তামাকজনিত মৃত্যুরোধে কর বৃদ্ধির বিকল্প নেই

মেহেদি হাসান, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০২ মে ২০২৪, ০৮:৩৪ | প্রকাশিত : ০২ মে ২০২৪, ০৮:১৯

সিগারেট, জর্দা ও গুলসহ তামাকজাত পণ্যে বাড়তি করারোপ তামাকবিরোধী সামাজিক সংগঠনগুলোর অনেক দিনের দাবি। তামাকের ভয়াবহ আগ্রাসন থেকে সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ধুমপান ও তামাকে নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে এ দাবি করে আসছেন সংশ্লিষ্টরা। বিপরীতে করারোপে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা থাকে তামাক পণ্য উৎপাদন ও বিপননকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর।

সম্প্রতি আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে সব ধরনের তামাক পণ্যের ওপর কার্যকর করারোপের মাধ্যমে দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ ও প্ল্যাটফর্ম ডক্টরস ফাউন্ডেশন।

এছাড়াও তামাকজাত পণ্যে সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে মূল্যবৃদ্ধির দাবিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দিয়েছেন ২৫ জন সংসদ সদস্য। এনবিআর চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে ২৫ জন সংসদ সদস্যের স্বাক্ষরিত অফিসিয়াল সুপারিশপত্র (ডিও লেটার) তুলে দিয়েছেন বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিংয়ের সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম।

তামাক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে কর বৃদ্ধি আন্তর্জাতিকভাবে অনুসৃত একটি পদ্ধতি। কিন্তু দেশের বিদ্যমান তামাক কর ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ অর্জনে আশানুরূপ সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারছে না বলেই মনে করছেন তারা। তাই রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকপণ্যের দাম ও কার্যকরভাবে কর বাড়ানোর দাবি সংশ্লিষ্টদের। একই দাবিতে এনবিআরকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) ও গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা।

অতি সম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে অনুষ্ঠিত ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে তামাক কর বৃদ্ধির দাবি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে করারোপের দাবির যৌক্তিতা, প্রয়োজনীয়তা ও তামাকের ভয়বহ আগ্রাসনের চিত্র তুলে ধরে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ ও প্ল্যাটফর্ম ডক্টরস ফাউন্ডেশন।

সংগঠন দুটি জানায়, তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। একই সময়ে তামাক খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয় ২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকার চেয়ে কিছু বেশি।

তামাক বিরোধী আন্দোলনে জড়িতদের দাবি তামাক পণ্যের দাম বাড়লে এর ব্যবহারও কমে— পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এটি প্রমাণিত। এ অবস্থায় সিগারেটের নিম্নস্তরের প্রতি ১০ শলাকা প্যাকেটের দাম ৬০ টাকা, মধ্যমস্তরের প্রতি ১০ শলাকা প্যাকেটের দাম ৮০ টাকা, উচ্চস্তরের সিগারেটের প্রতি ১০ শলাকা প্যাকেটের দাম ১৩০ টাকা ও প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেটের প্রতি ১০ শলাকা প্যাকেটের দাম ১৭০ টাকা নির্ধারণের দাবি জানান তারা।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ ও প্ল্যাটফর্ম ডক্টরস ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, আসন্ন বাজেটে তাদের প্রস্তাবিত তামাক কর বাস্তবায়ন করা হলে দেশে সিগারেটের ব্যবহার ১৫ দশমিক ১ শতাংশ কমে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ হবে। একইসঙ্গে ৫ লাখ ৪০ হাজার ৬৫৬ তরুণ জনগোষ্ঠীর অকালমৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আয় যোগ হবে সরকারের। যা আগের বছরের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি।

প্রেসক্লাবের ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়। তিনি বলেন, ‘তামাকের ক্ষয়ক্ষতি থেকে দেশকে রক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণভাবে তামাকের ব্যবহার নির্মূল করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বির্নিমাণে সংসদ সদস্যরা কাজ করছেন।’

তানভীর শাকিল জয় বলেন, ‘কার্যকর কর কাঠামো না থাকায় আমাদের দেশে তামাকের মতো ক্ষতিকর পণ্যটির দাম অন্যান্য দেশের তুলনায় সস্তা। ফলে সহজেই সাধারণ মানুষ তামাক সেবন করছেন এবং বিভিন্ন মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন।’

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী বলেন, ‘দেশে ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী নাগরিকদের মধ্যে ১৮ শতাংশ ধূমপান করেন। এর ফলে কর্মক্ষেত্রসহ বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন।’

বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে তামাকের ক্ষতিকর দিকে থেকে রক্ষায় সব ধরনের তামাক পণ্যের দাম বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ বাপ্পিসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীরা।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠন দুটির বাজেট প্রস্তাব সমর্থন করে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকপণ্য ক্রমান্বয়ে সস্তা হয়ে পড়ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। তামাকের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষের অকালমৃত্যু, অসুস্থতা, পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি প্রভৃতি বিবেচনায় এনে আসন্ন বাজেটে সব ধরনের তামাক পণ্যের দাম বাড়িয়ে জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যেতে হবে।’

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর বলেন, ‘বর্তমানে ৭৫ শতাংশ সিগারেট ব্যবহারকারী নিম্নস্তরের সিগারেটের ভোক্তা। অথচ এই স্তরে সম্পূরক শুল্কহার মাত্র ৫৮ শতাংশ, এটা বাড়িয়ে কমপক্ষে ৬৩ শতাংশ করা হলে সিগারেটের ব্যবহার কমবে এবং রাজস্ব আয় বাড়বে। এই বর্ধিত রাজস্ব চলমান আর্থিক সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’

সংবাদ সম্মেলনে কৃষি বিপণন অধিদফতর থেকে প্রাপ্ত সাত মহানগরীর (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল এবং রংপুর) নিত্যপণ্যের গড় খুচরা মূল্য বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়। পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২১ সালের ৪ জুলাইয়ের তুলনায় ২০২৩ সালের ৪ জুলাই পর্যন্ত খোলা চিনির দাম বেড়েছে ৮৯ শতাংশ, আলু ৮৭ শতাংশ, খোলা আটা ৭৫ শতাংশ, পাঙ্গাস মাছ ৪৭ শতাংশ, ডিম ৪৩ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৩৪ শতাংশ, গুঁড়ো দুধ ৩০ শতাংশ, এবং ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ। অথচ একই সময়ে বিভিন্ন স্তরের সিগারেটের দাম বেড়েছে মাত্র ৬ থেকে ১৫ শতাংশ।

এছাড়াও সংশ্লিষ্টরা সিগারের পাশাপাশি বিড়ির দামও বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন। ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার দাবি জানানো হচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন-সংস্থার পক্ষ থেকে। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা এবং ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার কথা বলছেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের (সিটিএফকে) প্রোগ্রামস ম্যানেজার (বাংলাদেশ) মো. আব্দুস সালাম, আত্মা’র কনভেনর মতুর্জা হায়দার লিটন এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের নেতারাও বক্তব্য দেন।

(ঢাকাটাইমস/৩০এপ্রিল/এমএইচ/এসআইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

হজ পালনে সৌদি আরব গেছেন ২৪ হাজার ২৩৬ জন বাংলাদেশি

আজ শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

বড় বড় খেলাপিরা সাত, আট, নয়বার করে ঋণ পুনঃ তফসিল করতে পারছে: ফরাসউদ্দিন

গতানুগতিক ভবন নির্মাণে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে: জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী

২১ মে ১৫৭ উপজেলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা

প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন শহীদ স্কোয়াড্রন লিডার জাওয়াদের পরিবার

সব জেলায় বইছে তাপপ্রবাহ, শনিবার থেকে বৃষ্টির আভাস

‘নো হেলমেট, নো ফুয়েল’ নীতি বাস্তবায়নে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ

জেন্ডার সমতা-নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা: মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের প্রশংসা জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারির

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :