নেতৃত্ব দেওয়ার শর্ত

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন
  প্রকাশিত : ২১ মে ২০২৪, ১৫:৪১| আপডেট : ২১ মে ২০২৪, ১৫:৪৪
অ- অ+

রাজনৈতিক বাস্তবতায় রাজনীতিকদের ক্ষমতাধর হওয়ার অতি উদ্যোগ রয়েছে। একজন রাজনীতিকের কাজ হলো জনস্বার্থ উদ্ধারে প্রথমত সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে নিজেকে সমর্পণের অঙ্গীকার করা। অতঃপর ধীরে ধীরে তাঁর ব্যক্তিচরিত্রকে সততার নজিরে, দক্ষতার দৃষ্টান্তে, দেশপ্রেম ও দূরদৃষ্টির আলোকে প্রস্তুত করে সামাজিক নেতৃত্ব থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে রাজনৈতিক পরিসরের নেতা হওয়ার উপলক্ষ তৈরি করা। তবে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির মঞ্চে অর্থ ও তোষামোদির মতো দুটো অসুস্থ অস্ত্রের মাধ্যমে যে কেউ ‘দুই দিনের রাজনৈতিক কর্মী’ থেকে নেতা হয়ে পড়ছেন।

যোগ্যতা ও ত্যাগ—একজন রাজনীতিকের জন্য যে কত বড় অত্যাবশ্যক দুটি ধর্ম, তা বুঝতে চায় না তৃণমূল কিংবা আঞ্চলিক রাজনীতির সঙ্গে থাকা কতিপয় কথিত রাজনীতিকেরা। মনে রাখা দরকার যে, যোগ্যতা অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে নেতৃত্বের মৌলিক গুণাবলি না থাকলে এবং তা দীর্ঘমেয়াদি দলীয় আনুগত্যে প্রমাণিত সত্য না হলে তাদের ওপর আস্থা অর্জনের বিষয়টি নিষ্পত্তি হয় না। অথচ কালো টাকা ও পেশিশক্তির মাধ্যমে এই বাংলাদেশে আজ রাজনীতিতে এসে আগামীকাল বড় বড় নেতাদের হাতে এনে রাজনীতিক বনে যাওয়ার হিড়িক আছে। এই ধরনের রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি রুখতে হবে।

ওয়ারেন বেনিস বলেছিলেন, ‘নেতৃত্ব হলো একটি দর্শনকে বাস্তবে রূপান্তর করার ক্ষমতা।’—এমন মতবাদে সিক্ত হয়ে বাংলাদেশে আমরা কতজন রাজনৈতিক নেতা নিজেদেরকে প্রমাণ করতে পারছি? জাতীয় পর্যায়েই তো তেমন সংখ্যা নগণ্য পর্যায়ের। আঞ্চলিক পর্যায়ে আরও তথৈবচ প্রেক্ষিত। এভাবে চলে না। উদাহরণস্বরূপ, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও একজন শেখ হাসিনার নেতৃত্ব দর্শনে মজে গিয়ে অপরাহ্ণ করে আমরা কতজন সাধারণ মানুষের সামনে তা তুলে ধরতে পারছি?

অন্যদিকে প্রচলিত আরেকটি মতবাদ রয়েছে। তা হলো, ‘নেতৃত্ব শুধু সঙ্গে থাকার জন্য চলতে পারে না। নেতৃত্বকে অবশ্যই আজকের নৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।’—এখানেও রাজনীতিকবর্গকে হোমওয়ার্ক করতে হবে। প্রতিটি দিবসেই নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মানসিকতায় যেতে হবে। অথচ সচিবালয়ের ফ্লোরে গিয়ে তদবির করা ছাড়া নেতৃস্থানীয় সত্তাসমূহের আর যেন কোনো কাজই নেই।

একটি পুস্তক পড়ে যদি পাঠচক্র করে পাঠকশ্রেণি অভ্যাসরত হয়, তাহলে উক্ত বই থেকে প্রাপ্ত ফলাফল নিজেদের জীবনে প্রভাব তো ফেলবেই, লেখকের উল্লেখযোগ্য বার্তাও নিষ্পত্তি হবে। ঠিক একইভাবে একটি মতবাদের ওপর আস্থা রেখে বলছি, ‘নেতারা চিন্তা করে এবং সমাধানের কথা বলে। অনুসারীরা চিন্তা করে এবং সমস্যার কথা বলে।’

কাজেই নেতা ও অনুসারীদের ওই পাঠচক্রের মতো করে নিত্য বৈঠকের আয়োজনে গিয়ে জনস্বার্থ উদ্ধারের প্রচেষ্টা না থাকলে রাজনীতি কি করা হলো? আমরা কি এখানেও নিজেদের প্রমাণ করতে পারছি?

খুব সহজ করে বললে, ‘নেতাদের জন্ম হয় না, তারা তৈরি হয় এবং তারা তৈরি হয় অন্য যেকোনো কিছুর মতো- কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে।’ নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা তখনই তৈরি হয়, যখন সে নেতার আদর্শ তুলে ধরার জন্য নিজেকে গড়ে নিতে পারে। আবার পারিবারিক রাজনীতির উত্তরসূরি হিসেবে হয়তো একটা সুবিধা আছে। তা হলো, জনশ্রেণি আগেভাগেই নির্দিষ্ট সত্তাকে সুস্বাগত জানায়। কিন্তু যোগ্যতা, মেধা, দলীয় আনুগত্য না থাকলে ওই নবাগত কি টিকে থাকতে পারবেন? পূর্বসূরিদের ছাপিয়ে গিয়ে উত্তরসূরিরাও শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেন, তাও মনে রাখতে হবে।

রাজনীতি করতে গিয়ে পরিমিতিবোধ, শিষ্টাচারকে সঙ্গী করার পাশাপাশি মূল্যায়নের নানাবিধ দিক নিয়েও ভাবতে হবে। নেতা হতে পারা তাঁর নেতৃত্বগুণে উত্তীর্ণ হয়। কেউ তা রুখতে পারে না, যদি তাঁর মধ্যে মানবিক পর্যায়ের সেরা গুণগুলো থাকে। ব্যক্তি পর্যায়ে আমার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার আলোকে মনস্থির করেছি যে, রাজশাহীসহ সারাদেশে জাতীয় নেতা হওয়ার মতো অর্ধশত রাজনৈতিক চরিত্র গড়ে দিতে চাই। যারা এই দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে আগামীতে লড়বে।

লেখক: সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
যশোরে সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ সদস্য নিহত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শোভা কলোনি থেকে ৯ ফুট লম্বা অজগর উদ্ধার 
বগুড়া জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ঢাকায় গ্রেপ্তার
শ্রীপুরে পোশাকশ্রমিককে তুলে নিয়ে জঙ্গলে দলবদ্ধ ধর্ষণ, বাধা উপেক্ষা করে মামলা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা