‘সহমত ভাই’ হওয়ার প্রয়োজন নেই, জানালেন হাসনাত আব্দুল্লাহ
ছাত্র-জনতার স্বাধীন মত প্রকাশের গুরুত্ব তুলে ধরে দৃঢ়তার সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করতে হবে, এটা চাই না। আমরা চাই দ্বিমত প্রকাশ অব্যাহত থাকুক। দ্বিমত প্রকাশের মধ্য দিয়েই আমরা সমাধানে পৌঁছাতে পারব। অন্যথায় সম্ভব না।’
রবিবার দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানপরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ সভা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যানারে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের মিলনায়তনে এই আয়োজন হয়।
রাজনৈতিক দল গঠন প্রসঙ্গে এক শিক্ষার্থীর প্রশ্নের জবাবে সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা এখনই রাজনৈতিক দল গঠন করব কি করব না, এটা বলছি না। তবে আমরা যদি গঠন করি, তাহলে আমাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ কেমন হবে? এই মতাদর্শ নিয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা করতে হবে। নয়তো একটা প্রশাসনিক ফ্যাসিস্ট কাঠামো তৈরি হবে।’
‘এখন প্রশ্ন এসেছে, আপনারা যে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করবেন, সেটি চব্বিশকে ভিত্তি করে করবেন, নাকি একাত্তরকে ভিত্তি করে? কারণ, একাত্তরকে ভিত্তি করে যদি করেন, তাহলে সেটি ছিল আওয়ামী বয়ানের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এটিকে বিকৃত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ কি শুধু আওয়ামী লীগের ছিল? আপনারা সংবিধানের দিকে দেখেন, সংবিধানটা লেখা হয়েছে সত্তরের নির্বাচনের ভিত্তিতে। আর সত্তরের প্রতিনিধি ছিল আওয়ামী লীগ। তাইলে সংবিধানটা কাদের? সংবিধানটা কি সর্বজনীন হয়েছে?’ প্রশ্ন রাখেন হাসনাত আবদুল্লাহ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সমন্বয়ক বলেন, ‘এগুলো নিয়ে অনেক আলোচনা হতে পারে। বিতর্ক হতে পারে। আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আপনাকে চিন্তা করতে হবে। আপনি একাত্তরের উত্তরাধিকার বজায় রাখবেন কি না, সত্তরের গণ পরিষদের উত্তরাধিকার বজায় রাখবেন কি না। নাকি চব্বিশে যে প্যারাডাইম শিফট হয়েছে, সেটাকে প্রতিষ্ঠা করতে চান কি না।’
এসময় ক্যাম্পাস রাজনীতি নিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ক্যাম্পাসে এতদিন যে রাজনীতির চর্চা হয়ে এসেছে সেটি ছিল লেজুড়বৃত্তিক। কিন্তু আমরা এমন রাজনীতি চাই যার দ্বারা ছাত্র, সমাজ এবং দেশের মানুষ উপকৃত হবে। ছাত্র রাজনীতি ছাড়া আমরা আমাদের আধিকার আদায় করতে পারব না।’
এ সময় কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ, সহসমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মতবিনিময় সভা চলার সময় শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষার্থীদের বক্তব্যর পরিপ্রেক্ষিতে বেলা দুইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
৫ আগস্ট চট্টগ্রামে কমিটি দেওয়া ও সরকার পতনের পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম সচল না করাসহ সমন্বয়কদের বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় ইসলামিক অধ্যয়ন বিভাগের স্নাতকোত্তরের শাখাওয়াত হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের আস্থার, ভরসার জায়গা ছিল আমাদের সমন্বয়ক ভাইয়েরা। আজকে যারা আন্দোলনের নাম দিয়ে আসতে চাচ্ছে, তারা শেখ হাসিনার দোসর ছিল অতীতে। তারা সন্ত্রাসের দোসর ছিল।’ শিক্ষার্থীরা শাখাওয়াতের এই বক্তব্যের পর বেশ কয়েকজন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
এসময় ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তরের জমির উদ্দিন, পদার্থবিদ্যা বিভাগের স্নাতকোত্তরের জগলুল আহমেদ, চতুর্থ বর্ষের মোহাম্মদ রাফসান ও তৃতীয় বর্ষের আলিম খানের দাবি, সমন্বয়কদের কর্মকাণ্ড ও বর্তমান সময় বিবেচনায় এ কমিটির প্রয়োজন রয়েছে কি না, এসব নিয়ে প্রশ্ন করলে তাদের হামলার চেষ্টা করা হয়। একপর্যায়ে হট্টগোল ও হাতাহাতি হয়।
তবে কিছুক্ষণের মধ্যে সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহর অনুরোধে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
(ঢাকাটাইমস/০৮সেপ্টেম্বর/এসআইএস)