সাংবাদিক হাসান মেহেদী হত্যার বিচার দাবি সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের

কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত দৈনিক ঢাকা টাইমসের সিনিয়র রিপোর্টার হাসান মেহেদীর হত্যার বিচার দাবি করেছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) হাসান মেহেদীর জানাজায় অংশ নিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত দোষীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানান বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) নেতারা।
রাজধানীর রমনার ইস্কাটন গার্ডেনে ঢাকা টাইমস কার্যালয় চত্বরে হাসান মেহেদীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঢাকা টাইমস প্রকাশক ও সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন, বিএফইউজের মহাসচিব দীপ আজাদ, ডিইউজের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেনসহ সাংবাদিক নেতারা অংশ নেন।
জানাজায় ইমামতি করেন ঢাকা টাইমসের সহ-সম্পাদক শাহনূর শাহীন। নিহত হাসান মেহেদীর ছোটভাই আশিকসহ তার বন্ধু-শুভাকাঙ্খীরা জানাজায় অংশ নেন।
দেশের প্রথমসারির অনলাইন পোর্টালটির সকল সাংবাদিক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ অন্যান্য গণমাধ্যমের সাংবাদিক, শুভাকাঙ্খীরাও জানাজায় উপস্থিত ছিলেন।
হাসান মেহেদীর কফিনে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ঢাকা টাইমস সম্পাদক আরিফুর রহমান ও প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিক-কর্মীরা
এসময় সাংবাদিক নেতারা বলেন, সাংবাদিক হাসান মেহেদী পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী এটা সুস্পষ্ট হত্যাকাণ্ড। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। তদন্তপূর্বক দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানাই।
সাংবাদিক নেতারা বলেন, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এভাবে একজন সংবাদকর্মীর মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এই নির্মমতার প্রতিবাদ জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। একজন সাংবাদিক ক্ষতিগ্রস্ত হলে সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে গোটা রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
বক্তারা বলেন, সাংবাদিক হলেন সমাজ ও রাষ্ট্রের আয়না। সংবাদকর্মীরা যদি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় পড়েন, প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়, তাহলে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। আমরা অবিলম্বে সাংবাদিক হাসান মেহেদী হত্যার বিচার দাবি করছি।
ঢাকা টাইমস সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের প্রিয় সহকর্মী হাসান মেহেদী নিহত হয়েছেন। আমি জানি না কী সান্ত্বনা দেব তার স্ত্রী-সন্তানকে, কী সান্ত্বনা দেব তার বাবা-মাকে। ঢাকা টাইমস পরিবার শোকাহত। আমরা হাসান মেহেদীর হত্যার বিচার চাই।
এসময় অন্যদের মধ্যে ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মুজতবা আলী ধ্রুব, দপ্তর সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস চৌধুরী, নারী বিষয়ক সম্পাদক সুমি খান, ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের (ডিএসইইসি) সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদ রানা, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাহিদ হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জানাজা শেষে ওইদিন বিকালেই হাসান মেহেদীর মরদেহ তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফলের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া যায়। পরদিন শনিবার সকালে উপজেলার ধুলিয়া ইউনিয়নের হোসনাবাদ গ্রামের নিজ বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে যাত্রাবাড়ীর কাজলায় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ওপরের অংশে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়েছিল মেহেদীর নিথর দেহ। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত অন্যান্য সংবাদকর্মী ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসান মেহেদীর ঢাকা টাইমসের জ্যেষ্ঠ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিটে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করতেন।
দুই কন্যা শিশুর বাবা হাসান মেহেদীর বয়স হয়েছিল ৩১ বছর। ঢাকা টাইমসে যোগদানের আগে বেসরকারি টেলিভিশন নিউজ টোয়েন্টি ফোর, দৈনিক কালের কণ্ঠ ও দৈনিক বাংলাদেশের আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাজ করেছেন।
(ঢাকাটাইমস/২৪জুলাই/এসআইএস/ডিএম)

মন্তব্য করুন