ইটালিতে চাকরির প্রলোভনে শার্শার তিন যুবককে পাচারের অভিযোগ, নিখোঁজ

বেনাপোল প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫:০২
অ- অ+

যশোরের সীমান্তবর্তী শার্শা উপজেলায় সংঘবদ্ধ মানুষ পাচার চক্রের কবলে পড়ে ইটালিতে ভালো চাকরির প্রলোভনে নিখোঁজ হয়েছেন একই এলাকার তিন যুবক। ইটালির কথা বলে তাদের নেয়া হয়েছে লিবিয়ায়, তারপর খোঁজ নেই। সন্তানদের হদিস না পেয়ে চরম হতাশায় রয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

পাচারকারী চক্রের মূল হোতা হিসেবে শার্শার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ধান্যখোলা গ্রামের মফিজুর রহমানের ছেলে সোহাগের নাম আসছে। সোহাগ আলী কয়েক বছর ধরে লিবিয়া প্রবাসী। সেখান থেকে তিনি মানব পাচারের কাজ করেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

বাহাদুরপুর এলাকায় তার কাজে সহায়তা করেন বাবা মফিজুর রহমান, মা মমতাজ বেগম বোন রুমা খাতুন- এমন অভিযোগ রয়েছে। তারা এলাকাবাসীকে প্রলোভন দেখান, সোহাগের মাধ্যমে অনেকেই স্বপ্নের চাকরি করতে ইটালি যাচ্ছেন। তাদের এই প্রলোভনের শিকার হয়েছেন একই ইউনিয়নের চার নম্বর ঘিবা গ্রামের আরশাদ আলীর ছেলে রানা হোসেন (২১), জব্বার আলীর ছেলে শাহীন আলম (২৩) এবং মশিয়ার রহমানের ছেলে আনোয়ার হোসেন (২৩) তাদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন আগে থেকেই লিবিয়ায় অবস্থান করছিলেন। তাকে সেখান থেকে ইটালিতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবে রাজি করায় পাচারকারীরা।

রানার মা তানজিলা খাতুন জানান, রানা একাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করতেন বেনাপোলের একটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অফিসে। সোহাগের বাবা, মা বোনের প্ররোচনায় তারা রানাকে ইটালিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। একইভাবে তানজিলার চাচা জব্বার আলীর ছেলে শাহীন আলমও ইটালি যেতে রাজি হন। লিবিয়া থেকে ইটালিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তার চাচাতো ভাসুরের ছেলে আনোয়ার হোসেন। জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে আট লাখ করে টাকা নেন সোহাগ আলী।

রানার ভাই রনি জানান, আট লাখ টাকার মধ্যে চার লাখ টাকা নিয়েছেন সোহাগের বাবা, মা বোন। পাচারকারীদের কথামতো আরও চার লাখ টাকা ইসলামি ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে।

পাচারের শিকার আনোয়ার হোসেনের বাবা মশিয়ার রহমান মা পারভীনা খাতুন জানান, সোহাগের মাধ্যমে আনোয়ার লিবিয়ায় গেছেন ২০২২ সালের ২৩ জুলাই। সেসময় সোহাগকে তিন লাখ ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। সর্বশেষ লিবিয়া থেকে ইটালিতে পাঠানোর কথা বলে আরও তিন লাখ ৮০ হাজার টাকা সোহাগ নেন ইসলামি ব্যাংকের মাধ্যমে।

রানা হোসেনের সাথে একই দিনে ইটালির উদ্দেশে যাত্রা করেন শাহীন আলম। তার বাবা জব্বার আলী এবং মা নুরজাহান খাতুন জানান, অন্যরা যেভাবে টাকা দিয়েছেন তিনিও একইভাবে দিয়েছেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, রানা হোসেন শাহীন আলম ২০২৩ সালের ২৫ মার্চ ইটালির উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। তাদের নিয়ে যান সোহাগের বাবা, মা বোন। ওই দিনই তারা ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রা করেন। কিন্তু, তাদের ইটালিতে না পাঠিয়ে লিবিয়ায় পাঠানো হয়।

পরিবারের সদস্যরা বলেন, বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার পর দুই মাস পর্যন্ত তারা সন্তানদের সাথে কথা বলতে পেরেছেন। এরপর তারা নিখোঁজ। সন্তানদের বেঁচে থাকা না থাকা নিয়ে দিনরাত কেঁদেকেটে একাকার করছেন পরিবারের সদস্যরা। প্রথম প্রথম সোহাগ ওই যুবকেরা ভালো আছেন বলে জানান। পরে ইটালির উদ্দেশে বোটে উঠিয়ে দিয়েছেন দাবি করে জানান, তাদের সাথে আর কোনো যোগাযোগ নেই। এমনকি এক পর্যায়ে সোহাগ তার পরিবারের সদস্যরা তিন যুবককে লিবিয়ায় নিয়ে যাওয়ার কথাও অস্বীকার করেন।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, সোহাগ, তার বাবা, মা বোন মিলে মানব পাচারের একটি চক্র পরিচালনা করেন। দেশের অন্যান্য স্থানেও তাদের চক্রের সদস্যরা ছড়িয়ে আছে। এরা সাধারণ মানুষকে বিদেশে ভালো চাকরি দেওয়ার নাম করে পাচার করে। রকম অভিযোগ নিয়ে মাঝেমধ্যে তাকে খুঁজতে বাইরে থেকে লোকজন আসে।

নিখোঁজ যুবকদের পরিবারের অভিযোগ, তারা রঘুনাথপুরের কবির, ঘিবার সুজন এবং ধান্যখোলার বক্ত মেম্বারকে নিয়ে সোহাগদের ধান্যখোলার বাড়িতে গিয়েছিলেন। জন্য তিন মেম্বার তাদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকাও নেন। কিন্তু সোহাগের বাড়িতে যাওয়ার পর তারা উল্টো কথা বলছেন। পিবিআইএর কাছে পাচারকারী সোহাগের পক্ষে কথা বলেন তারা।

পরিবারগুলোর অভিযোগ, তারা শার্শা থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ অনেক টাকা দাবি করে। তাই রানা আনোয়ারের পরিবার মামলা করতে পারেনি।

শুধু শাহীন আলমের মা নুরজাহান খাতুন ২০২৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর যশোরের মানব পাচার ট্রাইব্যুনাল- ছেলে শাহীন আলমের (২৪) পাচারের অভিযোগে একটি অভিযোগ করেন। আদালত অভিযোগটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) পাঠায়। পিবিআই যশোরের সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা জিয়া তাদের একবার যশোরে ডেকেছিলেন। এরপর আর কোনো অগ্রগতি হয়নি তদন্তের।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো জানায়, ঘটনা এমন দ্রুত ঘটে গেছে যে, তারা সেভাবে কোনো প্রমাণ রাখতে পারেননি। ভিসা টিকিট করার জন্য দুই যুবকের পাসপোর্ট রুমার কাছে দিয়ে এসেছিলেন। সেগুলো হাতে না পাওয়ায় তার ফটোকপি রাখতে পারেননি তারা।

বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের তিন নম্বর ওয়ার্ডের (ঘিবা) মেম্বার সুজন উদ্দিন জানান, সোহাগ তার পরিবারের সদস্যরা তিন যুবককে লিবিয়ায় নিয়ে যাওয়া এবং টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, সোহাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক।

অভিযুক্ত সোহাগের বোন রুমা খাতুন তাদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যাদের পাচারের কথা বলা হচ্ছে তাদের কাউকেই তারা চেনেন না।

পিবিআই যশোরের এসপি রেশমা শারমিন বলেছেন, ‘আমরা লিবিয়ায় মেইল করেছি। দেশের পরিস্থিতির কারণে আর কোনো খোঁজ নেওয়া হয়নি। লিবিয়া থেকে ফিরতি কোনো মেইলও পাইনি। আশা করছি দ্রুত রিপোর্ট দিয়ে দেব।

মানবাধিকার সংস্থা রাইটস যশোরের তথ্যানুসন্ধান কর্মকর্তা তৌফিকুজ্জামান বলেন, জনসচেতনতামূলক কর্মসূচির একটি উঠান বৈঠক বাহাদুরপুরের চার নম্বর ঘিবা গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এলাকাবাসী তিন যুবক পাচারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

ধরনের কোনো অভিযোগ থানায় কেউ করেনি বলে জানান শার্শা থানার ওসি মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, অভিযোগ এলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৪সেপ্টেম্বর/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
রেললাইনে ভিডিও করতে গিয়ে ফটোগ্রাফারের মর্মান্তিক মৃত্যু
‘সাময়িকভাবে’ ফ্লাইট বন্ধ করলো নভোএয়ার
সিরাজগঞ্জে নেশার টাকা না দেওয়ায় ছেলের মারধরে প্রাণ গেল বাবার, মা আহত
আফতাবনগরে পশুর হাট না বসানোর দাবিতে মানববন্ধন
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা