ঠান্ডায় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়, প্রতিরোধের উপায়

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:৩৬

নিঃশব্দ ঘাতক হার্ট অ্যাটাক আমাদের জীবনকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে। যখন হৃৎপিণ্ডের কোনো শিরায় রক্ত জমাট বেঁধে হৃৎপিণ্ডে রক্ত প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করে তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়। উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিসের মতো রোগ শরীরে বাসা বাঁধলে এই বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়া জরুরি। তবে অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সময়ের অভাবে খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম, অত্যধিক ব্যস্ততা, মানসিক চাপ বাড়িয়ে দিতে পারে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি।

শীতকালে বাড়ছে হার্ট অ্যাটাক! ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে ইনফ্লুয়েঞ্জা, জয়েন্টে ব্যথা, গলা ব্যথা, হাঁপানি, কোভিড-১৯ এবং হৃদরোগের মতো সমস্যা বাড়ে। শীতকালে, রক্তনালীগুলি শরীরে নিয়ে যাওয়া নালীগুলি সংকুচিত হয়ে যায়। সুতরাং রক্তনালীগুলি যদি আমার ত্বকে সংকুচিত হয় তবে এটি বাষ্পীভবন রোধ করে, এটি তাপের ক্ষতি রোধ করে এবং এটি শরীরের জন্য তাপ সংরক্ষণের চেষ্টা করে।

সুতরাং এটি সংকুচিত হয় এবং সংকুচিত হয়ে হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ বাড়ায়। হৃদস্পন্দনের সামান্য বৃদ্ধিও একটি ঝুঁকির কারণ। রক্তচাপের সামান্য বৃদ্ধিও একটি ঝুঁকি চিহ্নিতকারী। শীতকালে ক্রমবর্ধমান বায়ু দূষণও এর অন্যতম কারণ।'

ধূমপান হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির একটি বিশেষ কারণ। এ ছাড়াও শারীরিক অনুশীলনের অভাব, অতিরিক্ত খাওয়া, অতিরিক্ত মদ্যপান এবং অ্যালকোহলের কারণেও হার্ট অ্যাটাক হয়।

হার্ট অ্যাটাক যে কোনও বয়সে, যে কোনও সময়ে হতে পারে। অনেকে মনে করেন, ছেলেদের হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বেশি। কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি থাকে। এমন কিছু সাধারণ উপসর্গ হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে, যা আমরা দেখেও অবহেলা করি। হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কোন কোন লক্ষণে ধরা সম্ভব?

বুকে ব্যথা: সাধারণত বুকের মাঝখানে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়। আস্তে আস্তে সেই ব্যথা চোয়ালে অথবা বাম কাঁধ ও হাতে ছড়িয়ে পড়ে থাকে। এই রকম ব্যথা দেখা দিলে অব্যশই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

শ্বাসকষ্ট ও দম ফুরিয়ে যাওয়া: যদি আপনার শ্বাসকষ্ট বা অন্য কোনও সমস্যা না থাকে এবং হঠাৎ করে শ্বাস নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়, তবে সেটা খারাপ লক্ষণ। মূলত হৃদরোগ থেকে ফুসফুসে জল জমা-সহ বিভিন্ন জটিলতার কারণে ঠান্ডা ছাড়াও শ্বাস কষ্ট এর সমস্যা দেখা দিতে পারে। অল্পতেই দম ফুরিয়ে যাওয়া, মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়াও হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ।

অতিরিক্ত ঘাম হওয়া: অতিরিক্ত ঘাম হওয়া হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ। বিশেষ করে ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা হওয়া ছাড়াও অতিরিক্ত ঘাম, বুক ধড়ফড়, হঠাৎ শরীর খারাপ লাগতে শুরু করলে অব্যশই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

কাশি: আপনার যদি দীর্ঘ দিন কাশির সমস্যা থাকে, এবং তার সঙ্গে সাদা বা কিছুটা ঘোলাটে কফ বের হয়। তবে বুঝতে হবে আপনার হার্ট ঠিক মতো কাজ করছে না। ভবিষ্যতে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। তবে হ্যাঁ, কাশি সব সময় হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ নাও হতে পারে। কফের সঙ্গে নিয়মিত রক্ত বের হলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থেকেই যায়।

অজ্ঞান হয়ে যাওয়া: যদি কাজ করার মধ্যেই আপনি প্রায়ই হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যান, তা হলে বুঝবেন হার্টের সমস্যা রয়েছে।

তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়া: আপনি কি অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন? কিছু ক্ষণ কাজ করলে বুক ধড়ফড় করে? তবে আপনি এখনই কোনও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বিশেষ করে মহিলাদের হার্টের সমস্যার প্রধান লক্ষণ এটি।

মাথা ব্যথা: যখনই প্রচণ্ড মাথা ব্যথা হয়, আমরা ওষুধ খেয়ে থাকি। কিন্তু জানেন কি, হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম লক্ষণ হল প্রতিদিনের প্রচণ্ড মাথা ব্যথা?

