রক্তে কোলেস্টরল দূর করার কার্যকরী উপায়

ঠান্ডায় কোলেস্টেরলের সমস্যা বেড়ে যায়। শীতের মৌসুমে ভূরিভোজ সবচেয়ে বেশি হয়। শীতে কেক খাওয়ার পরিমাণও বেড়ে যায়। কেক, পেষ্ট্রির মতো খাবারে মাখনের পরিমাণ অনেক বেশি। যা কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। বেশির ভাগ কেকেরই প্রধান উপকরণ মাখন। কোলেস্টেরল থাকলে সেগুলো না খাওয়াই ভাল। এছাড়া বাইরের তেল-মশলাদার খাবার খাওয়ার ফলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে থাকে।
রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ হল বিপাকহার। এই বিপাকহার আবার প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা। তা ছাড়া শারীরিক কিছু পরিস্থিতির উপরেও বিপাকহারের ভালমন্দ নির্ভর করে। কারও যদি ডায়াবেটিস থাকে, তা হলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়লে তা রক্তবাহের মধ্যে সঞ্চিত হয়। রক্তবাহকে সরু ও শক্ত করে ফেলে। রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে রক্তচাপ বাড়ে এবং তার সঙ্গে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায় কয়েক গুণ।
কোলেস্টেরল এক ধরনের ফ্যাট বা চর্বি যা রক্তে উপস্থিত থাকে। কোলেস্টেরল দেহের অভ্যন্তরে অনেকগুলো কার্যক্রমে যেমন কোষকে নমনীয় রাখার জন্য এবং ভিটামিন ডি পরিবর্তনের জন্যও দায়ী। সচেতন থাকুন যে দুটি ধরনের কোলেস্টেরল রয়েছে, একটি হ'ল এলডিএল এবং অন্যটি এইচডিএল।
কোলেস্টেরল একটি ক্রনিক অসুখ। এই রোগে রক্তনালীতে জমতে থাকে প্লাক। সহজে বললে ময়লা বলা যায়। কোলেস্টেরলের তেমন একটা লক্ষণ থাকে না। তাই নিয়মিত টেস্ট করা দরকার।
কোলেস্টেরলের রং হয় হালকা হলুদ। হাই কোলেস্টেরল এক ধরনের ফ্যাট বা চর্বি যা রক্তে উপস্থিত থাকে। কোলেস্টেরল দেহের অভ্যন্তরে অনেকগুলো কার্যক্রমে যেমন কোষকে নমনীয় রাখার জন্য এবং ভিটামিন ডি পরিবর্তনের জন্যও দায়ী।
কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে অনেক সময়ে কমলা চাকা চাকা দেখা দেয় ত্বকে। সাধারণ র্যাশের মতো নয়। কিছুটা হলদেটে ভাব থাকে। বিশেষ করে চোখের উপরে দেখা যায় এই ধরনের ফোলা ভাব। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে মোমের মতো ফোলা ভাব দেখা দেয়। একটানা বেশিদিন এরকম থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
উচ্চ কোলেস্টেরল শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকর। উচ্চ কোলেস্টেরল বন্ধ করে দিতে পারে আপনার হার্টের রক্তনালি। রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে। এতে বাড়িয়ে দেয় স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি। শরীরে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে এই ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারেন।
কোলেস্টেরল বাড়ার কারণ কেবল খারাপ জীবনযাত্রা নয়, পারিবারিক ইতিহাসও এর জন্য দায়ী। বেশি শুয়ে বসে থাকার কারণে কোলেস্টেরল বাড়ে। এরপর কিছু অভ্যাস আছে যেমন ধূমপান, মদ্যপান, জর্দা সেবন- এসব কারণেও বাড়ে। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ, স্বাস্থ্যকর খাবার এবং শরীরচর্চার মাধ্যমে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। জেনে নিন প্রাকৃতিক উপায়ে রক্তে কোলেস্টেরল কমাবেন যেভাবে-
ধনে ও পুদিনা পাতার চাটনি
সবুজ রঙের চাটনি কিন্তু কোলেস্টেরল হ্রাস করতে সক্ষম। তাই এই চাটনি সম্পর্কে জানা সবার আগে জরুরি। এই চাটনির অন্যতম উপাদান হলো ধনে ও পুদিনা পাতার চাটনি। সবুজ চাটনি বানাতে যেসব উপকরণ লাগবে সেগুলো হলো- ধনে ৫০ গ্রাম, পুদিনা ২০ গ্রাম, কাঁচা মরিচ, রসুন ২০ গ্রাম, তিসির তেল, ইসবগুল ১৫ গ্রাম, লবণ প্রয়োজন মতো, লেবু ১০ এমএল ও পানি। এই কয়েকটি উপাদান নিয়ে লেগে পড়ুন চাটনি তৈরির কাজে। কোলেস্টেরলকে মাত দিতে পারবেন অনায়াসে। তাই এই সবকটি উপকরণ জোগার করে আনুন। তারপর তৈরির কৌশল জেনে নিন।
প্রথমে সব সামগ্রী এক জায়গায় রাখুন। তারপর মিক্সারে ঘুরিয়ে নিন। সবচেয়ে ভালো হয় এ সব উপাদান বেটে চাটনি তৈরি করে নিতে পারলে। এতে শরীর ভালো থাকবে।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, এই দুটি উপাদান কোলেস্টেরলের সমস্যা সহজে কমিয়ে ফেলতে পারে। এই সবুজ রঙের পাতায় থাকে ক্লোরোফিল। এই খাবার কিন্তু পেটের সমস্যার সমাধান করতে পারে। এ ছাড়া এতে রয়েছে ফাইবার। এই উপাদান কিন্তু কোলেস্টেরল হু হু করে শরীর থেকে বের করে দিতে পারে। তাই চেষ্টা করুন এই দুটি পাতা নিয়মিত মুখে তুলে নেয়ার।
পালং শাক এবং শসা
জরুরি বেশ কিছু অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, ভিটামিন এ, সি এবং কে রয়েছে পালং শাক এবং শসা মিশ্রিত পানীয়ে। রক্তে ‘খারাপ’ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে এই পানীয়। শরীরে ইলেট্রলাইট-এর ভারসাম্য বজায় রাখতে জলখাবারে রাখা যেতেই পারে এই রস।
রসুন ভালো কাজ করে
রসুন অনেক রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হতো। এটি কোলেস্টেরল হ্রাস করার একটি দুর্দান্ত উপায়। তবে এর জন্য আপনাকে সকালে বা রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এটি কাঁচা খেতে হবে। আসলে, এতে অ্যালিসনের উপস্থিত রয়েছে, যা মোট এলডিএল কোলেস্টেরলের পরিমাণ হ্রাস করতে সক্ষম।
হলুদ
হলুদ খারাপ কোলেস্টেরল হ্রাস করতেও কাজ করে। আসলে, হলুদের ভিতরে থাকা উপাদানগুলো রক্তের ধমনী থেকে কোলেস্টেরল অপসারণ করতে কাজ করে। এর জন্য আপনি হলুদের দুধ পান করতে পারেন। অথবা আপনি সকালে গরম পানির সঙ্গে আধা চা চামচ হলুদ গুঁড়া খেতে পারেন।
গ্রিন-টি
অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ গ্রিন-টিতে থাকা ‘ক্যাটাচিন’ শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ১২ সপ্তাহ ধরে নিয়মিত গ্রিন-টি খেলে শরীরে কম ঘনত্বের কোলেস্টেরল লাইপোপ্রোটিনের মাত্রা প্রায় ১৬ শতাংশ কমে যায়।
ধনে
দেহে এলডিএল নামক একধরনের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল থাকে, যা দেহের শিরা-উপশিরার মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডে রক্ত চলাচলে সমস্যা বাড়ায়। এর কারণে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ধনে এই ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়। এইচডিএলর মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে শরীর সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে এই ধনে।
