ভর্তুকি কমানোর পদক্ষেপ জানতে চায় আইএমএফ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ ছাড়ে রিজার্ভের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্য পূরণে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমন পরিস্থিতিতে ঋণের শর্তগুলো নিয়ে বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছে ঢাকা সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদল।
মুদ্রা বিনিময়ে চাপিয়ে দেওয়া দরের কারণেই দেশের আর্থিক হিসাব ঋণাত্মক ও রিজার্ভে পতন অব্যহত রয়েছে বলে মনে করে আইএমএফ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার ও সুদের হার বাস্তবায়নে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়েছে।
বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে চলতি ও আগামী বাজেটে ব্যয় সংকোচন এবং ভর্তুকি কমিয়ে বাজেট ঘাটতি কম রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মুদ্রাবিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো এবং বৈদেশিক লেনদেনে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি কাটিয়ে উঠার তাগিদ দিয়েছে আইএমএফ।
বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোর গড় খেলাপি ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পদক্ষেপেরে বিষয়ে জানতে চেয়েছে সংস্থাটি।
ইতোমধ্যে আইএমএফের ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণ ছাড়ে রিজার্ভের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বারবার ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে সুদের হার বাস্তবায়ন, রাজস্ব আয় বাড়ানো ও বাজার ভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় চালু করার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মুদ্রা বিনিময় ও ক্রলিং পেগ বাস্তবায়ন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ায় ক্রলিং পেগ বাস্তবায়ন নিয়ে আপাতত কোনো পরামর্শ দেয়নি বাংলাদেশে অবস্থানরত আইএমএফের প্রতিনিধি দল।
বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আর্থিক খাত সংস্কার, খেলাপি ঋণ, সুদের হার বাস্তবায়ন, মুদ্রানীতি, মূল্যস্ফীতি, বিদেশি বাণিজ্যের ভারসাম্য ও আউটলুক, মুদ্রা বাজার ও তারল্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করেছে আইএমএফ।
তিনি আরও বলেন, আইএমএফের মিশনের সঙ্গে বুধবার (২৪ এপ্রিল) আমাদের বৈঠক শুরু হয়েছে। এখন সংস্থাটি আমাদের কাছ থেকে বিশ্লেষণ করার জন্য তথ্যগুলো সংগ্রহ করছে। এরপর হয়তো বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেবে।
বৈঠকে উপস্থিত অর্থ বিভাগের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, শুধু আইএমএফের শর্ত পূরণই নয় দেশের সার্বিক উন্নয়নে রাজস্ব বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। বিষয়টি নিয়ে অনেক বছর থেকে আলোচনা হলেও তেমন উন্নতি হয় নি। বরং ২০১৫ সালের তুলনায় কিছুটা কমে গত কয়েক বছর কর জিডিপির অনুপাত ৭ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। এ জন্য করনীতি এবং কর আহরণ কর্তৃপক্ষ আলাদা করার পুরনো আলোচনাও পুনরায় উঠে এসেছে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর আগামীতে সহজ শর্তের এবং কম সুদের বৈদেশিক ঋণ কমে যাবে। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর ঋণের সুদহার বেড়েছে। আগামী আরও বাড়বে । বাজেট সহায়তা নিলে বিভিন্ন ধরনের শর্ত বিষয় আসে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়ানো গেলে বাজেট সহায়তা নেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার আরও বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি কিছুটা বাড়ায় ইতোমধ্যে চলতি হিসাবে বেশ উন্নতি হয়েছে। তবে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি রয়েই গেছে। চলতি হিসাবে স্থিতিশীলতা রক্ষার পাশাপাশি আর্থিক ঘাটতি কাঠিয়ে উঠার তাগিদ দেওয়া হয়। সার্বিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর ওপর বাড়তি নজর দিতে বলা হয়েছে। আইএমএফ গত বছরের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণপ্রস্তাব অনুমোদন করে। ইতোমধ্যে দুই কিস্তিতে ১১৫ কোটি ৮২ লাখ ডলার ছাড় করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মে মাস নাগাদ তৃতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ডলার ছাড় করা হতে পারে।
(ঢাকাটাইমস/২৪এপ্রিল/কেএম)

মন্তব্য করুন