অনিয়মিত পালস রেট: আপনি যদি অনেক বেশি নার্ভাস থাকেন বা কোথাও থেকে দৌড়ে আসেন আপনার পালস রেট ওঠা-নামা করতে পারে। তবে এটি যখন কোনও কারণ ছাড়াই হয়, তবে তা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হার্ট অ্যাটাকের আগে এমনটা হয়ে থাকে।

হঠাৎ করে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে? তা হলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকতে পারে। শ্বাস নিতে কষ্ট হলে, দম আটকে এলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। দৈনন্দিন জীবনে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থেকে বাঁচতে যেসব খাবার খাবেন জেনে নিন-

বেদানায় অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট রয়েছে ভরপুর পরিমাণে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেদানা কিন্তু ওষুধের মতো কাজ করে। একসঙ্গেই কোলেস্টেরলও বাড়তে দেয় না। কোলেস্টেরল আর উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকলে হার্টের সমস্যা কমবে।

হার্টের জন্য আরও একটি স্বাস্থ্যকর খাবার হল বিট। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, মিনারেলসে সমৃদ্ধ বিট রক্তচাপের মাত্রা কমায়। রক্ত চলাচল সচল রাখে। রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না। ফলে হার্টের কোনও সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।

হার্টের যত্ন নিতে বেরি অত্যন্ত উপকারী একটি ফল বেরি। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ছাড়াও এমন কিছু উপাদান রয়েছে বেরিতে, যেগুলি হার্টের খেয়াল রাখতে অব্যর্থ। ওষুধ তো খাবেনই, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ীও চলবেন। পাশাপাশি, এই পানীয়গুলিও খেতে হবে। উপকার পাবেন।

রসুন নিয়মিত খাওয়া শুরু করলে শরীরে আয়রন এবং ফলিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। যার প্রভাবে মস্তিষ্কের অন্দরে স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ কমে। রসুনে অ্যালিসিন নামক একটি পদার্থ বর্তমান যা এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে হার্টকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত রসুন খেলে দেহে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা কমে। উচ্চ রক্তচাপ হার্টের ক্ষতি করে। নিয়মিত রসুন খেলেও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাও কমে।

হার্টকে যদি দীর্ঘদিন সুস্থ রাখতে হয়, তা হলে প্রতিদিন একটি করে অ্যাভোকাডো খেতে পারেন।

এছাড়া দৈনন্দিন যেসব অভ্যাস বাড়িয়ে দিতে পারে হার্ট অ্যাটাক

অতিরিক্ত নুন খাওয়ার অভ্যাস: নুনে থাকে সোডিয়াম, যা বাড়িয়ে দিতে পারে রক্তচাপ। শুধু খাবারে পরিমাণ মতো নুন খাওয়াই সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট নয়। বাজারজাত নানা খাদ্যে অতিরিক্ত নুন থাকে, যা বাড়িয়ে দিতে পারে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা। তাই প্যাকেটজাত ভাজাভুজি, প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলাই ভাল।

মানসিক চাপ: মানসিক চাপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রক্তচাপ বৃদ্ধিরও সম্পর্ক রয়েছে। কোনও ব্যক্তি দীর্ঘ দিন ধরে মানসিক চাপে ভুগলে ক্ষতি হতে পারে রক্তবাহের। পাশাপাশি, মানসিক চাপে ভোগা মানুষ অনেক সময় নেশার দিকে ঝোঁকেন। এতেও ক্ষতি হয় সংবহনতন্ত্রের। বেড়ে যায় রক্তচাপ।

অনিদ্রা: যারা অনিদ্রার সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। পাশাপাশি, অনিদ্রা ও মানসিক চাপ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। ফলে অনিদ্রা বাড়িয়ে দিতে পারে মানসিক চাপ, যা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা ডেকে আনতে পারে।

মদ্যপান: অতিরিক্ত মদ্যপান করলে শরীরে ফ্যাট জমে যা রক্তবাহী শিরা ও ধমনীর দেওয়াল ছোট করে দেয়। ফলে রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা দেখা দেয়, যা রক্তচাপ বৃদ্ধি করে এবং হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

শরীরচর্চা না করা: শরীরচর্চা না করলেই শরীরে ফ্যাট জমতে শুরু করে। অতিরিক্ত ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা। তাই কেবল সুন্দর দেখানোর জন্যই নয়, শরীর চাঙ্গা রাখতেও নিয়ম করে শরীরচর্চা করতে হবে। ভারী শরীরচর্চা না করলেও কার্ডিয়ো, যোগাসনের মতো হালকা ব্যায়াম নিয়ম করে করলেও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা এড়ানো সম্ভব।

(ঢাকাটাইমস/৭ ফেব্রুয়ারি/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :