মেহেরপুরে অপরিপক্ব লিচুতে বাজার সয়লাব

চলে যাচ্ছে বৈশাখ। সামনে মধুমাস জ্যৈষ্ঠ। বৈশাখের শুরু থেকেই মেহেরপুরের বাজারে উঠতে শুরু করেছে মধু মাসের রসালো ফল লিচু। তীব্র দাবদাহে লিচু ঝরে যাচ্ছে, তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে পরিপক্ব হওয়ার আগেই লিচু বিক্রি করে দিচ্ছেন বাগান মালিকরা। ফলে লিচুর আসল স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ভোক্তারা। অপরিপক্ব লিচু না খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকগণ। আর কৃষি বিভাগ বলছে, লিচুর গুণগতমান ঠিক রাখার জন্য আরো কয়েকদিন পর লিচু সংগ্রহের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় ৮০০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। শুরুতে ৬০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছিল। এ সব বাগানে, আঁটি লিচু, মোজাফ্ফর বোম্বাই, চিলি বোম্বাই, আতা বোম্বাই ও চায়না-থ্রি জাতের লিচু উৎপাদন হয়ে থাকে।
লাভজনক হওয়ায় এ জেলায় লিচুর আবাদ বাড়ছে। এখানকার লিচু রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।
চলতি মৌসুমে একটু দেরি করেই গাছে মুকুল এসেছিল তাও অনেক কম। উপরন্তু প্রচণ্ড দাবদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে গাছ থেকে ঝরে গেছে অনেক লিচু। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের।
কৃষকরা বলছেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণেই পরিপক্ব হওয়ার আগেই গাছ থেকে লিচু পেড়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ, গাছ থেকে লিচু ঝরে পড়ছে। গাছে লিচু ফেটে যাচ্ছে। কাঙ্ক্ষিত দাম না থাকায় লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের। উৎপাদন খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
তবে লিচুর আবাদে চাষিরা লোকসান গুনলেও লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। পরিপক্ব হবার আগেই লিচু বাজারে আসায় লিচুর স্বাদও কমছে বলে জানান ভোক্তারা।
বাজারে লিচু কিনতে আসা আজমাইন হোসেন জানান, বাজারে নতুন ফল এসেছে। তাই বাড়ির ছেলে-মেয়েদের জন্য কিনেছেন। যদিও একটু স্বাদ কম। আরো কিছুদিন গাছে থাকলে লিচু পুষ্ট হতো স্বাদও পাওয়া যেতো।লিচু চাষি আব্দুল আলিম জানান, তার বাগানে শতাধিক লিচু গাছ থাকলেও ফল এসেছে অর্ধেক গাছে। আবার গত বছরের তুলনায় সেই গাছগুলোতে লিচু দাঁড়িয়েছে কম। আর রোদের তাপে গাছ থেকে লিচু একাই ঝরে পড়ছে। গাছের গোড়ায় পানি দিয়েও তেমন একটা ফল পাওয়া যাচ্ছে না। আবার যেগুলো গাছে আছে, তা আবার আকারে ছোট। যার কারণে এবারে বাগানে যা লিচু পাওয়া যাবে তা তিন ভাগের এক ভাগ।
ক্রেতা আমেনা খাতুন জানান, বাজারে প্রকারভেদে লিচুর দাম এবার একটু চড়া। প্রতি ১০০ লিচুর দাম হাঁকা হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত, প্রতি পিস হিসেবে যার দাম আসছে দুই টাকা পঞ্চাশ পয়সা থেকে তিন টাকা পর্যন্ত। এ বছর লিচুর দাম একটু বেশি হলেও মৌসুমি ফল হিসেবে ক্রেতারা এ লিচু কিনছেন বেশি দামে। এক পণ (৮০টি) লিচু কিনলাম ২৪০ টাকায়। আরও বেশি নেয়ার ইচ্ছে ছিল তবে টক ও তুলনামূলক আঠির আকার বড়, রয়েছে পোকার আক্রমণও, তাই বেশি কেনা হয়নি।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জমির মো. হাসিবুস সাত্তার জানান, হাইপোগ্লাইসিন এ সাধারণত কাঁচা বা আধা পাকা অর্থাৎ পাকা নয়, এমন লিচুতে পাওয়া যায়। এটি একটি অ্যামিনো অ্যাসিড, যা মারাত্মক বমি বমি ভাব সৃষ্টি করে। অন্যদিকে মিথাইলিন-সাইক্লো-প্রোপাইল-গ্নাইসিন উপাদানটি গ্রহণের ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ দ্রুত কমে যায়। এর কারণে বমি, অচেতন এবং দুর্বল হয়ে পড়ে রোগী। কাঁচা বা আধা পাকা লিচু খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। এ বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে সচেতনতাও বাড়াতে হবে।মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, লিচুর গুণগত মান ধরে রাখার জন্য আরও কয়েকদিন পর লিচু বাজারজাত করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে কৃষকদের। শিলাবৃষ্টি এবং ঝড় ছাড়া বর্তমানে যে আবহাওয়া বিরাজ করছে তা লিচুর জন্য উপযোগী। অপরিপক্ব লিচু খেলে ভোক্তারা লিচুর পুষ্টিমান পাবে না। লিচুর স্বাদ থেকেও বঞ্চিত হবে। এমনকি লিচুর যে ওজন হওয়ার কথা তাও হবে না।
(ঢাকা টাইমস/১০মে/এসএ)

মন্তব্য করুন