আমলকি
টক আর তেতো স্বাদে ভরা আমলকি গুণে-মানে অতুলনীয়। ফলটি শুধু ভিটামিন আর খনিজ উপাদানেই ভরপুর নয়, বিভিন্ন রোগব্যাধি দূর করতেও অসাধারণ গুণ রয়েছে। আমলার উপকারিতা কেবল চুলেই নয় হৃদয়কেও দেখা যায়। আসলে আমলার ভিতরে আমলা এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান পাওয়া যায়, যা কোলেস্টেরল কমাতে কাজ করে। আপনি যদি চান কাঁচা খান, বা এক চামচ গুঁড়ো হালকা গরম পানির সঙ্গে পান করুন। এটি আপনার হার্টের সমস্যা থেকে রক্ষা করবে।
আপেল সিডার ভিনেগার
আপেল সিডার ভিনেগার কোলেস্টেরলসহ অনেক সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম। এর জন্য এক চামচ আপেল ভিনিগার নিয়ে এক গ্লাস কুসুম গরম জলে ভালো করে মিশিয়ে পান করুন। এটি আপনার কোলেস্টেরলের সমস্যাও সমাধান করবে এবং আপনি সুস্থ থাকবেন।
টমেটোর জুস
টমেটো লাইকোপেন-সমৃদ্ধ। এই উপাদানটি আপনার লিপিডের মাত্রা বাড়ায় এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। টমেটোর রসে আছে কোলেস্টেরল কমানোর ফাইবার এবং নিয়াসিন।
আপেল, বিট এবং গাজর
সকালে ঘুম থেকে উঠে নিয়মিত খেতে পারেন আপেল, বিট এবং গাজর দিয়ে তৈরি বিশেষ এই পানীয়। বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন সি, ফাইবার, আয়রন এবং ম্যাঙ্গানিজ়ে সমৃদ্ধ এই পানীয় শুধু রোগ প্রতিরোধ কিংবা কোলেস্টেরল নয়, চুল এবং ত্বকের যত্নেও দারুণ কাজ করে।
ওট্স
ওট্স ফাইবারে ভরপুর। কোলেস্টেরল রোগীদের জন্য ডায়েটে ফাইবার রাখা জরুরি। রোজের ডায়েটে ওটস রাখলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে ও ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এটি লিপিড প্রোফাইল নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে কোলেস্টেরল লেভেল ঠিক রাখতেও ওটস খুব কার্যকর। কোলেস্টেরলের রোগীদের ওটস খেতে বলেন চিকিৎসকরা। কলা মিশিয়ে খাওয়া যায়। ওটসে দ্রবণীয় ফাইবার রয়েছে। শিরায় জমার আগেই মলের মাধ্যমে শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল বের করে দেয়।
তৈলাক্ত মাছ
স্যামন, টুনা, সার্ডিন মাছ ভাল ফ্যাটের উৎস। এই প্রজাতির মাছগুলো আসলে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। এগুলো শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে বিস্ময়করভাবে কাজ করে।
দ্রবণীয় ফল
দ্রবণীয় ফাইবার সমৃদ্ধ অনেক ধরনের ফল রয়েছে যা শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এর মধ্যে আপেল, আঙুর, সাইট্রাস ফল এবং স্ট্রবেরি অন্যতম। এগুলো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্যের জন্যও সমধিক পরিচিত।
বাদাম
অস্বাস্থ্যকর চর্বি বেছে নেওয়ার পরিবর্তে বাদাম, বীজজাতীয় খাদ্য, অ্যাভোক্যাডো এবং আরও অনেক কিছুর মতো স্বাস্থ্যকর চর্বি জাতীয় খাবার বেছে নিতে হবে।
অলিভ অয়েল
উদ্ভিজ্জ তেলের তুলনায় অলিভ ওয়েলে ওলেয়িক অ্যাসিড, লিনোলেয়িক অ্যাসিড এবং পামিটিক অ্যাসিডের মতো মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি পরিমাণে থাকে। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল হল সবচেয়ে কম প্রক্রিয়াজাত অলিভ অয়েল।
(ঢাকাটাইমস/১১ ফেব্রুয়ারি/আরজেড)

মন্তব্য করুন