স্ত্রীসহ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ডিবিতে যা বলেছেন কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৬:৫৪
অ- অ+

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ জালিয়াতির ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছেন প্রতিষ্ঠানটির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর খান। ডিবি পুলিশ তাকে দুদিনের সময় দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ পাবেন তিনি। স্ত্রী নিজে ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন বলেও দাবি করেন সদ্য বরখাস্ত এই চেয়ারম্যান।

ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ বলেছেন, জালিয়াতিতে আলী আকবরের অপরাধের তথ্য-প্রমাণ মিললে তার বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ জালিয়াতির ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর খানকে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) ডিবি কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর ডিবি কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন হারুন অর রশীদ।

হারুন অর রশীদ বলেন, আগারগাঁও পীরেরবাগ, পাইকপাড়ায় সিস্টেম এনালিস্ট শামসুজ্জামানের বাসায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। সেখানে কারখানা তৈরি করেছিলেন। তিনি কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে হাজার হাজার কাগজ এনে জালিয়াতি করতেন। এই সনদ জালিয়াতির ঘটনায় আমরা জনকে গ্রেপ্তার করেছি। এর মধ্যে পাঁচজন সব দোষ স্বীকার করে আর কারা কারা জড়িত দায় রয়েছে সে সম্পর্কে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

ডিবি প্রধান বলেন, সদ্য ওএসডি হওয়া চেয়ারম্যানের স্ত্রীকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তিনি জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন যে, তিনি সিস্টেম এনালিস্ট শামসুজ্জামানের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন। শামসুজ্জামান কারিগরির চেয়ারম্যানের স্ত্রী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

হারুন অর রশীদ বলেন, আজকে আমরা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সদ্য ওএসডি হওয়া চেয়ারম্যান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। আমরা জানতে চেয়েছি যে, সার্টিফিকেট চুরির করার ওয়েবসাইটের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে আপলোড করা সনদ অনিয়ম করা হয়েছে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস! কীভাবে? তিনি একজন চেয়ারম্যান। তিনি নির্দেশনার নেতৃত্ব দেন। সেই প্রতিষ্ঠান থেকে কাগজ নিয়ে যাচ্ছে, সিসিটিভি আছে, তারা দেখছেন। এভাবে জালিয়াতি হলো! আবার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সার্টিফিকেটগুলোতে স্বাক্ষর করে গেছেন মাসের পর মাস। কলেজগুলোর পরীক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে দেখে সার্টিফিকেটে স্বাক্ষর করা। তিনি সেটি করেননি।

হারুন বলেন, এই ঘটনাগুলো কি অবহেলায় চেয়ারম্যান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক করেছেন? নাকি স্বপ্রণোদিতভাবে করেছেন কিনা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। কেন জেনেও আপনারা ব্যবস্থা নিলেন না? তখন চেয়ারম্যান ডিবিকে বলেছেন, আমাদের লোকবল কম ছিল। নজরদারি সম্ভব হয়নি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সার্টিফিকেট কেনাবেচা হচ্ছে, সার্টিফিকেট বানানোর পর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে আপলোড হচ্ছে। মানুষ সার্টিফিকেট, প্রতিষ্ঠান কিনছে। জানার পরও এসব হলে দায় এড়াতে পারেন কি-না? তখন চেয়ারম্যান বলেন, সেই দায় ইচ্ছেকৃত নাকি অনিচ্ছাকৃত? অবহেলা নাকি বায়াস্ট? স্ত্রীর বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেছেন। জানতেন না দাবি করেছেন।

হারুন বলেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নজিরবিহীন জাল-জালিয়াতির ঘটনা ইতিহাসে শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য কলঙ্কিত কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত করার মতো ঘটনা৷ আমি মনে করি, কারিগরির চেয়ারম্যান দায় এড়াতে পারেন না। কোনো সুযোগ নেই। আমরা এখন দেখবো, তিনি আসলে আসল সনদ বিক্রির বিষয়টি জানতেন কি-না? তার তো জানার কথা? তিনি তো আসল সার্টিফিকেট বিক্রির মাধ্যমে শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিয়েছেন। তিনি কো কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন, তার তো জানার কথা, একটা মানুষ কতো পরিশ্রম করে ভালো রেজাল্ট করতে পারছে না, সেখানে পড়াশোনা না করেই টাকা দিয়ে আসল সার্টিফিকেট কিনে নিচ্ছে। এটা কাঙ্খিত না।

হারুন বলেন, সনদ জালিয়াতির ঘটনায় তার দায় সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা দিতে হবে। প্রয়োজনে তাকে এক দুদিনের সময় দিবো। তিনি যদি সঠিক ব্যাখ্যা দিতে না পারেন আর আমরা যদি তার সংশ্লিষ্টতা বা অনৈতিক যোগসাজশের তথ্য-প্রমাণ পাই তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

হারুন বলেন, পরীক্ষার হলে নকল প্রতিরোধে আমরা কাজ করেছি, অপরাধী চক্রকে গ্রেপ্তার করেছি। অথচ দুঃখজনক হলো, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, তার পরিবার, সিস্টেম এনালিস্ট, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মিলে সিন্ডিকেট বানিয়ে যেভাবে প্রতারণা, সনদ জাল-জালিয়াতি করা হয়েছে তা নজিরবিহীন। এটা আসলে কাম্য হতে পারে না, তাই জড়িত প্রত্যেককে আমরা একে এক আইনের আওতায় নিয়ে আসবো। কাউকে ছাড় দিবো না।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক চেয়ারম্যান জানার পরও ব্যবস্থা না নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আরেকটু তদন্ত করবো। জানার পরও কেন ব্যবস্থা নেয়া হলো না? ইচ্ছেকৃত, অবজ্ঞা নাকি অনিচ্ছায় জেনেও ব্যবস্থা নেননি তা জানার চেষ্টা করবো। দায় এড়ানোর তো সুযোগই নাই। তিনি তো ইতোমধ্যে ওএসডি হয়েছেন।

তার আজকের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট কি-না? স্ত্রীও গ্রেপ্তার? পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তাহলে চেয়ারম্যান পরীক্ষক কেন গ্রেপ্তার হবে না কেন? জানতে চাইলে হারুন বলেন, আসল সার্টিফিকেট বিক্রি করে টাকা নেয়ার বিষয়টি আমাদের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এই সার্টিফিকেট জালিয়াতির ঘটনা লজ্জাজনক। দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। স্ত্রী যে টাকাটা নিতেন সেটা তিনি জানেন কিনা?পারিপাশ্বিক তথ্য প্রমাণ লাগবে।

হারুন বলেন, সার্টিফিকেটগুলো কারা কিনেছেন, কোথায় কোথায় বিক্রি হয়েছে। সেটা দেখা হবে৷ বুয়েটের একটা পরীক্ষক দল আসবেন। বিশ্লেষণ করে দেখা হবে আসলে কি পরিমাণ সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছিল। কি পরিমাণ টাকা লেনদেন করা হয়েছে। তদন্ত আরও চলবে। কারা টাকা দিয়েছে, কারা সনদ নিয়েছে। তারা কখন কাকে কি পরীমাণ টাকা দিয়েছেন! আর্থিকভাবে চেয়ারম্যান জড়িত তা খুঁজে বের করা হবে। সব কিছু তদন্ত করা হবে। তাকে ছেড়ে দেয়া হলেও ডিবির নজরদারিতে থাকবেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওএসডি চেয়ারম্যান আলী আকবর খান।

হারুন বলেন, যারা অন্যায় কাজ করেছেন, রক্ষক হয়ে যদি এখন ভক্ষকের ভূমিকা পালন করেন, সরিষার মধ্যে যদি ভূত থাকে! তাহলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

(ঢাকাটাইমস/২৩এপ্রিল/এসএস/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ইউরোপজুড়ে নজিরবিহীন তাপপ্রবাহ: ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, তুরস্কে রেড অ্যালার্ট জারি
সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ শূন্য: জনবল সংকটে প্রশাসন
‘ফ্যাসিবাদী শাসনে বাংলাদেশের মৌলিক স্তম্ভ ধ্বংস হয়েছে’: জামায়াত নেতা মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান
হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি আজ সরাসরি সম্প্রচার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা