ফরিদপুরে নিক্সন চৌধুরী, সাবেক ওসিসহ ৯৮ জনের নামে দ্রুত বিচার আইনে মামলা
ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে। ফরিদপুরের দ্রুত বিচার আদালতে দেওয়া মামলার আবেদনে নিক্সনের বিরুদ্ধে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া, চাঁদাবাজি, দাঙ্গাবাজি, সন্ত্রাসীদের মদদ দেওয়াসহ অন্যের সম্পদ লুণ্ঠনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলায় বরখাস্ত ফরিদপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন, ভাঙ্গা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন আল ইসলাম, সাবেক দুই উপজেলা চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের নেতাকর্মীসহ ৯৮ জনের নাম উল্লেখ এবং আরও অজ্ঞাতনামা ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ মামলায় অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- নিক্সন চৌধুরীর সমর্থিত ভাঙ্গা উপজেলা ও ইউনিয়নের সাবেক জনপ্রতিনিধি এবং আ.লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহর সমর্থিত নেতাকর্মীরা। এর আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর নিক্সন চৌধুরীরসহ ১১০ জন এবং আরও ৬০ জনকে আসামি করে ভাঙ্গা থানায় আরও একটি মামলা করেন উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ন আহ্বায়ক রাশেদুজ্জামান ওরফে তাসকিন রাজু।
গত বুধবার ভাঙ্গা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. সাইদুর রহমান সিকদার ওরফে মিঠু ফরিদপুর দ্রুত বিচার আদালতে নিক্সন চৌধুরীসহ ৯৮ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগ দাখিল করেন। আদালত অভিযোগটি তদন্তের জন্য ফরিদপুর জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাইদুর রহমান মিঠুর পক্ষের আইনজীবীর মধ্যে নুর আলম সিদ্দিকী লালন জানান, বাদী পক্ষের অভিযোগটি শুনানি শেষে, অভিযোগটি আমলে নেন বিজ্ঞ আদালত। পরে মামলার তদন্তের জন্য জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক মোহাম্মদ নাসিম মাহমুদ।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১ জুলাই সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা আরোপ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। এরই ধারাবাহিতায় গত ৩ আগস্ট সকাল ১০টায় ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ এলাকায় মহাসড়কে বাদীসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল হয়। ওই দিন তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন প্রতিহত করতে প্রধান আসামি সাবেক এমপি নিক্সন চেীধুরী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন, ভাঙ্গার সাবেক ওসি মামুন আল ইসলামসহ ১ থেকে ১০ নম্বর আসামিদের নির্দেশনায় ও পরষ্পর যোগসাজসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে প্রতিরোধ করার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন।
অভিযোগের বিবরণে জানা যায়, আসামিদের প্রতক্ষ্য ও পরোক্ষ অংশগ্রহণে হত্যার উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ককটেল, হাত বোমা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। ভাঙ্গা থানার ওসি মামুন আল ইসলামসহ তার সহযোগীরা প্রায় ১০০টি গুলি ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে প্রতিহত করেন। এতে বাদীসহ ছাত্র-জনতা ও সাধারণ পথচারী আহত হন। একপর্যায়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে বাদীসহ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান চিকিৎসা নিতে।
এরপর সেখানেও আসামিদের আক্রমণ ও ভীতি সৃষ্টির কারণে নিরুপায় হয়ে আহতরা অন্যত্র চিকিৎসা নেন। এ ঘটনায় মামলার জন্য কয়েকদিন পর ভাঙ্গা থানায় যান বাদী। কিন্তু ওসি মামুন আল ইসলামের কাছে কোনো আইনি সহায়তা না পাওয়ায় পরবর্তীতে আদালতের দারস্থ হন বাদী।
কাজী জাফর উল্লাহর সমর্থক ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুর রহমান মিরন দাবি করেন— যদি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তি হোক। কিন্তু কোনো নিরীহ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হন।
সাবেক এমপি নিক্সন চৌধুরীর সমর্থক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সোবাহান মুন্সী দাবি করেন- ভাঙ্গায় শিক্ষক, সংবাদকর্মীসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জড়িয়ে মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে। তাই নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায় বিচারের দাবি জানান তিনি।
ভাঙ্গা থানার সাবেক ওসি মামুন আল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, বাদীকে তিনি চিনেন না। অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
(ঢাকাটাইমস/১৩সেপ্টেম্বর/কেএম)