‘দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে’ ননক্যাডার পুলিশের

রুদ্র রাসেল ও হাসান মেহেদী
| আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:১৩ | প্রকাশিত : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

*একযুগেও দেওয়া হয়নি পদোন্নতির র‌্যাঙ্ক-ব্যাজ, পুলিশ সপ্তাহে বাস্তবায়ন চান তারা

* ১০ বছর ধরে একই পদে হাজার পরিদর্শক, ১০-১২ বছর হলে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার কথা থাকলেও পাচ্ছেন না, পদোন্নতির আশায় ১৫ হাজার এসআই


পুলিশের নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের ্যাঙ্ক-ব্যাজ (পিপস) দেয়ার আশ্বাসের একযুগেও তা আলোর মুখ দেখেনি। দীর্ঘ ১২বছর আগে পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন হলেও বাস্তবায়ন নেই। নিয়ে অসন্তোষ চরমে পৌঁছালে গেল বছর নভেম্বরে কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি দেন ননক্যাডার পুলিশ সদস্যরা। এরপর তাদের নেতাদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করে ওই মাসেই পদোন্নতির ্যাঙ্ক-ব্যাজসহ আনুসাঙ্গিক সুবিধা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেদিন সিরিজ বৈঠকগুলোতে অংশ নেওয়া নন ক্যাডার পুলিশ সদস্যদের প্রতিনিধিদের আশ্বাস দিয়ে কাজে ফেরান। কিন্তু প্রায় তিন মাস কাটতে যাচ্ছে। মঙ্গলবার থেকে শুরু পুলিশ সপ্তাহ। তবে এই পুলিশ সপ্তাহেও কোনো সুখবরের আভাস না পেয়ে আবার দানা বেধেছে অসন্তোষ। বিষয়ে চূড়ান্ত সুরাহা চান ননক্যাডার পুলিশ সদস্যরা। এটা তাদের প্রাণের দাবি, একান্ত চাওয়া। তারা বলছেন, ‘পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।

ঢাকা টাইমসের সঙ্গে আলাপকালে ননক্যাডার পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি জানান।

বর্তমানে পুলিশে নন-ক্যাডার সদস্য লাখ ৯৯ হাজার ৫২৮ জন। ১০ হাজারের বেশি ইন্সপেক্টর (পরিদর্শক) রয়েছেন। তাদের মধ্যে বড় একটি সংখ্যা সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতিযোগ্য। ২৪ হাজার ৪২৯ জন এসআই সার্জেন্টের মধ্যে বিপুলসংখ্যক সদস্য রয়েছেন পরিদর্শক পদে পদোন্নতিযোগ্য। অনেকের চাকরির বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও পদোন্নতির মর্যাদা সুবিধা পাননি।

বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা সোমবার রাতে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কয়েক দফায় পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের কাছে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়েও কোন সুরাহা হয়নি। শুধুই আশ্বাস দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘যতদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই বিষয় উপস্থাপন না হবে ততদিন এটা ঝুলেই থাকবে। আর আমরা নানা বাধায় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত যেতেও পারছি না।

বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পুলিশে ১০হাজারের বেশি পরিদর্শক কর্মরত আছেন। তাদের মধ্যে হাজারের মত পরিদর্শক ১০বছর ধরে একই পদে কর্মরত। এছাড়া পরিদর্শক হিসেবে ১২-২০ বছর কর্মরত অনেক পরিদর্শকও পদোন্নতি পাননি।

এদিকে পরিদর্শক হিসেবে একই পদে ১৩বছর কর্মরত আছেন বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশনের সভাপতি ফরমান আলী, সাধারন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কাজী মাইনুল ইসলাম। সংগঠনটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ সিরাজুল ইসলাম ১৪ বছর পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করছেন। সংগঠনের নেতৃত্ব দেওয়া পুলিশ সদস্যদেরই যখন পদোন্নতি হচ্ছে না, সেখানে অন্যরা এই পদোন্নতি নিয়ে কতটুকু আশায় বুক বাঁধতে পারেন- প্রশ্নও উঠেছে।

পুলিশের নন ক্যাডার সদস্যদের পদোন্নতির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বরিশাল রেঞ্জে সর্বপ্রথম এসআই থেকে ডিআইজি হন গাজী আব্দুর রহমান। ডিএমপির সাবেক কমিশনার কুতুবউদ্দিন এসআই থেকে ডিএমপি কমিশনার হন। এসআই থেকে এসপি হয়েছিলেন মো. বেলায়েত হোসেনও। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাহার আকন্দও এসআই থেকে অতিরিক্ত ডিআইজি হয়েছিলেন। এরপর আর তেমন কেউই পদন্নতি পাননি।

বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কাজী মাইনুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা দফায় দফায় উর্ধ্বতন মহলে যাচ্ছি আমাদের নন ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়টি নিয়ে। তবে এখন পর্যন্ত কোন াল ফলাফল পাইনি। একই পদে ১০-১২বছর হলে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার কথা থাকলেও আমরা সেটা থেকেও বঞ্চিত। আমরা আশা করছি সরকার আমাদের বিষয়টি অতি শীঘ্রই সমাধান করবেন।

ডিএমপিতে কর্মরত বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের একজন নেতা ঢাকা টাইমসকে বলেন, একই পদে আমার চাকরির বয়স ১২ বছর। এখন পর্যন্ত আমি কোনো পদোন্নতি বা সুযোগ সুবিধা পাইনি। তিন মাস আগে সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলাম আমাদের পদোন্নতির দাবিগুলো নিয়ে। তার বাসায় আমরা মন্ত্রী মহোদয়কে অনেকভাবে বুঝিয়েছি বিষয়টি সমাধান করার জন্য। এসময় তিনি একটা কমিটিও গঠন করেছিলেন। সেই কমিটির একটা মিটিংও হয়েছে। তবে আমাদের ফলাফল শুন্য। আমাদের ্যাঙ্ক-ব্যাজ বা পদোন্নতির বিষয়ে কোন ভাল খবর দেওয়া হয়নি।

গত বছর পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), স্বরাষ্ট্র সচিব, উপসচিব যুগ্মসচিব এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে নন-ক্যাডার পুলিশ কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ ১০ সদস্যের একটি দল। ওই বৈঠকে কোনো সুরাহা না হওয়ায় কর্মবিরতিরও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তারা। পরে তাদের বলা হয় ্যাঙ্ক-ব্যাজ সকল সুযোগ সুবিধাদি পূরন করা হবে। এছাড়া অন্যান্য সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয় নন ক্যাডারদের। এর আগে গেল বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পরামর্শে দাবির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন। তবে কথা রাখেনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

এবার পুলিশ সপ্তাহেও তাদের পদোন্নতির র‌্যাঙ্ক-ব্যাজ বিষয়ে কোনো সমাধান না হওয়ায় বেশ অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। পুলিশ সপ্তাহে এর সমাধান না হলে অসন্তোষ বাড়তে পারে বলেও মনে করছেন পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক পরিদর্শক ঢাকা টাইমসকে বলেন, চাকরির বয়স বাড়ছে ঠিকই তবে আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না। সরকার এত উন্নয়ন করছে, তবে আমাদের নন-ক্যাডারদের জন্য শুধু আশ্বাসই পেয়ে যাচ্ছি। সেই আশ্বাসও এখন একযুগ পার করলো।

ডিএমপির একটি থানায় কর্মরত একজন পরিদর্শক বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে নন ক্যাডাররা কাজ করে যাচ্ছেন দিনরাত। কাজ করি আমরা আর ফল ভোগ করে যাচ্ছে আমাদের সিনিয়ররা। আমাদের বিষয়গুলো দেখার মত কেউই নেই। আর এই দেশে সব দোষ এই নন ক্যাডারদের ঘাড়েই ওঠে। আমাদের বিষয়ে সিনিয়ররাই সরকারের কাছে পৌছায় না। একদিন দেখবেন এইসব বিষয় নিয়ে পুলিশ আন্দোলনে নেমেছে।

বিএমপি পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘প্রায় ১৫ শতাধিক এসআই পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যের পদোন্নতি ঝুলে আছে। সমস্যা সমাধান করার আশ্বাস দেওয়া হলেও এবারও কেন তা হচ্ছে না। আমাদের সিনিয়রগনদের (ক্যাডার) নিয়মিত সকল সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়। পদ না থাকলেও সুপার নিউমারারি পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি দেওয়া হয়। মুহূর্তেই নিশ্চিত করা হয় সব সুযোগ-সুবিধা। শুধু আমাদের বেলায়ই তা হয় না। এই অবহেলা আর মানবো না। সিদ্ধান্ত আসতে হবে এই পুলিশ সপ্তাহেই।

অন্তত ৪০ জন পুলিশ ইন্সপেক্টর সাব-ইন্সপেক্টরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেতন স্কেলের পরিবর্তনতো দুরের কথা, ইন্সপেক্টর পদে অনেকেরই ১৫-২৫ বছর হলেও পদোন্নতি নেই। দেশের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে সমহারে পদোন্নতি সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়। কিন্তু একমাত্র বাংলাদেশ পুলিশে একই গ্রেডে ক্যাডার পদে পদোন্নতি নিতে হয়, যা নিয়ম বহির্ভূত।

সরকার ২০১২ সালের ৩০ জুলাই পুলিশ পরিদর্শক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডার, আর এসআই ট্রাফিক সার্জেন্টের পদকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করে পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তখন থেকে পরিদর্শকদের দুই কাঁধে দুটি করে মোট চারটি র‌্যাঙ্ক-ব্যাজ (পিপস) এবং এসআই ট্রাফিক সার্জেন্টদের দুই কাঁধে একটি করে দুটি পিপস পরার কথা। কিন্তু গত ১১ বছরেও তা বাস্তাবায়ন হয়নি।

অন্যদিকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে কমর্রত নন-ক্যাডার (নবম গ্রেড) কর্মকর্তারা ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি পান। কিন্তু পুলিশের ক্ষেত্রে নবম গ্রেডের কর্মকর্তারা পদোন্নতির পরও নবম গ্রেডে থেকে যান। এমনকি পদোন্নতির পরেও ১১ বছর পদোন্নতিপ্রাপ্ত পদ অনুযায়ী প্রাপ্য সরকারি সুবিধাদি থেকেও বঞ্চিত তারা।

২০১২ সালের আগে পুলিশ পরিদর্শক পদটি ছিল দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদার। এসআই ট্রাফিক সার্জেন্ট পদ ছিল তৃতীয় শ্রেণির পদমর্যাদার।

এদিকে নন ক্যাডার পুলিশ সদস্যদের প্রতিনিধিরা বলছেন, ‘এই পুলিশ সপ্তাহে আমরা নন-ক্যাডাররা পদোন্নতির র‌্যাঙ্ক-ব্যাজ সকল সুযোগ সুবিধা না পেলে কর্মবিরতির ঘোষনাও আসতে পারে।

(ঢাকাটাইমস/২৬ফেব্রুয়ারি/এইচএম/আরআর/কেএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

২১ মে ১৫৭ উপজেলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা

প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন শহীদ স্কোয়াড্রন লিডার জাওয়াদের পরিবার

সব জেলায় বইছে তাপপ্রবাহ, শনিবার থেকে বৃষ্টির আভাস

‘নো হেলমেট, নো ফুয়েল’ নীতি বাস্তবায়নে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ

জেন্ডার সমতা-নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা: মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের প্রশংসা জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারির

উপজেলা নয়, এখন থেকে জেলাভিত্তিক হবে উন্নয়ন পরিকল্পনা

বৈদেশিক ঋণের প্রকল্প দ্রুত শেষ করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

উন্নত বিশ্বকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী

ডেঙ্গু রোগীর বাড়িসহ আশপাশের এলাকায় সচেতনতা জোরদারের তাগিদ

২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন, কোন খাতে কত বরাদ্দ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :