স্বতন্ত্র এমপিরা থাকতে চান আ.লীগ সংসদীয় দলে

আওয়ামী লীগের যেসব নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই সংসদেও দলের পাশেই থাকতে চান। আলাদা জোট গঠন করে সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালনের বদলে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলে থাকার ইচ্ছা তাদের।
আগামী ২৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে যে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, সেখানে গিয়ে এই আকাঙ্খা জানানোর কথা ঢাকা টাইমসকে বলেছেন ১০ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য। এর মধ্যে তিনজন স্বতন্ত্র এমপি ঢাকা টাইমসের কাছে নাম প্রকাশ করেই আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছেন। তবে একজন এমপি এ বিষয়ে মত দেননি।
এসব স্বতন্ত্র এমপিরা এখন প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ জানানো সেই দিনের অপেক্ষায় রয়েছেন। সেদিন তারা গণভবনে গিয়েও প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের ইচ্ছার কথা তুলে ধরবেন। এদিন এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যে দিকনির্দেশনা দেবেন, তা তারা মেনে নিবেন বলেও জানিয়েছেন এসব এমপিরা।
বাংলাদেশের নির্বাচনে এবারই প্রথম রেকর্ডসংখ্যক ৬২ জন স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এদের মধ্যে দুজন বাদে সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত। তবে বিগত নির্বাচনগুলোতে দলের মনোনয়ন পাওয়া নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলে তাদের বিষয়ে দলীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার নজির থাকলেও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সেই পথে হাঁটেনি আওয়ামী লীগ।
কয়েকজন স্বতন্ত্র এমপির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত হলেও তারা আওয়ামী লীগের নেতা। তাই বিরোধীজোট গঠন করে নেতারা দলের সুযোগ সুবিধা ও পদ-পদবি হারাতে চান না।
এসব বিষয়ে ইতোমধ্যেই কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, সংসদের বিরোধীদল তাদের হওয়ার সম্ভবনা বেশি- যে দল ক্ষমতাসীন দলের পর বেশি আসন পেয়েছেন। আর স্বতন্ত্র এমপিদের কি হবে এটা তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।
খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক একজন সদস্যকে স্বতন্ত্র জোটের সংসদীয় দলের নেতা আর যুবলীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্যকে স্বতন্ত্র জোটের সংসদীয় দলের উপনেতা করা হতে পারে।
এদিকে আগামী ৩০ জানুয়ারি বসতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন। সংসদ কক্ষে সদস্যদের আসন বিন্যাসের কাজ চলছে। সেখানে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের আসন রয়েছে জাতীয় পার্টির পাশে। বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র এমপি সামনের সারির আসন পাবেন।
এদিকে স্বতন্ত্র এমপিরা রাজনৈতিক দলে বা জোটে যোগদান করতে চাইলে আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে জানাতে হবে। এ বিষয়ে মতামত জানানোর জন্য সংসদ সদস্যদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
গত মঙ্গলবার ইসি সচিব জাহাংগীর আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে দল ও জোট গঠনের বিষয়টি ইসিকে জানাতে বলা হয়েছে।
ময়মনসিংহ-৭ আসনের স্বতন্ত্র এমপি এ বি এম আনিসুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, আগামী ২৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী গণভবনে ডেকেছেন স্বতন্ত্র এমপিদের। এরপর ৩০ জানুয়ারি এই সরকারের প্রথম অধিবেশনে আমরা যোগদান করবো। কিন্তু এর আগে জোট গঠন করা হবে কি না তা জানি না। এখন পর্যন্ত এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা আমি জানি না। তবে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলে থাকাটাই ভালো মনে করি।
ঢাকা-৪ আসনের স্বতন্ত্র এমপি আওলাদ হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেহেতু স্বতন্ত্র এমপিদের গণভবনে ডেকেছেন অবশ্যই যাব। কিন্তু আমি যেহেতু আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত তাই স্বতন্ত্র এমপি হলেও দলের সঙ্গে থাকতে চাই। আর স্বতন্ত্র এমপিদের জোট গঠন করা হবে কিনা বা কবে হবে এটা আমার জানা নেই।
জামালপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র এমপি মো. আব্দুর রশিদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমি তো আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে এমপি হয়েছি। আগামী ২৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে স্বতন্ত্র এমপিরা সাক্ষাৎ করবেন। তিনি যা বলবেন আমরা তাই করবো। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি ঘরের ছেলে ঘরে ফিরত চাই।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য ও টাঙ্গাইল-৪ আসনের স্বতন্ত্র এমপি আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় দেখেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বতন্ত্র এমপিদের গণভবনে ডেকেছেন। আগামী ২৮ জানুয়ারি সবাই যাবে। তবে আমি কোনো চিঠি বা আমন্ত্রণ পাইনি। কিন্তু স্বতন্ত্র এমপিদের নিয়ে জোট গঠন একটা উড়ো খবর। এ নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
(ঢাকাটাইমস/২৬জানুয়ারি/জেএ/আরআর)

মন্তব্য করুন