ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তরে হামলা, মামলার অগ্রগতি কতদূর?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২১ মে ২০২৪, ০৯:১৮| আপডেট : ২১ মে ২০২৪, ০৯:৫২
অ- অ+

ঢাকার বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের সময় ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তর কর্মীদের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় বংশাল থানায় একটি মামলা হয়েছিল। এক বছরের বেশি সময় পার হলেও সেই মামলার তদন্ত রিপোর্ট এখনও সম্পন্ন করতে পারেনি পুলিশ। অন্যদিকে এই হামলায় অংশ নেওয়া ২৮ ব্যক্তি গ্রেপ্তার হলেও তারা জামিনে মুক্ত আছেন।

গত বছরের ৪ এপ্রিল আগুনে পুড়ে ছারখার হয় দেশের অন্যতম পাইকারি পোশাকের মার্কেট বঙ্গবাজার। ওইদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উত্তেজিত জনতা ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তরে ঢিল ছোড়ে এবং নিয়ন্ত্রণ কক্ষে হামলা চালায়। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে গত বছরের ৬ এপ্রিল বংশাল থানায় মামলা দায়ের করেন ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. শাহিন আলম। মামলায় অজ্ঞাতনামা ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়।

প্রথম পর্যায়ে মামলাটির তদন্ত করেন বংশাল থানার সাবেক পরিদর্শক সমিরন মন্ডল। পরবর্তীতে তার বদলিজনিত কারণে পরিদর্শক মো. মাসুদ তদন্তের দায়িত্ব পান। চলতি বছরের ৩ মার্চ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ থাকলেও তদন্ত শেষ না হওয়ায় প্রতিবেদন দাখিল করেনি পুলিশ।

তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, মামলার পর ২৮ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশ গ্রেপ্তারকৃতদের পরিচয় খুঁজে বের করে।

পুলিশ বলছে, মামলায় যেহেতু অনেক মানুষকে আসামি করা হয়েছে এজন্য তদন্ত শেষ করতে সময় লাগছে। এছাড়া ওই হামলায় ফায়ারের যেসব কর্মীরা আহত হয়েছিলেন তাদের সবার মেডিকেল রিপোর্ট এখনও সংগ্রহ করতে পারেনি পুলিশ। যার কারণে তদন্ত রিপোর্ট এখনও তদন্ত কর্মকর্তার কাছে আটকে আছে।

তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট নিতে বর্তমানে জোর তদবির চালাচ্ছে পুলিশ।

সেসময় অভিযোগ উঠেছিল, ওই হামলাটি ‘পরিকল্পিত’ ছিল। তবে গ্রেপ্তারের পর ৩ আসামির রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে বাহিনীটি এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পায়নি।

পুলিশ আরও বলছে, এই অগ্নিকাণ্ডের পর সব কিছু হারিয়ে তাদের মাথা ঠিক ছিল না। এ কারণে না বুঝেই এ হামলা করেছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।

মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে ডিএমপির লালবাগ বিভাগের (বংশাল) জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার শফিকুর ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মামলাটি তদন্তাধীন আছে, যার কারণে গত মাসে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি। কিছু আসামি গ্রেপ্তার আছে। খুব শিগগিরই আমরা কোটে রিপোর্ট পাঠাতে পারব।

বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুল ইসলাম বলেন, 'তদন্তের কাজ এখনও শেষ হয়নি। আমার জানামতে কয়েকজনের সাক্ষী নেওয়া বাকি আছে। এই মাস বা আগামী মাসের মাঝামাঝি তদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে দেব।

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক (মিডিয়া সেল) মো. শাহজাহান শিকদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে মামলা হয়েছিল। তারিখে তারিখে কোর্ট আমাদের ডাকে, আমাদের লোকজন গিয়ে কোর্টে গিয়ে কথা বলে।

এ হামলার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে ফায়ারের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস সেবাধর্মী সরকারি প্রতিষ্ঠান। মানুষের দুঃসময়ে আমরা এগিয়ে যাই। বিপদে মানুষের জীবন রক্ষার্থে আমরা যে গাড়ি ও সরঞ্জাম ব্যবহার করি এগুলোর ওপর আঘাত করাটা পুরো জাতির নিরাপত্তা বিঘ্ন করার শামিল। আমরা এটার ন্যায়বিচার চাই।’

যা আছে মামলার এজাহারে

গত বছরের ৬ এপ্রিল দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তরে হামলায় সরকারি সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। অতর্কিত এ হামলায় ভাঙচুর করা হয় ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন মডেলের ১৪টি গাড়ি, মেইন গেটের সেন্ট্রি পোস্ট, প্রশাসনিক ভবন ও সিনিয়র স্টেশন অফিসারের অফিস। হামলায় আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৯ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা। শুধু তাই নয়, হামলায় সিনিয়র কর্মকর্তাসহ আহত হন ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকজন সদস্য। মামলার এজাহারে বাদী অভিযোগ করে বলেন, গত ৪ এপ্রিল সকাল ৬টা ১০ মিনিটে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে অফিসার ও ফায়ার ফাইটারদের সঙ্গে নিয়ে গাড়ি, পাম্প ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদিসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করি। আগুনের ভয়াবহতা দেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়।

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী বিভিন্ন স্টেশনের ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিট, পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবক টিমের সহায়তায় আগুন নেভানোর কাজ চলছিল।

সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে সিদ্দিক বাজারে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে হামলার ঘটনা ঘটে। অজ্ঞাতপরিচয় ২৫০-৩০০ জন হাতে লোহার রড, লাঠিসোঁটা ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।

উচ্ছৃঙ্খল জনতা একযোগে অফিসে প্রবেশ করে সরকারি কাজে বাধা দেয়। সেসময় তারা ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের বিভিন্ন সদস্যকে মারধর শুরু করে। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. ওয়াহিদুল ইসলাম ও পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী জনতাকে থামাতে গেলে তারা তাদের হত্যার উদ্দেশ্যে ধাওয়া করে। তারা জীবন রক্ষার্থে দৌড়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের অভ্যন্তরে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, অজ্ঞাতপরিচয় আসামিরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ভেতরে প্রবেশ করে লোহার রড, লাঠি ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে মোট ১৪টি বিভিন্ন মডেলের গাড়ি ব্যাপক ভাঙচুর করে। তারা কইকা ভবন, মেইন গেটের সেন্ট্রি পোস্ট, প্রশাসনিক ভবন ও সিনিয়র স্টেশন অফিসারের অফিস ব্যাপকভাবে ভাঙচুর চালায়।

এ সময় বাধা দিলে তারা ফায়ার ফাইটার ইসলাম অন্তরকে লোহার রড দিয়ে ডান পায়ে আঘাত করে জখম করে। উপ-পরিচালক বাবুল চক্রবর্তীকে হত্যার উদ্দেশ্যে লাঠি দিয়ে তার মাথায় ও ডান হাতে সজোরে আঘাত করে গুরুতর জখম করে দুর্বত্তরা। চালক ইমন হোসেনকেও লাঠি দিয়ে পিঠে আঘাত করে জখম করা হয়। তারা সবাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

হামলার পুরো ঘটনা সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে রয়েছে উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়, অজ্ঞাতপরিচয় ২৫০-৩০০ জন আসামি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের তথা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে হামলা ও সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করে।

(ঢাকাটাইমস/২১মে/এলএম/ইএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এপ্রিলের ২৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬০ কোটি ৭৬ লাখ ডলার
নির্ধারিত সময়ের দুই মাস আগেই সব দেনা পরিশোধ করল পেট্রোবাংলা
ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব: অর্থ উপদেষ্টা
উপদেষ্টাদের সঙ্গে পুলিশের মতবিনিময়, বিভিন্ন প্রস্তাব বাস্তবায়নের আশ্বাস
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা