কিডনি-লিভার সুস্থ রাখে ভেষজ লাউ

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:১৬

বাঙালির জনপ্রিয় সবজির অন্যতম লাউ, যেটি এখন প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এই সবজি ঝোল, নিরামিষ, ভাজি, ভর্তা কিংবা সালাদ হিসেবে খাওয়া যায়। লাউয়ের খোসা, শাঁস, পাতা সবই খাওয়া যায়। লাউ একটি চমৎকার প্রিবায়োটিক যার বৈজ্ঞানিক নাম লেজেনেরিয়া সিকেরারিয়া। লাউ পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো একটি সবজি। যার জন্ম হয়েছিল দূর আফ্রিকাতে। মানব স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত অ্যামিনো অ্যাসিড এবং পুষ্টি রয়েছে লাউয়ে যা একটি কার্ডিওটনিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটিতে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করার এবং মূত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাই এর রসও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।

পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, আমাদের অতি পরিচিত লাউয়ের রয়েছে হাজারো গুণ। এতে এমন কিছু ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার রয়েছে যা শরীরের হাল-হকিকত বদলে দেয়ার কাজে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এমনকী একাধিক ক্রনিক রোগের ফাঁদ এড়ানোর কাজেও এই সবজির জুড়ি মেলা ভার। তাই তো সুস্থ থাকার ইচ্ছা থাকলে ডায়েটে লাউকে জায়গা করে দিতেই হবে।

প্রতি ১০০ গ্রাম লাউয়ে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট ২.৫ গ্রাম, প্রোটিন ০.২ গ্রাম, ফ্যাট ০.৬ গ্রাম, ভিটামিন সি ৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১০ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৮৭ মিলিগ্রাম, নিকোটিনিক অ্যাসিড ০.২ মিলিগ্রাম। এ ছাড়া এতে রয়েছে খনিজ লবণ, ভিটামিন বি-১, বি-২, আয়রনসহ আরও নানা উপাদান।

কম ক্যালরিসম্পন্ন লাউয়ের ৯৬ শতাংশ পানি। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার। তাই লাউ খেলে অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে। এ কারণে লাউ ওজন কমাতে সহায়ক। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ।

লাউয়ে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান, পানি ও উপকারী ফাইবার আছে। ফলে লাউ একই সঙ্গে সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর সবজি ও ফল।

বিজ্ঞান বলছে, লাউ মোটেও সবজি নয়, লাউ হল ফল। ফল তাকেই বলে যা ফুল থেকে তৈরি হয়। লাউও ফুল থেকেই সৃষ্টি হয়। ফল তাকেই বলে যার মধ্যে বীজ থাকে। লাউয়ের মধ্যেও বীজ থাকে। তাই লাউ ফল, সবজি নয়। লাউ কেবল খেতেই সুস্বাদু নয়, পুষ্টিগুণের দিক থেকেও এর কদর বেশ। জেনে নিন নিয়মিত লাউ খাওয়া কেন জরুরি সেটা।

কিডনি ভালো রাখে

প্রস্রাবের সংক্রমণজনিত সমস্যা দূর হয়। কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। লাউয়ে থাকা পটাশিয়াম কিডনির স্বাস্থ্যেরও খেয়াল রাখে। লাউ এর মূল উপাদান পানি। তাই লাউ খেলে শরীর ঠাণ্ডা থাকে। কিডনি ভালো রাখতে চাইলে লাউ তরকারী আপনার জন্য অসাধারণ খাবার হবে। কারণ গরমের কারণে শরীর থেকে যে পানি বের হয়ে যায় তার অনেকটাই পূরণ করতে পারে লাউ। তাই বেশি বেশি লাউ তরকারী গ্রহণ করুন।

লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী

একটি বয়সের পর চিকিৎসকরা বেশি করে লাউ খেতে বলেন। অনেক সময়ে বয়সজনিত কারণে লিভারের কার্যক্ষমতা কমে আসলে হজমের সমস্যা হতে পারে। বার বার হজমের ওষুধ খাওয়ার চেয়ে লাউ খেলে হজমের গোলমাল হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার নিয়ে খুবই সতর্ক থাকতে হয়। তাদের এমন খাবারে মানা থাকে যা রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়। সেই দিক থেকে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য দারুণ খাবার লাউ। প্রাণীর উপর করা গবেষণায় দেখা গেছে, ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকরী লাউ। এতে রয়েছে অ্যান্টি ডায়াবেটিক নানা উপাদান। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত লাউ খেতে পারেন।

কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে

অতিরিক্ত তেল-মশলা যুক্ত খাবার খাওয়া এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের ফলে রক্তে চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘ দিন ধরে সেই চর্বিগুলি রক্তবাহিকার দেওয়ালে আটকে, রক্ত চলাচলের গতি স্লথ করে দেয়। ফলে হার্টে রক্ত সঞ্চালনের তারতম্য ঘটে। লাউ খেলে রক্তে ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে। যা এই চর্বিগুলিকে সরিয়ে, রক্তবাহিকার গতিপথ সচল রাখে।

ক্যানসারের আশঙ্কা কমায়​

ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অসুখ কিন্তু রোগীর জীবনে বিরাট জটিলতা ডেকে আনে। গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যানসার প্রতিরোধে লাউ অত্যন্ত কার্যকরী। এতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা ক্যানসার কোষের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। এছাড়া এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সাইটোটক্সিক গুণ সম্পূর্ণ। তাই নিয়মিত লাউ খেলে ক্যানসারকে দূরে রাখা যায়।

ওজন কমাতে পারে​

​ওজন বেশি থাকা বা ওবেসিটি কিন্তু বহু সমস্যার কারণ। গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, হার্টের অসুখ, স্ট্রোকের মতো প্রাণঘাতী সমস্যার কারণ হতে পারে অতিরিক্ত ওজন। তাই ওজন কমাতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারে লাউ। এই সবজিতে ক্যালোরির মাত্রা প্রায় নেই বললেই চলে। লাউয়ে থাকা বিভিন্ন উপাদান বিপাকের হার বাড়াতে পারে। তাই ওজনও কমে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে​

​কোষ্ঠকাঠিন্য এক গুরুতর অসুখ। এই অসুখে আক্রান্তের পেট পরিষ্কার হয় না। এ প্রসঙ্গে ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক গবেষণায় বলা হয়েছে, লাউ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমে। এতে থাকা ফাইবার মল নরম করতে সাহায্য করে। এছাড়া গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে লাউয়ের কোনো জুড়ি নেই। তাই নিয়মিত পাতে থাকুক লাউ।

মায়ের দুধ বাড়ায়

লাউয়ে পানি বেশি থাকায় এটি মায়ের দুধ তৈরি করতে ও বাড়াতে কাজ করে। যেসব মায়ের দুধ শিশুরা কম পায়, তারা নিয়মিত লাউ খেলে দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়।

শিশুর নিরাপদ খাবার

বাচ্চার ৬ মাস হলেই মায়েদের চিন্তা কি খাওয়াবে। লাউকে সিদ্ধ করে চটকে ৬ মাসের পর থেকেই শিশুকে দেওয়া যাবে। কারণ এতে আছে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, লৌহ, জিংক, ফসফরাস যা শিশুর বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশে দারুণ কাজ করে।

হার্টের জন্য ভালো

লাউয়ে কোলেস্টেরলের পরিমাণ শূন্য যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এতে বিদ্যমান ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ হার্টের জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর। তাছাড়া রক্তের কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে লাউ।

শরীর ঠান্ডা করে

গরমের কারণে বা ঘামের সময় আমাদের শরীর থেকে যে পানি বের হয়ে যায় লাউ সেটার অনেকটাই পূরণ করে ফেলে। লাউয়ের মূল উপাদান হলো পানি (৯৬%), তাই লাউ খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। গরমের সময় লাউ খাওয়া উপকারী বিশেষ করে যারা প্রখর সূর্যতাপে কাজ করেন তাদের হিটস্ট্রোক প্রতিরোধে সাহায্য করে লাউ।

ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে

লাউ পাতা রান্না বা ভর্তা করে খেলে মস্তিষ্ককে ঠান্ডা রাখে এবং ঘুমের সমস্যা-সমাধানে সাহায্য করে। এই সবজি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ইনসমনিয়া বা নিদ্রাহীনতা দূর করে পরিপূর্ণ ঘুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মানসিক চাপ কমায়

লাউয়ের বেশিরভাগ অংশ পানি দ্বারা পূর্ণ যা শরীরের ওপর তার শীতল প্রভাব ফেলে। ফলে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে লাউ।

ত্বকের জন্য উপকারী

ভিটামিন সি এবং জিঙ্কের গুণে ভরপুর লাউ। লাউ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে পেট পরিষ্কার রাখে, ফলে মুখে ব্রণ ওঠার প্রবণতাও কমে যায় অনেকটাই। ত্বকের ভেতর থেকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে লাউ, যাদের ত্বক তৈলাক্ত তাদের ত্বকের তৈলাক্ততার সমস্যা অনেকটাই কমে যায় লাউ খেলে। অল্প বয়সে ত্বকে বলিরেখা দেখতে না চাইলে নিয়মিত লাউয়ের রস খেতে হবে। চোখের তলার ফোলা ভাব বা ‘পাফি আইজ-এর সমস্যা থাকলে লাউয়ের রস খেতে পারেন। চোখের তলার কালি দূর করতেও সাহায্য করে এটি। ত্বক টান টান রাখে। সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির প্রভাবে ত্বকের টান টান ভাব নষ্ট হয়। অল্প বয়সে ত্বকের ‘ইলাস্টিসিটি নষ্ট হলে মুখে বয়সের ছাপ পড়ে। এই ধরনের সমস্যা দূর করতে পারে লাউ।

(ঢাকাটাইমস/২৬ ফেব্রুয়ারি/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :