সরকার পতনের আন্দোলনে বিএনপির ধীরে চলো নীতি

জাহিদ বিপ্লব, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:০৮| আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:২৩
অ- অ+

বিরোধীদলহীন নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে গতানুগতিক কর্মসূচি দিয়ে নেতাকর্মীদের মনোবল ধরে রাখার চেষ্টা করছে বিএনপি। নির্বাচনের পর কালো পতাকা মিছিলসহ কয়েকটি কর্মসূচিও পালন করে দলটি। রবিবারও ছয়দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় দলটির পক্ষ থেকে। তবে, এসব কর্মসূচি সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে দাবি করলেও তা গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে।

ঘোষিত এসব কর্মসূচির বাইরে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলছেন দলটির নেতারা। তারা বলছেন, সরকারবিরোধী কঠোর কর্মসূচি বলতে নির্বাচনের আগে দেওয়া হরতাল-অবরোধ বা বড় কর্মসূচি দিচ্ছে না বিএনপি। এর কারণ হিসেবে নেতারা বলছেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা। এরপর রমজান শুরু। আর রোজার ঈদের পরই এইচএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষার কিছুদিন পর আবার ঈদুল আজহা। তাই ইচ্ছা থাকলেও কোরবানি ঈদের আগে সরকারবিরোধী কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বিএনপির।

মূলত, ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এই তিন মাসে দৃশ্যমান বড় কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছে না দলটি। এই সময়টাতে তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বগতি, মানুষের অভাব, নাগরিক হয়রানির ঘটনাসহ জনসম্পৃক্ত বিষয়গুলো নিয়ে মাঠে থাকবে। এই সময়ে নতুন কোনো ঘটনা সামনে এলে তা নিয়ে তাৎক্ষণিক কর্মসূচি দেবে। ফাঁকে ফাঁকে ইস্যুভিত্তিক কিছু কর্মসূচি থাকতে পারে। তবে সেগুলো বড় ধরনের কিছু নয়।

অবশ্য বিএনপির নীতিনির্ধারকদের দাবি, দলে নেতৃত্বের দুর্বলতা নেই, দল আন্দোলনেই আছে। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমরা তো কর্মসূচির মধ্যেই আছি। কোনো দিবস বা বন্ধের কারণে সরকারবিরোধী আন্দোলন স্তব্ধ থাকতে পারে না। আন্দোলন চলমান আছে। আর আন্দোলনের বিস্ফোরণ কোনো ঘোষণা দিয়ে আসে না।

এদিকে, রবিবার ছয়দিনের জনসম্পৃক্ততামূলক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ মঙ্গলবার ও কাল বুধবার (১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি) দেশের সব মহানগরে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ এবং শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যার প্রতিবাদ ও তাদের স্মরণে সব মসজিদে দোয়া মাহফিল হবে। এছাড়া শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সব জেলা সদরে লিফলেট বিতরণ এবং ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি সব উপজেলা এবং ইউনিয়নে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করা হবে।

এসব কর্মসূচির মাধ্যমে দ্রব্যমূলের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি ও মানুষের জীবন-যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, বেকারত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যখাতের রুগ্ণ দশা, ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতা ও অপশাসনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হবে। এছাড়া সীমান্তে বিজিবি সদস্যসহ বেসামরিক নাগরিককে হত্যা, মিয়ানমার বাহিনীর গুলিতে বাংলাদেশি নিহতের ঘটনায় সরকারের নতজানু নীতির বিষয়টিও প্রচার করা হবে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সাধারণ মানুষের হাতে লিফলেট তুলে দেবেন দলের নেতারা।

পরিস্থিতি বিবেচনায় বিএনপি ধৈর্য সহকারে সতর্কতার সঙ্গে সামনে এগোনোয় কৌশলী হচ্ছে। একতরফা নির্বাচনের পর ঝিমিয়ে পড়া তৃণমূল নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে নিয়মিত কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে দলটির হাইকমান্ড। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য ঢাকা টাইমসকে বলেন, অস্বীকার করার কিছু নেই যে, নেতাকর্মীরা কিছুটা হতাশ। তবে, দেশবাসী এই ডামি নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের পক্ষে রায় দিয়েছেন। তবে, দীর্ঘ জেল-জুলুমে অনেকটা বিপর্যস্ত নেতাকর্মীদের জীবন। বছরের পর বছর ফেরারি জীবন-যাপন করছেন। সেদিক থেকে চিন্তা করে, তাদের মনোবল ধরে রাখার জন্য কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে বিএনপি। হয়তো, বিভিন্ন কারণে আগামী কোরবানি ঈদ পর্যন্ত আমাদের কঠোর কর্মসূচি অব্যাহত রাখা যাবে না।

দলটির নেতারা বলছেন, কঠোর কর্মসূচি দিলে নতুন করে গ্রেপ্তার শুরু হতে পারে। কেননা, গত বছরের শুরুতে দল বড় শো-ডাউনের মধ্য দিয়ে আন্দোলনের বার্তা দিয়েছিল। কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও আশা সঞ্চারিত হয়েছিল। কিন্তু গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহা সমাবেশে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ও এর পরের পরিস্থিতি সব কিছু পাল্টে দেয়। ওই সমাবেশে পুলিশকে পিটিয়ে মারার অভিযোগে দলটির মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তার হন। দলীয় কার্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। দেশজুড়ে নেতাকর্মীরা মামলা-গ্রেপ্তার আতঙ্কে বাড়িছাড়া হয়ে পড়েন।

বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের এক শীর্ষনেতা ঢাকা টাইমসকে বলেন, নির্বাচন শেষ হলেও নেতাকর্মীরা এখনো আশাবাদী বর্তমান সরকার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারবে না। আন্দোলন চলতে থাকলে আগামী ছয় মাস বা এক বছরের মধ্যে ফলাফলও ঘরে আনা সম্ভব। সেক্ষেত্রে অন্যদিকে মনোযোগ দেওয়ার অর্থ হলো আন্দোলনকে ভেস্তে দেওয়া।

দলটির এক ভাইস চেয়ারম্যান ঢাকা টাইমসকে বলেন, দলের মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের এখনো মুক্তি মেলেনি। নেতাদের মুক্তির জন্য আইনি লড়াইয়ের দিকে নজর দিচ্ছে দল। সিনিয়র নেতাদের মুক্তির পর বড় কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা করবে দলটি। এছাড়া মার্চে পবিত্র রমজান শুরু হবে। রমজানের মধ্যে বড় কর্মসূচি দেওয়া সম্ভব নয়। রমজানের পর সমাবেশের মতো বড় কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা করবে বিএনপি।

বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক ঢাকা টাইমসকে বলেন, দেড়যুগ ধরে মানুষের অধিকার ও বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার আন্দোলন করছে বিএনপি। কোনো কোনো জায়গায় সফল হয়েছে আবার কোথায়ও হয়তো ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপি বা কর্মীরা হতাশ নয়। জনগণ আমাদের সমর্থন দিয়েছে। তবে, রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে আমরা হেরেছি। তিনি বলেন, বর্তমান নয়া কিসিমের (নতুন ধরনের) সংসদের বিরুদ্ধে আমরা কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছি। ২৮ অক্টোবরের পর লক্ষাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। জেলখানায় মারা গেছে ১৩ জন। এ আন্দোলন ব্যর্থ যেতে পারে না। আমরা জন সম্পৃক্তমূলক কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছি।

(ঢাকাটাইমস/১২ফেব্রুয়ারি/জেবি/এআর/জেডএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বগুড়ায় সারজিসের উপস্থিতিতে এনসিপির সমাবেশে দুই গ্রুপের মারামারি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
বাংলাদেশে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আগ্রহী চীন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ২০০ কেজি ওজনের বোমা পাওয়া গেল মুন্সীগঞ্জে, নিষ্ক্রিয় করল সিটিটিসি
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা