সার প্রয়োগের পরিমিত অনুপাত জানাবে ‘নিউট্রিয়েন্ট ব্যালেন্স’ অ্যাপ

বাকৃবি প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১৩:৪০
অ- অ+

নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম, ফসফরাস এবং সালফার উদ্ভিদের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক পুষ্টি উপাদান। ফসলে এই উপাদানগুলোর অভাবপূরণ করতে অজৈব সার জমিতে প্রয়োগ করা হয়। এই উপাদানগুলোর অভাব যেমন ফসলের পুষ্টিহীনতার কারণ তেমনি অতিরিক্ত প্রয়োগ ফসলের জন্য ক্ষতির কারণ। তাই ফসলের সঠিক উৎপাদন নিশ্চিত করতে পরিমিত অনুপাতে সারের ব্যবহার যে কোনো ফসলের জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ফসল অনুযায়ী জমিতে অজৈব সারের পরিমিত অনুপাত নির্ণয়ের জন্যে ‘নিউট্রিয়েন্ট ব্যালেন্স’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। তাদের উদ্ভাবিত এই অ্যাপটির মাধ্যমে আলু, বোরো ধান, রোপা আউশ ধান, রোপা আমন এবং ভূট্টা এই পাঁচটি ফসলের ক্ষেত্রে জমিতে সারের পরিমাণ কম বা বেশি আছে সেটি জানতে পারবেন কৃষক।

অ্যাপটি বাংলা এবং ইংরেজি ভাষাতেই ব্যবহার করা যাবে। অ্যাপটিতে প্রবেশের পর প্রথমেই জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন নির্বাচন করে কোন ফসলের জন্যে কোন সার কতোটুকু লাগবে সেটির মোট পরিমাণ করার জন্যে বৃষ্টিপাত, মাটির গুণাগুন ও কাঙ্খিত ফলনের পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে।

পাশাপাশি জৈব সার ব্যবহার করা হবে কি না এবং ফসলের কি পরিমাণ অবশিষ্টাংশ জৈব উপাদান হিসেবে জমিতে থাকে এসব তথ্যও অ্যাপে দিতে হবে। এরপরই কৃষকের দেওয়া সকল তথ্য বিশ্লেষণ করে যতটুকু সার দেওয়া হয়েছে তার একটি ব্যালেন্স মান নির্ণয় করে দিবে অ্যাপ। ব্যালেন্সের মান ঋণাত্মক আসলে বুঝতে হবে ওই পরিমাণ অতিরিক্ত সার জমিতে দিতে হবে। আর যদি ধণাত্মক মান আসে তাহলে ওই পরিমাণ সার অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে ওই পরিমাণ সার কম প্রয়োগ করতে হবে। এতে যেমন খরচ কমবে পাশাপাশি উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে।

‘নিউট্রিয়েন্ট ব্যালেন্স’ অ্যাপটি সম্পর্কে এসব তথ্য দেন প্রকল্পের প্রধান গবেষক বাকৃবির মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মফিজুর রহমান জাহাঙ্গীর। তিনি আরও জানান, ‘ডেভেলপমেন্ট অফ এ ফিল্ড লেভেল স্কেল নিউট্রিয়েন্ট ব্যালেন্স ক্যালকুলেটর ফর ক্রপস অফ অ্যান ইনটেনসিভলি ম্যানেজড এগ্রিকালচারাল সিস্টেম’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়। সহকারী গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মো. জহির উদ্দীন। তিন বছরের ওই গবেষণা প্রকল্পের অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি (বিএএস) এবং ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)।

উদ্ভাবিত মোবাইল অ্যাপটির কার্যকারিতা সম্পর্কে তিনি বলেন, সারের হিসাব করে এমন অনেক অ্যাপ রয়েছে। কিন্তু অন্য অ্যাপের সঙ্গে আমাদের তৈরি অ্যাপের বিশেষ পার্থক্য রয়েছে। সারের হিসাব দেওয়ার পাশাপাশি এই অ্যাপ আরও জানাবে কতোটুকু সার গাছ গ্রহণ করলো, কতোটুকু সার ভূগর্ভস্থ ও নদীর পানিতে অপচয় হলো, কতোটুকু সার অ্যামোনিয়া গ্যাস হিসেবে বায়ু দূষণে যুক্ত হলো এবং কতোটুকু সার নাইট্রাস অক্সাইড হিসেবে গ্রিনহাউজ গ্যাস তৈরি করলো।

গবেষক আরও জানান, এ পর্যন্ত দেশের তিনটি স্থানে (বগুড়ার শেরপুর, কুমিল্লার চান্দিনা, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা) এই অ্যাপ দিয়ে প্রাথমিক গবেষণা করা হয়েছে। তিনটি স্থানেই আশানুরূপ ফলাফল দিয়েছে অ্যাপটি। অ্যাপটির এখনো উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। এটি সম্পূর্ণ কৃষকবান্ধব করে কৃষক পর্যায়ে প্রচারণা করা হবে। আমাদের উদ্দেশ্য হলো দেশের সবগুলো জেলার কৃষকদের কাছে এই অ্যাপটি পৌঁছে দেওয়া। বর্তমানে প্রযুক্তির এই যুগে আমাদের তৈরি এই অ্যাপটি স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট কৃষক তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।

(ঢাকাটাইমস/২৬জানুয়ারি/প্রতিনিধি/জেডএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বগুড়ায় সারজিসের উপস্থিতিতে এনসিপির সমাবেশে দুই গ্রুপের মারামারি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
বাংলাদেশে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আগ্রহী চীন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ২০০ কেজি ওজনের বোমা পাওয়া গেল মুন্সীগঞ্জে, নিষ্ক্রিয় করল সিটিটিসি
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা