‘গলায় কিন্তু রশি পড়বে আপনার’ সাংবাদিককে এসিল্যান্ডের হুমকি

সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরাফাত হোসেন।

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরাফাত হোসেন গলায় রশি পরানোর হুমকি দিয়েছেন শাহীন হোসেন নামে এক সাংবাদিককে।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ওই সাংবাদিককে মুঠোফোনে এ হুমকি দেন এসিল্যান্ড।

শাহীন হোসেন তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থানার নগরঘাটা ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকার প্রতিনিধি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরঘাটা ভূমি অফিসের পিওন সুইটি খাতুন মিউটেশন করে দেওয়ার কথা বলে বাশার নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে চার হাজার টাকা নেন। তবে দীর্ঘদিন ঘুরানোর পরেও জমির মিউটেশন করে দেয়নি সুইটি খাতুন। এই বিষয়ে তথ্য নেওয়ার জন্য গত সপ্তাহে নগরঘাটা ভূমি অফিসে যান সাংবাদিক শাহিন হোসেন। অফিসে গিয়ে সুইটি খাতুনকে দেখতে না পেয়ে অন্য স্টাফের মাধ্যমে জানতে পারেন বেশ কয়েকদিন অফিসে আসেন না সুইটি। অফিসিয়াল কোনো ছুটির আবেদন না করে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন এই বিষয়টি সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) জানান ওই সাংবাদিক। জানানোর দুইদিন পর বৃহস্পতিবার (০৪ এপ্রিল) সকাল ১১টার দিকে ওই সাংবাদিককে কল করে গলায় রশি পরানোর হুমকি প্রদান করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরাফাত হোসেন।

এদিকে সাংবাদিক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরাফাত হোসেনের কথোপকথনের একটি কল রেকর্ডিং ঢাকা টাইমসের হাতে এসেছে। ওই কল রেকর্ডিংয়ে সহকারী কমিশনার আরাফাত হোসেন সাংবাদিককে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি কি শাহিন, গতদিন আমাকে আমাদের অফিসের এক স্টাফের বিষয়ে ফোন দিয়েছেন। গত বছর গাছ কাটার বিষয়ে ফোন দিয়েছেন। আমার অফিসের মহিলা স্টাফ, সে একদিন, দুই দিন, এক সপ্তাহ অসুস্থ থাকতেই পারে। সেটা নিয়ে আপনি বলার কে রে ভাই? আপনি কি ভাবতেছেন ওইটা করে বাঁচতে পারবেন? গলায় কিন্তু রশি পড়বে আপনার। একজন মহিলাকে আপনি হয়রানি করতেছেন। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, হ্যানো করেন, তেনো করেন। আমি কিন্তু আপনার বিরুদ্ধে লিখব। আমি একদিন বলেছি, সাংবাদিকতা করবেন ভালো করে করেন। একজন মহিলার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে লেখেন না, আপনি কিন্তু বিপদে পড়বেন।’ তালা উপজেলার ভূমি কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন ও সাংবাদিক শাহিনের একটি কল রেকর্ডের কথোপকথনে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

তথ্য দেওয়া কি আমাদের অপরাধ শাহিনের এমন প্রশ্নের জবাবে এসিল্যান্ড আরাফাত হোসেন বলেন, তথ্য দেওয়া অপরাধ না। আপনি তথ্য দিবেন, সেটা আপনার দায়িত্ব। কিন্তু ভুল তথ্য দিবেন কেন? সাংবাদিকতা ভালোভাবে করেন। আর কয় দিন অফিসে আসলো না আসলো আপনাকে বলতে হবে কেন? আপনি কে? ধুর মিয়া ফাজলামি করেন। আপনি যা লেখার লেখেন, যা করার করেন। দেখেন আপনার কপালে কী ঘটে। তথ্য চাওয়ার দুইদিন পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফোন করে এমন ধরনের কথা বলে অভিযোগ করে বললেন সাংবাদিক শাহিন।

এ বিষয়ে সাংবাদিক শাহিন হোসেন বলেন, নগরঘাটা ভূমি অফিসের পিয়ন সুইটি খাতুন ছুটি না নিয়ে অনেকদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরাফাত হোসেনকে জানানো হয়। জানানোর দুইদিন পর অর্থাৎ বৃহস্পতিবার তিনি আমাকে ফোন করে গলায় রশি পরানোসহ নানাবিধ আপত্তিকর কথা বলেন। সাংবাদিকরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবে এটাই তো নিয়ম কিন্তু তথ্য দিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে এবং হুমকির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সাংবাদিক নেতারা বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবেন। একজন এসিল্যান্ডের আচরণ এমন জঘন্য কেন হবে। বিষয়টি রীতিমতো লজ্জাজনক।

বিষয়টি অস্বীকার করে তালা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরাফাত হোসেন বলেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। আর ওই সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো ঘটনাই ঘটেনি।

(ঢাকাটাইমস/০৪ এপ্রিল/প্রতিনিধি/পিএস)