সুইসাইড নোটে ‘স্বপ্ন’কে দায়ী করে পদ্মায় ঝাঁপ দিয়ে তরুণীর আত্মহত্যা

রাজবাড়ী প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ০১ মে ২০২৪, ০৯:৫৩

রাজবাড়ীতে ফেসবুকে সুইসাইড নোট লিখে পদ্মা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন পিউ কর্মকার (১৮) নামে এক তরুণী। নোটে আত্মহত্যার জন্য ‘স্বপ্ন’কে দায়ী করেছেন পিউ। কী কি স্বপ্ন ছিল তার, ও বাবা-মার, সেসব উল্লেখ করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের পদ্মানদীর সোনাকান্দর এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

পিউ রাজবাড়ী শহরের ২নং রেলগেট এলাকার কৃষ্ণপদ সরকারের মেয়ে। তিনি চলতি বছর রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পান করেন।

ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে ওই তরুণী লিখেন, “গুচ্ছ আমার শেষ ভরসা ছিল, জানি না কবে রেজাল্ট দেবে। পরীক্ষাও মোটামুটি হয়েছিল একটা আশা ছিল, কিন্তু আমার ভাগ্য সেই আশাটাও পূরণ করতে দিল না। ৫টা অপশন থাকে তার মধ্যে আমি বায়োলজি আর ইংরেজি এর বৃত্ত ভরাট করে ফেলেছিলাম ভুল করে, আজকে সেটা দেখলাম। কিন্তু আমি উত্তর করেছিলাম বাংলার। আমার সব স্বপ্ন শেষ। একে একে ঢাবি, রাবি, জাবি থেকে একটু একটুর জন্য ধাক্কা খাই। জানি এটাও আমার ভাগ্যের জন্য, চেষ্টা আমার কম ছিল না। দিনরাত এক করে পড়তাম। বাবা-মার অনেক স্বপ্ন ছিল আমাকে নিয়ে কিন্তু আমি কিচ্ছু দিতে পারি নাই। দাদার ইচ্ছা ছিল আমাকে ডাক্তার বানাবে। আমারও স্বপ্ন ছিল ছোট থেকেই যে ডাক্তার হবো। আমার ভাগ্য এতটাই খারাপ ছিল মেডিকেল অ্যাডমিশনের প্রিপারেশন নেওয়াও শুরু করি। কিন্তু মেডিকেলেও বসতে পারি না। এটা থেকেও বিশাল একটা ধাক্কা খাই।”

পিউ কর্মকার আরও লিখেন, “অনেক ভেঙে পড়েছিলাম তাও হাল ছাড়ি নাই। এই অ্যাডমিশন পিরিয়ডটা যে কতটা কষ্ট দিছে আমাকে। এই সব আর আমি নিতে পারতেছি না। আমি শুধু একটা আশ্রয় খুঁজতেছিলাম শেষ আশ্রয় এটাও শেষ হইল। অনেক মানুষ অনেক আত্মীয়ের অনেক কথা শোনা লাগছে।”

তিনি লিখেন, “আমি ধৈর্য ধরে ছিলাম যে পারব। কিন্তু আমি আর পারলাম না। সারাটা দিন ঘরের মধ্যে একা একা বসে থাকি। মানুষের কতো ফ্রেন্ড কত কিছু কিন্তু আমি আমার পাশে কাউকে পাই নাই। সব থেকে প্রয়োজন ছিল যাকে, যাকে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবতাম তাকেও আমি আমার পাশে পাই নাই। হয়তো আমাকে সাপোর্ট করার মতো কেউ থাকলে আজকে এই মৃত্যুটা আমার হইতো না। সেকেন্ড টাইমের প্রিপারেশন নেওয়ারও আমার কোনো মানসিক বা শারীরিক শক্তি নাই। আমার জীবনটা এখানেই থেমে গেল।”

সুইসাইড নোটে পিউ আরও লিখেন, “মায়ের কাছে গিয়ে মাঝে মধ্যে কাঁদতাম, মাও বুঝে নাই আমাকে। আমি একটা বোঝা সবার কাছে। আমার মৃত্যুর জন্য আমার এই বড় বড় স্বপ্নগুলোই দায়ী। আমি আমার বাবা-মার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি নাই। আমাকে শেষবারের মতো দেখতে চাইলে নদীর জলেই খুঁজো। আমার মৃত্যুটা এভাবেও চাই নাই, ভালো থাইকো সবাই। আমি আমার এই জীবনটা আর নিতে পারছি না। আমারে মাফ করে দিও সবাই। এভাবে দম বন্ধ করে বাঁচতে পারতেছি না আর।”

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।

রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। মেয়েটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ায় নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।”

(ঢাকাটাইমস/০১মে/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :