পঙ্গু হাসপাতালের এমআরআই মেশিন নষ্ট, ধুঁকছে রোগীরা

তাওহিদুল ইসলাম, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২১ মে ২০২৪, ০৯:৫৩| আপডেট : ২১ মে ২০২৪, ১৬:০৯
অ- অ+

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের (নিটোর/পঙ্গু) এমআরআই মেশিন (ম্যাগনেটিক রেসোন্যান্স ইমেজিং) গত কয়েক মাস ধরে নষ্ট। হাসপাতালে কবে নাগাদ নতুন এমআরআই মেশিন আসবে তাও জানা নেই কর্তৃপক্ষের। এমআরআই’র পাশাপাশি হাসপাতালে এক্সরে ফিল্মেরও সংকট।

হাসপাতালের এমআরআই মেশিন নষ্ট হওয়ায় বিত্তবানরা বেশি খরচে বেসরকারিভাবে পরীক্ষা করালেও ভোগান্তিতে পড়ছেন অসহায়, দরিদ্র গরিব রোগীরা।

বিশেষায়িত এই হাসপাতালটি এক হাজার বেডের হলেও রোগী আছে প্রায় দুই হাজার। এছাড়া হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগ মিলিয়ে প্রতিদিনি প্রায় হাজারের মতো রোগী সেবা নেন।

বহির্বিভাগের চিকিৎসকরা এ ব্যাপারে বলেন, হাসপাতালের এমআরআই মেশিন নষ্ট। যেসব রোগীদের এমআরআই দরকার তাদের আশেপাশে সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিই। তবে এমআরআই এর মতো গুরুপূর্ণ পরীক্ষার জন্য সব সরকারি হাসপতালেই ভিড় লেগে থাকে। সেখানে অন্য হাসপতাল থেকে এমআরআই করাতে গেলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় আরও বেশি। এমন বাস্তবতায় রোগীরা বেসরকারিভাবে পরীক্ষা করাতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়া পঙ্গু হাসপাতালে এক্সরে মেশিনের ফিল্ম সংকটের কারণে সকাল ১১টার পর থেকে এক্সরে করার জন্য সিরিয়াল নেওয়াও বন্ধ থাকে। এই সুযোগে প্রতিষ্ঠানটিতে দায়িত্বরত কিছু আনসার সদস্য রোগীদের থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে এক্সরে করিয়ে দিচ্ছে। রোগীরাও স্বেচ্ছায় আনসার সদস্যদের টাকা দিয়ে এই বাড়তি সুবিধা নিতে দ্বিধাবোধ করেন না। তবে এতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল রোগীদের। বিশেষ করে যারা ঢাকা বাইরের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে সেবা নিতে আসেন তাদের ভোগান্তি চরম।

রবিবার সকাল ১১টা ৪৮ মিনিটে হাতে প্লাস্টার করা ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগের আসেন এক মা। এসে জানতে পারেন ১১টার পর আর এক্সরে করার জন্য কাউন্টারে টাকা জমা দেওয়া যায় না। এরপর তিনি আনসার সদস্য রসুলের কাছে গিয়ে বলেন, যেভাবে হোক এক্সরেটা করিয়ে দিন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে রসুল ২৫০ টাকার এক্সরে ৫০০ টাকার বিনিময় করিয়ে দেন। পঙ্গু হাসপতালে এক্সরে ফি ২৫০ টাকা।

আনসার সদস্যকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে এক্সরে করানো রোগীর মা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ভাই আমার বাচ্চার আজকে প্লাস্টার খুলাব তা যে করেই হোক।’ শুধু এসব অনিয়মই নয়, বহির্বিভাগের অনেক চিকিৎসকও আসেন না সময় মতো। সকাল ৯টা থেকে ডিউটি শুরু হলেও ১২টা ১টার আগে তারা আসেন না। রবিবার পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিভাগে কিশোরগঞ্জ থেকে এক রোগী সকাল ৮টা থেকে বসে আছেন বেলা ১২টা পর্যন্ত। তিনি ডা. মো. রেজাউল করিমকে দেখাবেন বলে এসেছেন। হাসপাতালের ডিউটি রোস্টারেও রবিবার রেজাউল করিমের ডিউটি রয়েছে। কিন্তু তিনি বেলা ১২টায়ও এসে পৌঁছাননি। এছাড়া অধ্যাপক ডা. ওয়াহিদুর রহমানের ডিউটি থাকলেও তাকে বেলা ১২টা পর্যন্ত হাসপাতালের বহির্বিভাগের দেখা যায়নি।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের এক উপ-পরিচালক ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক পর্যায়ের চিকিৎসকদের একাডেমিক কাজ থাকে। ক্লাস নিতে হয়। এছাড়া তাদের বাইরের হাসপাতালেও এক্সপার্ট হিসেবে মাঝেমধ্যে ডেকে নেওয়া হয় মেজর অপারেশন করার জন্য বা কোনো জটিলতা দেখা দিলে। তবে বহির্বিভাগ থেকে কোনো রোগীর ভর্তি প্রয়োজন হলে সে সিদ্ধান্তও তারাই দেন।

কিশোরগঞ্জ থেকে আসা রোগী মো. নাজির হোসেন (ছদ্ম নাম) ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মেরুদণ্ড অপারেশন করে গেছি মাস খানিক আগে। আজকে আবার আসতে বলছিল ডাক্তার। কিন্ত এসে সকাল থেকে বসে আছি, ডাক্তারের দেখা নেই। শুনছি ডাক্তার নাকি ১২টার পর আসবেন।’

এদিকে হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানি প্রতিনিধিদের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ রোগীরা। রোগী প্রেসক্রিপশন হাতে চিকিৎসকের রুম থেকে বের হলেই চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে বিরক্ত করেন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভরা। এরপর তারা মোবাইলে প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে নেন। অভিযোগ আছে, চিকিৎসক ওষুধ কোম্পানির দেওয়া ওষুধ প্রেসক্রাইব করেছেন কি না তা তদারকি করেন তারা। চিকিৎসদের নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ রোগীদের দিতে একপ্রকার বাধ্য করেন এই মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভরা।

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের (নিটোর/পঙ্গু) যুগ্ম-পরিচালক ডা. মো. মোজাফফর হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গত তিন মাস ধরে হাসপাতালের এমআরআই মেশিন নষ্ট। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এমআরআই মেশিনের চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। নতুন অর্থ বছরের টেন্ডার হলে হয়ত পেতে পেতে নভেম্বর ডিসেম্বার মাস হয়ে যাবে।’

এসব বিষয় জানতে চাইলে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের (নিটোর/পঙ্গু) পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী শামীম উজ্জামমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘হাসপাতালের বহির্বিভাগে সকাল ১১টার পর থেকে এক্সেরে করার জন্য সিরিয়াল নেওয়া হয় না। কারণ ১১টা পর্যন্ত যত রোগীর সিরিয়াল নেওয়া হয়, তাদের এক্সরে করতে করতেই আড়াইটা ৩টা বেজে যায়। এরপর আর বহির্বিভাগের চিকিৎসা দেওয়ার সময়ও থাকে না।’ এছাড়া এক্সরের ফিল্মেরও সঙ্কট রয়েছে।

অধ্যাপক ডা. কাজী শামীম উজ্জামমান বলেন, ‘বহির্বিভাগে সীমাবদ্ধতা থাকলেও জরুরি বিভাগে ২৪ ঘণ্টায়ই এক্সরেসহ রোগীদের প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।’

কয়েকমাস ধরে হাসপাতালের এমআরআই মেশিন নষ্ট প্রসঙ্গে পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ২০১৮ সালে থেকে এই মেশিন হাসপাতালে চলছে। মাঝেমধ্যে সমস্যা দেখা দিলেও কাজ করা গেছে। নতুন (২০২৪ সাল) বছরেও এমআরআই মেশিন দিয়ে কাজ করা গেছে। তবে কয়েকমাস হলো মেশিন নষ্ট।

এমআরআই মেশিন কবে নাগাদ আসবে, এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী শামীম উজ্জামান বলেন, তার সঠিক তারিখ বলা সম্ভব না। তবে এটা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কয়েকবার কথাও হয়েছে।

হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের দৌরাত্মের বিষয়ে পরিচালক বলেন, ‘হাসপাতালে ১২টার আগে তাদের (রিপ্রেজেন্টেটিভদের) প্রবেশ নিষেধ ছিলো। এ ব্যাপারে আমি ব্যবস্থা নেব।’

(ঢাকাটাইমস/২০মে/টিআই)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রাক-মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে নিহত ১
বাংলাদেশের পিএমআই বেড়ে ৫৮.৯, অর্থনীতির দ্রুততর প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিত
ভালুকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১, আহত ৫
মহানবীকে কটূক্তি: অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে গণপিটু‌নির পর জুতার মালা জনতার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা