ভারতে পালানোর সময় ধরা পড়ার পর যা বলেন সাবেক বিচারপতি মানিক

সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে আটকের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খণ্ড খণ্ড তিনটি ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়েছে। একটি ভিডিওতে হাতে দড়ি বাঁধা অবস্থায় মানিককে চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়। আরেক ভিডিওতে কলাপাতা বিছিয়ে এক জায়গায় শুয়ে থাকতে দেখা যায়। এতে কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে এটি ভারতের অভ্যন্তরের কোনো জায়গা। অন্য ভিডিওতে দেখা যায় তার গলায় গামছা বাঁধা। কয়েকজন লোক তাকে ঘিরে রেখে বিভিন্ন প্রশ্ন করছেন।
শুক্রবার আটকের আগে এক দফা ভারতে প্রবেশও করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক এই বিচারপতি। তখন ওপারের দালালরা প্রায় ৬০-৭০ লাখ টাকা নিয়ে যায়। অগত্যা দেশে ফিরে পুনরায় টাকা ম্যানেজ করে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি। শুক্রবার দ্বিতীয় দফায় ভারতে পালানোর চেষ্টা করছিলেন শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। প্রথম দফায় ভারতে ঢোকার পর তার অনেক অর্থ এবং মূলবান জিনিস খোয়া যায় বলে জানান।
ভারতের সীমান্তের ভেতরের ভিডিওতে মানিককে বলতে শোনা যায়, ‘আমি এ দেশে এত কষ্ট করে আইছি কি বাংলাদেশের ভেতরে যাওয়ার জন্য?’
শুক্রবার তার কাছে নগদ কত টাকা ছিল জানতে চাইলে মানিক বলেন, ‘আজকে ৪০ হাজার টাকার মতো ছিল। কাল (বৃহস্পতিবার) ৬০-৭০ লাখ টাকার মতো ছিল, দুই ছোকরা (দালাল) নিয়ে গেছে। মোবাইল ফোনসহ সবকিছুই নিয়ে গেছে।’
কত টাকা চুক্তিতে আসছেন জানতে চাইলে মানিক বলেন, ‘১৫ হাজার টাকা কন্ট্রাক্টে (চুক্তি) আসছি, সেটা ওদের দিছি। কিন্তু ওই দুই ছেলে আমাকে মাইরা ধইরা সব নিয়া গেছে। ইন্ডিয়ার ভেতরে...।’
বিচারপতি মানিককে সেখানকার একটি জঙ্গলের মধ্যে শুয়ে থাকতে দেখা গেছে। এ সময় তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি এ দেশে (ভারত) এসেছি কি বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার জন্য’।
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, তার সামনে অবস্থান করা লোকদেরকে বিচারপতি মানিক বলছেন, ‘আমি তোমাদের পয়সা দিয়ে দেব। পয়সা আমি দেব, আমার ভাই-বোন দেবে।’
তবে কীভাবে বা কেন তিনি ভারত থেকে আবার দেশে ফিরলেন, ভিডিওতে তা স্পষ্ট হয়নি।
বিচারপতি থাকাকালে মানুষের ওপর কেন জুলুম-নির্যাতন করেছেন, জানতে চাইলে মানিক বলেন, ‘আমি জুলুম করি নাই।’ এসময় পাশ থেকে স্থানীয় একজনকে বলতে শোনা যায়, এগুলো প্রশাসন জিজ্ঞেস করবে। আমরা এসব প্রশ্ন করতে পারি না।
একটি ভিডিওতে স্থানীয়দের জেরার মুখে মানিককে বলতে শোনা যায়, কতিপয় দালালের সঙ্গে ১৫ হাজার টাকার চুক্তি করেছিলেন সীমান্ত পার হতে। কিন্তু সীমান্তে তাকে মারধর করে তার সব টাকা-পয়সা ও ব্যাংক কার্ড নিয়ে গেছে দালালরা।
স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদে মানিক বলেন, ‘আমার বাড়ি মুন্সীগঞ্জ, আমার নাম বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। পিতার নাম মরহুম আব্দুল হাকিম চৌধুরী।’ পলানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভয়ে পালাচ্ছি। প্রশাসনের ভয়ে।’
দনা এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মানিক শুক্রবার (২৩ আগস্ট) বিকাল থেকে স্থানীয় দালাল সাদ্দামের সহায়তায় সীমান্তপথ ব্যবহার করে ভারতে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। দালাল সাদ্দাম কানাইঘাটের পাতিছড়া গ্রামের রফিকুল হোসেনের ছেলে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দালাল সাদ্দামের খোঁজে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি একটি টেলিভিশন টকশোতে উপস্থাপিকার ওপর রাগান্বিত হওয়ার প্রশ্নে সাবেক এই বিচারপতি বলেন, ‘ওটার জন্য আমি ক্ষমাও চাইছি।’ এ সময় শার্ট উঁচু করে কোনো একটা অপারেশনের দাগ দেখিয়ে নিজেকে অসুস্থ বলার চেষ্টা করেন তিনি।
তার কাছে কী কী ছিল জানতে চাইলে মানিক বলেন, ‘আমার সাথে ব্রিটিশ পাসপোর্ট, বাংলাদেশি পাসপোর্ট, ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ড ছিল।’
সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নানা সময়ে রাজনৈতিক বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন। বিচারপতি থাকাকালেও তিনি বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন।
সর্বশেষ একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশো অনুষ্ঠানে উপস্থাপিকাকে রাজাকারের বাচ্চা বলে গালি দেন। অনুষ্ঠান শেষেও তিনি ওই উপস্থাপিকার দিকে তেড়ে যান এবং গালাগাল করেন। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। যদিও পরে এ ঘটনায় এক আইনজীবীর করা উকিল নোটিশে তিনি লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তার দাবি, অসুস্থতার কারণে ওই সময় নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্য অনেকের মতো শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকও আত্মগোপনে ছিলেন। এরইমধ্যে একাধিক অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। দুর্নীতির দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) অভিযোগ হয়েছে তার নামে।
(ঢাকাটাইমস/২৪আগস্ট/এলএম/এসআইএস/কেএম)

মন্তব্য করুন