এখন সবসময় খাবার পাওয়া যায় না। রাত ৮টার পর এই সমস্যা আরও বেশি দেখা যায়। খাবারের এই অপ্রাপ্যতার কারণে আমরা শিক্ষার্থীরাই সমস্যায় ভুগছি।
চুয়েটের বাইরের দোকানগুলোতে দেখা মিলে খাবারের অতিরিক্ত দামের। পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতিন ইশতিয়াক বলেন, চুয়েটের ভিতরে দাম আর মানের সামঞ্জস্য না থাকায় আমরা অনেকেই বিকালের নাস্তার জন্যে চুয়েটের গেইটের সামনের দোকানগুলোতে যাই। কিন্তু সেখানেও একই অবস্থা। অতিরিক্ত দামের কারণে আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। গত ১-২ বছর ধরে সকল ধরনের খাবারের দাম শুধু বেড়েই চলেছে।
এ ব্যাপারে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, খাবারের মান ঠিক রাখতে গেলে এর চেয়ে দাম কমানো সম্ভব নয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়টিও সবার মাথায় রাখতে হবে। তাও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরা এ ব্যাপারে আলোচনা করে দেখবো কোনো সমাধানে আসা যায় কি না।
১ ও ২নং ক্যান্টিনের বিষয়ে তিনি বলেন, মুক্তমঞ্চ করার জন্য এগুলো ভেঙে ফেলা হবে। তাই এগুলো বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/২২জানুয়ারি/প্রতিনিধি/জেডএম)

মন্তব্য করুন