টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর রুদ্রমূর্তি, তীব্র ভাঙনের মুখে স্থানীয়রা

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারি বর্ষণে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীসহ জেলার সব নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে নিম্নাঞ্চলে। পানি বাড়ার সঙ্গে রুদ্রমূর্তি ধারন করেছে যমুনা নদী। দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা। বাড়ি-ঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকে।

গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ৩৮ সেন্টিমিটার সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার এবং ঝিনাই নদীর পানি কালিহাতীর জোকারচর পয়েন্টে ৪১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

শুক্রবার সকালে টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার ভূঞাপুর, গোপালপুর, টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, নাগরপুর ও মির্জাপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের হাজারো মানুষ।

সরেজমিন উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, অস্বাভাবিকহারে পানি বৃদ্ধির কারণে ফসলি জমি ও অসংখ্য ঘর-বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। অনেকের বাড়িতে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। অনেকে আবার পলিথিন কাগজের ছাউনি তুলে রাস্তার পাশে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন স্বজনদের বাড়িতে।

এছাড়া পানি বৃদ্ধির ফলে ভাঙনের মুখে পড়েছে চিতুলিয়াপাড়া, মাটিকাটা, পাটিতাপাড়া, কোনাবাড়ী, জয়পুর, রেহাইগাবসারা, ভদ্রশিমুল, চর শুশুয়া, বাসুদেবকোল, রুলীপাড়া, রাজাপুরসহ আরও বিভিন্ন এলাকা। এরমধ্যে পাটিতাপাড়া ও মাটিকাটা এলাকায় ১০ থেকে ১৫টি পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

নিকরাইলের মাটিকাটা, কোনাবাড়ী ও পাটিতাপাড়া এলাকার ভাঙনের শিকার ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, পানি ব্যাপক বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। ইতোমধ্যে অনেকের ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ায় তারা থাকার জন্য অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, কিছু কিছু স্থানে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করছে প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। বন্যার আগে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে জিও ব্যাগ ফেলা হলে বা স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করলে ভাঙন রোধ হতো।

নিকরাইল ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল হক মাসুদ বলেন, নিকরাইলে অধিকাংশ এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে এবং সারপলশিয়া, মাটিকাটা, পাটিপাতাপাড়া, কোনাবাড়ী ও সিরাজকান্দি গ্রামে পানির স্রোতে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। এসব এলাকার কিছু কিছু স্থানে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। এছাড়া বন্যায় এখন পর্যন্ত এই ইউনিয়নে প্রায় এক হাজার ২০০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব মানুষের তালিকা করে ইউএনও বরাবর পাঠানো হবে।

গোবিন্দাসী ইউপি চেয়ারম্যান মো. দুলাল হোসেন চকদার বলেন- কষ্টাপাড়া, খানুরবাড়ী, স্থলকাশি, চিতুলিয়াপাড়া, কয়েড়া, রুহুলীসহ কয়েকটি এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে এবং এসব এলাকায় সাড়ে ৪ শতাধিক পরিবারের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যে গোবিন্দাসী বাজার পানিতে তলিয়ে গেছে। ভাঙন কবলিত এলাকার জন্য জিও ব্যাগের চাহিদা, পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহযোগিতার জন্য আজ সকালে ইউএনও মহোদয়ের কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

অর্জনা ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল আলম খান মাহবুব বলেন- আমার ইউনিয়নটি পুরোটাই দুর্গম চরাঞ্চল। এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং অনেকের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইউএনওর সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্ষতিগ্রস্ত ও পানিবন্দি পরিবারের জন্য সহযোগিতার আবেদন করা হচ্ছে।

গাবসারা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম শাপলা আকন্দ বলেন- কালিপুর, মেঘারপটল, রেহাইগাবসারা, চন্ডিপুর, জয়পুর ও রুলীপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার কৃষকের তিল, পাটসহ অন্যান্য ফলস তলিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত ১০-১৫টি ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়েছে আড়াইশ পরিবারের মানুষ। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে পুরো চর পানিবন্দি হয়ে যাবে। তবে এলাকায় নিয়মিত খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মামুনুর রশীদ জানান- যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকাগুলো পানি প্রবেশ করেছে এবং কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এ নিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবগত করা হয়েছে। এসব মানুষের পাশে দাঁড়াতে ইতোমধ্যে তালিকা করা হচ্ছে এবং দ্রুত ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হবে। এছাড়া ভাঙন কবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/০৫জুলাই/পিএস)