ছাত্রীরা কেন বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ

তাওহিদুল ইসলাম, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০| আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১৪:৪৯
অ- অ+

২০২৩ সালজুড়ে ৫১৩ শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এদের মধ্যে ছাত্র ২০৪ জন।ছাত্রী ৩০৯ জন। শনিবার আঁচল ফাউন্ডেশন আয়োজিত২০২৩ সালে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা: পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময় শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করা তথ্য বিশ্লেষণ করে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবনে প্রতিকূলতার সঙ্গে চলার সক্ষমতা মানসিক চাপ মোকাবিলার সক্ষমতা কম বলেই আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি।

বেসরকারি সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৫১৩ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার মধ্যে ছেলে ২০৪ জন। অন্যদিকে মেয়ে ৩০৯ জন। যা শতাংশের হারে মেয়েরা ৬০. আর ছেলেরা ৩৯. শতাংশ।

এছাড়া আত্মহত্যার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, অভিমান করে আত্মহত্যা করেছেন ১৬৫ জন (৩২. শতাংশ), প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা করে ১৪. শতাংশ, মানসিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন . শতাংশ, পারিবারিক কলহে . শতাংশ, পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেন . শতাংশ শিক্ষার্থী।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শিশুদের ছোট বেলা থেকেই বাস্তবতার সাথে পরিচয় করানো হয় না। তাদেরকে অতি প্রশ্রয় দিয়ে বড় করে তুলে। শিশুরা যখন যা চায়, তা দিয়েই তাদের বড় করা হয়। এতে দেখা যায়, শিশুরা বড় হয়ে যখন জীবন চলার পথে হোঁচট খায় তখন একটুতেই তারা অভিমান করে, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে সাহস পায় না। জন্য কোথাও একটু বাঁধা পেলে বা কোনো কিছু নিজের মতো না হলেই তারা আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেয়। বর্তমানে শিশুদের একাকিত্ব করে বড় করায় তাদের মানসিক চাপ মোকাবেলার সক্ষমতা কম। ছাড়া সামাজিক ব্যবস্থাকেও দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তুলনায় মাদরাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা কম আত্মহত্যা করছেন। এবিষয় বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মাদরাসায় ধর্মীয় বিষয় পড়োনো হয় বেশি। আর ইমলাম ধর্মে আত্মহত্যা পাপ। এগুলো শিক্ষার্থীরা জানে বলেই হয়ত তাদের আত্মহত্যার হার কম।

বিষয় জানতে চাইলে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেখলা সরকার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এখনকার ছেলে-মেয়েদের পরিস্থিতি মোকাবেলার সক্ষমতা কম। এর অন্যতম কারণ ছেলে-মেয়েরা জীবন সংশ্লিষ্টতা থেকে দূরে সরে একাকিত্ব নিয়ে বড় হচ্ছে। অন্য -১০ জনের সাথে তারা মেলামেশা করছে না। অন্য মানুষের সাথে মেলামেশা জীবন দক্ষতা জীবনের নানামুখি চাপ মোকাবেলা করতে শেখায়। যে যত সামাজিক মানুষের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকবে তত তার এই বৈশিষ্টগুলো শক্ত হবে এবং যতই চাপ আসুক তা সামলাতেও পারবে।

ডা. মেখলা সরকার বলেন, ছেলে-মেয়েরা ব্যক্তি স্বতন্ত্র হয়ে বড় হচ্ছে। এখানে বাবা-মা দায়ী। জীবন থেকে তারা অনেক দূরে। প্রযুক্তি আসক্ত হয়ে মানুষের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি থেকে দূরে থাকে। মানুষের সাথে বন্ধুত্ব না হলে জীবনের সাথে ঘনিষ্টতা হবে না। আর জীবনের সাথে ঘনিষ্টতা না হলে জীবন পরিচালনার দক্ষতার জায়গা তৈরি হবে না। বলেন, একটা শিশু যখন খেলাধুলা করে তখন হার-জিত থাকে। এখানে হারকে মেনে নেওয়া ক্ষমতা তৈরি হয়। আবার অন্য ছেলে মেয়েদের সাথে মনোমানিল্য ঘটে এবং তাদের মাঝে সমোঝোতা (ম্যানেজ) করারও সক্ষমতা তৈরি হয়। এগুলোই তো বাস্তব জীবনে ঘটে।

ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বেশি আত্মহত্যা করছে, এর কারণ হিসেবে এই মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, মেয়েদের চাপ মোকাবেলা করার দক্ষতা কম। একটা ছেলে ছোট বেলা থেকেই ঘরের বাইরে বের হয়। ছোট বেলা থেকে ছেলেরা বাইরে টুকটাক কেনাকাটা করতে যায়, খেলাধুলা করে। এতে তাদের চাপ মোকাবেলা করার দক্ষতা তৈরি হয়। কিন্তু মেয়েদের অতিরিক্ত নিরাপত্তার নামে ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়।

মাদরাসার শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা কম করছে। এর কারণ হিসেবে ডা. মেখলা সরকার বলেন, ‘এখানে ধর্মীয় শিক্ষাটা কাজ করতে পারে। যেহেতু ধর্মে আত্মহত্যা স্পষ্টভাবে নিষেধ আছে। এটা তাদের কাজ করতে পারে।

সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেখলা সরকার বলেন, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের আত্মহত্যার সমস্যাটা বেশি। কারণ তাদের ইমোশনাল ম্যাচিউরিটি (মানসিক পরিপক্কতা) জীবন পরিচালনার সক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম থাকে। তাদের আবেগের প্রবণাতাও বেশি থাকে। প্রেম ঘটিত কারণ, পারিবারিক কলহ জীবনে এক ধরনে প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। যার আবেগের প্রাবল্য বেশি থাকে, তার প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে বেশি থাকবে। এই আবেগের প্রবণতা সামাল দিতে পারলে আত্মহত্যা থেকে বেঁচে যাবে। মানিসক চাপ মোকাবেলার সক্ষমতা ভালো না থাকলে আবেগ সামাল দিতে পারবে না। ক্ষেত্রে আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক . সালমা বেগম ঢাকা টাইমসকে বলেন, মানসিক কারণেই মানুষ বেশি আত্মহত্যা করে। সামাজিক বন্ধন যদি কারো না থাকে তাহলে একটা সময় হতাশা কাজ করে। এখান থেকেই আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নেয়। আমাদের সমাজ ব্যবস্থা জন্য দায়ী। আর স্কুল কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাপ পারিবারিক কারণেই বেশি আত্মহত্যা করে। কারণ বাবা-মা ছেলে-মেয়েদের সময় দিতে পারে না, সন্তান কাদের সঙ্গে মিশে, মোবাইলে কী দেখে, নেশাগ্রস্ত হচ্ছে না কিনা। এসব বাবা-মা খেয়াল না রাখায় ছেলে-মেয়েরা বেশিরভাগ খারাপ হয়।

ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বেশি করে আত্মহত্যা করে, এর কারণ জানতে চাইলে . সালমা বেগম বলেন, মেয়েরা সামাজিকভাবে বিভিন্ন ধরনের চাপে থাকে বেশি। যেমন, কোনো মেয়ের বিয়ের পর যদি বিচ্ছেদ ঘটে, তাহলে সমাজ সেটা অন্যভাবে নেয়। তারপর কোনো কারণে যদি একটা মেয়ে বিয়ের আগে গর্ভবতী হয়ে পড়লে এরপর তার বিয়ে হবে না। মেয়েরা নানাভাবে সহিংতার শিকার। কিন্তু বিচার পায় না। এতে একটা মেয়ে আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেয়। ছাড়া মেয়েদের চাপ সামলানোর সক্ষমতাও কম ছেলেদের তুলনায়।

তিনি বলেন, আত্মহত্যা করার পেছনে বড় একটা কারণ থাকে অর্থনৈতিক টানপোড়নও। অর্থনৈতিকের ভালোদিকও আছে আবার খারাপ দিকও আছে। মাদরাসার শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা কম করছে কেন জানতে চাইলে এই অধ্যাপক বলেন, ধর্মীয় শিক্ষা মাদারাসার শিক্ষার্থীরা বেশি পায়। হাদিস কোরআন নিয়েই সারাক্ষণ থাকে তারা। এতে তাদের মধ্যে মৃত্যু পরবর্তী সময়ের জন্য ভীতি কাজ করে। তারা জানে আত্মহত্যা করা পাপ, কারণে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা কম করে।

(ঢাকা টাইমস/২৮জানুয়ারি/টিআই/আরআর/বিবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বাংলাদেশে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আগ্রহী চীন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ২০০ কেজি ওজনের বোমা পাওয়া গেল মুন্সীগঞ্জে, নিষ্ক্রিয় করল সিটিটিসি
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
আইইউবিএটি-তে চীনা ভাষা কোর্সের উদ্বোধন
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা