বিএনএম-তৃণমূল বিএনপির ভবিষ্যৎ কী, জানেন না নীতিনির্ধারকেরা

জাহিদ বিপ্লব, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:২৪ | প্রকাশিত : ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:১৯

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে হঠাৎ করেই আলোচনায় আসে তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)। বিএনপি থেকে বেশ কয়েকজন নেতা দল দুটিতে যোগ দিয়ে অংশ নেন নির্বাচনে। গুঞ্জন আছে, সরকারের নেপথ্য সমর্থন নিয়েই নির্বাচনে অংশ নেয় দুটি দল। ভোটের পরে জাতীয় সংসদে তারাই বিরোধীদল হবে- এমনটিই মনে করেছিলেন দল দুটির শীর্ষনেতারা।

তবে নির্বাচনে দুটি দলেরই ভরাডুবি হয়েছে। জয় পায়নি বিএনএমের কেউ। প্রার্থীদের একজন ছাড়া বাকি সবাই জামানত হারিয়েছেন। একই অবস্থা তৃণমূল বিএনপিরও। তাদের কেউ জামানত রক্ষা করতে পারেননি। এ অবস্থায় দল দুটির ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান নেতাকর্মীরাই। দল দুটির সাংগঠনিক তৎপরতা ও ভবিষ্যৎ কী হবে তা এখনো জানেন না নীতিনির্ধারকেরা।

গত ২ ডিসেম্বর রাজধানীর গুলশানে বিএনএমের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মো. শাহ্‌জাহান বলেছিলেন, ‘প্রথমবারের মতো বিরোধী দলে যাব।’

মো. শাহ্‌জাহান চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনি ১ হাজার ৭৪ ভোট পেয়েছেন, আসনটিতে ভোটের হিসাবে যা চতুর্থ। ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নতুন নিবন্ধিত বিএনএম-এর ৫৩ প্রার্থীর কেউ জিততে পারেননি। একজন বাদে বাকি সবাই জামানত হারিয়েছেন। কক্সবাজার-২ আসনে দলটির প্রার্থী মোহাম্মদ শরীফ বাদশা শুধু জামানত রক্ষা করতে সক্ষম হন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ বাকি সব প্রার্থীই জামানত হারান। দলটির বেশ কয়েকজন প্রার্থী ১০০ ভোটেরও কম পেয়েছেন।

নির্বাচনের মাত্র পাঁচ মাস আগে নিবন্ধন পাওয়া বিএনএম ‘নোঙ্গর’ প্রতীক নিয়ে ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পায়। দলটির কার্যালয় ছিল মহাখালীর একটি ছোট কক্ষে। ৩৮০ বর্গফুটের সেই কার্যালয়ের ভাড়া ছিল মাসে ১৫ হাজার টাকা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) গুলশানে আলিশান কার্যালয়ে কার্যক্রম শুরু করে।

অপরদিকে, বিএনপিবিহীন নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল হবে সোনালী আঁশ প্রতীক পাওয়া তৃণমূল বিএনপি—ভোটের আগে নতুন নিবন্ধিত দলটির চেয়ারপারসন ও মহাসচিব একাধিকবার একথা বলেছিলেন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির পর তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রার্থীও দিয়েছিল ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া তৃণমূল বিএনপি। তবে ভোটের মাঠে দলটির ১৩৫ প্রার্থীর কেউই ঠিকঠাক দাঁড়াতে পারেননি। কোনো আসনে জয় না পাওয়া দলটির প্রায় সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। আলোচনায় থাকা দলটির শীর্ষ নেতারাও বড় ব্যবধানে ধরাশায়ী হয়েছেন।

বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মো. আবু জাফর ফরিদপুর-১ (মধুখালী, বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা) আসনে প্রার্থী হন। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমানের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় স্বতন্ত্র প্রার্থী সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলনের। এখানে তৃতীয় হন শাহ আবু জাফর।

সোনালী আঁশ প্রতীকের তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মুবিন চৌধুরী ১০ হাজার ৯৩৬ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। আর মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার বিশাল ব্যবধানে হেরেছেন। তিনি পেয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ১৯০ ভোট।

কিংস পার্টি খ্যাত দলের নেতারা বলেছেন, “যারা আমাদের নির্বাচনের মাঠে নামিয়েছে তারা আমাদের দেওয়া কমিটমেন্ট রক্ষা করেনি। আর যারা দূতিয়ালি করেছেন তারা এই পরাজয়ের জন্য দায়ী।”

নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলটির প্রার্থীরা বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে সরকার কথা রাখেনি। সরকার দলীয় প্রার্থীরা কারচুপির আশ্রয় নিয়েছেন। আজকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর রেষানলে পড়েছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির এক শীর্ষ নেতা ঢাকা টাইমসকে বলেন, “এখন আমাদের ভবিষ্যৎ কী, তা নিজেরাই জানি না।”

তৃণমূল বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রোকসানা আমিন বলছেন, নির্বাচনে জয় না পেলেও তারা রাজনৈতিক পরিচয় পেয়েছেন। মানুষের ভরসা পেয়েছেন। তাই তারা আরও সক্রিয় হতে চান।

দলের পরবর্তী কার্যক্রম কী, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখনও কোনো কার্যক্রম ঠিক হয়নি। দলের সিনিয়র নেতাদের মানসিক অবস্থা ভালো নয়। তার ওপর অসুস্থ। তারা আবার ফিরে এলে সব নেতাকর্মীর সঙ্গে বসে পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা ঠিক করব।”

তৃণমূল বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম-১১ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া দিপক কুমার পালিত আক্ষেপ করে ঢাকা টাইমসকে বলেন, “আমরা বড় আশা করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু আশাহত হয়েছি। বলা হয়েছিল আমাদের বিরোধীদল বানানো হবে। কিন্তু নির্বাচনের সময় তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন বা মহাসচিব কারও সহযোগিতা পাইনি। তারা ২৭ সদস্যের নির্বাহী কমিটিকে পাত্তা না দিয়ে নিজেদের আসনকে প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।”

তিনি বলেন, “নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপিসহ বিরোধীজোটের রেষানলে পড়লাম। আমরা এখন কোথায় যাব?”

বরিশাল-২ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া তৃণমূল বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ ঢাকা টাইমসকে বলেন, “আমাদের সঙ্গে যে কমিটমেন্ট করা হয়েছিল তা রাখা হয়নি। প্রথমে বলা হলো এ আসনে নৌকা থাকবে না। তারপর হঠাৎ করেই রাশেদ খান মেননকে দেওয়া হলো। সরকারের সঙ্গে যে দেনদরবার ছিল তা পূরণ না হওয়ার জন্য চেয়ারম্যান ও মহাসচিব দায়ী। তারা অনেকটা বিজয় নিশ্চিত ভেবে নিজ এলাকায় কাজ করলেও আমাদের বিষয়টিও তাদের মাথায় রাখা উচিত ছিল। আজকে তাদের কথায় নির্বাচনে অংশ নিয়ে লাইভ রিস্কে আছি। সরকার যদি আমাদের ১০টি আসন দিতো তাহলে সরকারের কী এমন ক্ষতি হতো?”

এ বিষয়ে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার ঢাকা টাইমসকে বলেন, “সব আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে এমন তো নয়। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের অভিজ্ঞতা হলো। আমরা মনে করি আমরা হেরে গেছি। আমরা আমাদের সরলতার কাছে হেরে গেছি। মেজর জেনারেল ইবরাহীমের মাথায় যে বুদ্ধি ছিল সে বুদ্ধি আমাদের নেই। হয়তো সরকার আমাদের বিশ্বাস করে নাই। মনে করেছিলাম নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি যেহেতু মানে নাই তাই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে দেখি।”

অ্যাডভোকেট তৈমুর দলীয় প্রার্থীদের নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছে দাবি করে বলেন, প্রত্যেক প্রার্থী যে টাকা নিয়েছে তার সই রয়েছে।”

বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং ফরিদপুর-১ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর ঢাকা টাইমসকে বলেন, “নতুন দল হিসেবে আমাদের জনবল ছিল না। পূর্ণাঙ্গ শক্তির অভাব ছিল।”

নির্বাচনের আগে সরকারের সঙ্গে কোনো আঁতাত হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, “সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনি মাঠে বাধার সম্মুখীন না হলেও ভোটের দিনের আবহাওয়া ছিল ভিন্ন। যেটা আমি আশা করিনি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাদের কর্মী-সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখিয়েছে। নির্বাচনের পর হামলা-মামলার ভয় দেখিয়েছে।”

বিএনএম মহাসচিব ড. মোহাম্মদ শাহাজাহান সরকারের কড়া সমালোচনা করে বলেন, “নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। আমাদের মাঠেই নামতে দেওয়া হয়নি। মনে হয়েছে আওয়ামী লীগের নির্বাচন হয়েছে বিএনএম ঠেকাও। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, এটি পরিষ্কার হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ প্রার্থী নির্বাচনে কারচুপি করেছে। বেশির ভাগ উপজেলায় ইউএনওসহ সরকারি কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন।”

বিএনএমের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এস এম আজমল হোসেন এ ব্যাপারে বলেন, “দলের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে। দলের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

বিএনএমের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হানিফ ঢাকা টাইমসকে বলেন, “এ দলটি নতুন। আমাদের কর্মী বাহিনীও তেমন ছিল না। এ অবস্থায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা আমাদের জন্য কঠিন ছিল।

(ঢাকাটাইমস/২৫জানুয়ারি/জেবি/ইএস/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

ইট মারলে পাটকেল খাওয়ার জন্য বিএনপিকে প্রস্তুত থাকার হুঁশিয়ারী নানকের

সরকার দেশকে বিদেশি ঋণ নির্ভর দেশে পরিণত করেছে: জামায়াত

জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকীতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির তিন দিনের কর্মসূচি 

বিএনপির আরও চার নেতা বহিষ্কার

নাশকতার ১৪ মামলায় বিএনপি নেতা সালামের স্থায়ী জামিন

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে আ.লীগের কর্মসূচি

বিএনপির আশার গুড়ে বালি, যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক গভীর করতে চায়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে: মির্জা ফখরুল

ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে মরুভূমি বানাচ্ছে: রাশেদ প্রধান

শেখ হাসিনা ছাড়া এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন কেউ করেনি: ওবায়দুল কাদের 

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :