সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম: কী লিখবো কী লিখবো না!

ইশরাত জাহান এলিজা
  প্রকাশিত : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:১৫
অ- অ+

তথ্য যাচাই না করে কোনো কাজ করলে তার ফলাফল আশানুরূপ হয় না। বরং এতে শারীরিক, মানসিক ও সম্পদের ভুল ব্যবহার করা হয় এবং সকল পরিশ্রম বৃথা যায়। আর এই ‘হুজুগে মেতে ওঠা’-র বিষয়টি কবি শামসুর রাহমান তাঁর ‘পণ্ডশ্রম’ কবিতায় তুলে ধরেছেন-

এই নিয়েছে ঐ নিলো যা! কান নিয়েছে চিলে,

চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে।

কানের সন্ধানে সারাদিন ছোটার পর গ্রামের একটি ছোট ছেলে এসে বললো কান আসলে কানের জায়গাতেই আছে। তারপর সবাই কানে হাত দিয়ে দেখলো তার কথাই সত্যি। তখন নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তারা বললো,

ঠিক বলেছে, চিল তবে নয়কো কানের যম,

বৃথায় মাথার ঘাম ফেলেছি, পণ্ড হলো শ্রম।

বর্তমানে আমাদের দেশেও এই ‘হুজুগে মেতে ওঠা’ বিষয়টি খুব লক্ষণীয়। হুট করেই যেন আমরা হুজুগে মেতে ওঠি। আর এই হুজুগে মেতে ওঠা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে যেমন- ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বর্তমানে সবার কাছে সহজলভ্য হওয়ার ফলে যে কেউ এখানে কথা বলতে পারছে। তবে সমস্যা হলো গঠনমূলক আলোচনার চেয়ে বরং অহেতুক তর্কই বেশি দেখা যায়। কখনো এ রকমও হয়েছে কেউ হয়তো কারও কাছে কিছু শুনলো আর সঙ্গে সঙ্গে তা পোস্ট করে দিলো। আবার কেউ কেউ সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই সেই পোস্ট শেয়ার করে দিলো। এভাবে একটি ভুল তথ্য ছড়াতে ছড়াতে একসময় তা মামলা- মোকদ্দমা হয়ে শেষে দেখা গেল ঘটনা কিছুই না।

এমনকি দেশের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গকেও এ ধরনের গুজবের শিকার হতে হয়। দেশবরেণ্য অভিনেতা শ্রদ্ধেয় এটিএম শামসুজ্জামান সম্পর্কে গুজব রটেছিল তিনি মারা গিয়েছেন । পরবর্তীতে তাকে ফেসবুক লাইভে এসে প্রমাণ করতে হয়েছে তিনি বেঁচে আছেন। পদ্মা সেতু নির্মাণের আগে গুজব ছড়িয়েছিল পদ্মা সেতু নির্মাণে মানুষের মাথা কেটে দেওয়া হচ্ছে। অথচ দেখা গেল ঘটনাটি মিথ্যা। ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মৃত্যু ও ধর্ষণ নিয়ে গুজব ছড়ানো হয়, যা পরবর্তীতে পুলিশ এর সুরাহা করে।

এ সমস্ত সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ হলো কোনো তথ্য যাচাই-বাছাই না করেই তা শেয়ার করা। বর্তমান প্রজন্ম ভাইরাল হওয়ার নেশায় ডুবে আছে। কোনো তথ্য পাওয়া মাত্রই কে কার আগে তা শেয়ার করবে এই চিন্তায় থাকে। ফলে ঘটনাটির সত্যতা যাচাই না করেই তা প্রকাশ করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের প্রোফাইলে বেশি লাইক, কমেন্ট এবং আইডি রিচ হওয়ার নেশায় যেকোনো বিষয় পেলেই তা নিয়ে যেন এক প্রকার প্রতিযোগিতা শুরু হয় কে কত আগে শেয়ার এবং পোস্ট করে কত বেশি লাইক কমেন্ট পাবে। ভাইরাল হওয়ার নেশায় কেউ গুজব ছড়াচ্ছে, কেউ অদ্ভুত ধরনের জামা-কাপড় পরে ঘুরছে, আবার কেউ কেউ নাচ-গানের নামে অদ্ভুত বিকৃত অঙ্গভঙ্গি ও সুর দিয়ে ভিডিও করে তা সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করছেন। এবং দুঃখজনক হলেও সত্যি, একশ্রেণির লোক এসব প্রমোট করছে বুঝে কিংবা না বুঝে। ফলে মানুষ এসব বন্ধ করার বদলে বরং আরও উৎসাহিত হচ্ছে। এছাড়াও ইদানীং ফেসবুক হ্যাক করে নানা ধরনের আপত্তিকর ছবি ভিডিও এবং ধর্মীয় উসকানিমূলক তথ্য প্রচার করা হয় যা জনগণের জন্য বিভ্রান্তকর অবস্থার সৃষ্টি ও সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে।

অথচ আমরা চাইলে যোগাযোগের এই বড় মাধ্যমকে কাজে লাগাতে পারতাম আরও ইতিবাচকভাবে। কোনো ঘটনার তথ্য ক্রসচেক করে তা প্রকাশ করলে গুজবের হাত থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। ভাইরাল হওয়ার জন্য অসুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা বাদ দিয়ে সুস্থ ধারার সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিলে মানুষের এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হতে পারে আমাদের যাবতীয় সমস্যা সমাধানের একটি সেক্টর যেখানে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বের করা সম্ভব। বর্তমান জনগোষ্ঠীর একটি বৃহৎ অংশ প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে সামাজিক মাধ্যমের সঙ্গে জড়িত। আর বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় সামাজিক মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই এই মাধ্যমের গঠনমূলক আলোচনা আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় ইতিবাচক প্রভাব রাখতে সক্ষম।

লেখক: গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
‘জনগণের সমস্যা সমাধানে পাশে থাকবে বিএনপি’
ডিপিএল: শেষ বলে পারটেক্সের এক উইকেটের শ্বাসরুদ্ধকর জয়
পানির উৎস ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণের দাবি উপকূলবাসীর
সুন্দরবনের গহিনে আগুন জ্বলছে, পানি নেই, কাটা হচ্ছে ফায়ার লাইন
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা