কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে যা বললেন মিল্টন সমাদ্দার
মৃত ব্যক্তিদের জাল মৃত্যুসনদ দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত এ আদেশ দেন।
এ দিন মিল্টনকে আদালতে হাজির করে তাকে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) কামাল হোসেন। অন্যদিকে রিমান্ড বাতিল ও আসামির জামিন চেয়ে আবেদন করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে জামিন আবেদন খারিজ করে তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত।
শুনানি চলাকালে মিল্টনের আশ্রম সম্পর্কে বিচারক জানতে চাইলে মিল্টন সমাদ্দার জানান, চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার আশ্রমের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৪ সালে। এক বছর পর সমাজসেবা অধিদপ্তরে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন তিনি। ২০১৮ সালে আশ্রমের কার্যক্রম পরিচালনার লাইসেন্স পান। আশ্রমটিকে কেন্দ্র করে দুটি লাইসেন্স করা হয়। একটি ফাউন্ডেশনের, আরেকটি সমাজকল্যাণের লাইসেন্স। সমাজকল্যাণের লাইসেন্সে হতদরিদ্রদের আশ্রয়, সেবা দেওয়া ও চিকিৎসার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত।
চিকিৎসার জন্য আশ্রমে কী কী ব্যবস্থা আছে? বিচারকের এমন প্রশ্নে মিল্টন সমাদ্দার বলেন, চিকিৎসার জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই। তিনি জানান, এ পর্যন্ত আশ্রমে ১৩৫ জন মারা গেছেন। তাদেরকে কবরস্থ করার রশিদও আছে। মৃতদের কবর দেওয়ার বিষয়ে একাধিক মন্ত্রণালয়ে ও প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো সহযোগিতা পাননি। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় আশ্রমের নিজস্ব অর্থায়নে মৃতদের কবরস্থ করা হয়।
বর্তমানে আশ্রমে ২৫৬ জন অসহায় মানুষ অবস্থান করছেন। তাদের সবাই বেওয়ারিশ। ছয়জন গর্ভবতী মহিলাও আছেন। তাদের দেখভাল করার জন্য একজন ডাক্তার আছেন। গর্ভবতী নারীদের পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতালে সিজার করানো হয় আশ্রমের নিজস্ব অর্থায়নে। আশ্রমে বেওয়ারিশ লোক ছাড়া অন্য কারও থাকার সুযোগও নেই বলে আদালতকে জানান মিল্টন সমাদ্দার।
ডেথ সার্টিফিকেটের বিষয়ে জানতে চাইলে মিল্টন সমাদ্দার জানান, যাদের নাম-ঠিকানা পাওয়া যায় না, তাদের কবরস্থ করার জন্য সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়। এর বাইরে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই। কোনোটাতেই তার স্বাক্ষর নেই। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্বাক্ষর করে থাকেন।
সার্টিফিকেটে কী লেখা থাকে, জানতে চাইলে মিল্টন বলেন, কী কারণে লোকটি মারা গেছে, সেটাই লেখা থাকে।
মৃত্যুর কারণ কীভাবে নিশ্চিত হন— এমন প্রশ্নের জবাবে মিল্টন বলেন, আমাদের একজন ডাক্তার আছেন। তিনি যখন তাদের দেখে যান, কার কী সমস্যা, সেটা উল্লেখ করা থাকে। তার কী কী রোগ ছিল, সার্টিফিকেটও লেখা হয় সেটার ওপর ভিত্তি করে। ডাক্তার পরিচয়ে কোনো দিন কোনো কাগজে স্বাক্ষর করিনি।
এ সময় মিল্টন আদালতের কাছে একটা সুযোগ চান, যাতে চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে আশ্রমটি ভালোভাবে চালাতে পারেন। আয়-ব্যয়ের বিষয়ে মিল্টন জানান, অডিট ফার্ম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে অডিট করা হয়। ২০১৭ সাল থেকে আয়-ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ করা আছে।
এর আগে বুধবার রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ জানান, রিমান্ডে নেওয়ার পর তার সব অপকর্ম তদন্ত করে বের করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, মিল্টনকে রিমান্ডে নিয়ে তার স্ত্রীকেও ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর যদি কেউ তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করে তাহলে তার স্ত্রীকেও গ্রেপ্তার করা হবে। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ সেগুলো মিল্টন অস্বীকার করতে পারেনি।
(ঢাকাটাইমস/০২মে/এলএম/কেএম)