মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ খাওয়া শরীরের জন্য বিপজ্জনক

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৪২
অ- অ+

ওষুধ মানুষের জীবন রক্ষা করে, সেই ওষুধ যদি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়, তাহলে তা কি মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারবে। অনেকেই শারীরিক সমস্যা হতে পারে ভেবে বাড়িতে বেশ কিছু ওষুধ কিনে রাখেন। কিন্তু সেগুলো আর খাওয়া হয় না। নির্দিষ্ট সময়ের পর ওষুধের মেয়াদ শেষ হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। যা সেবন করলে শরীরের জন্য ক্ষতি হতে পারে। অন্যদিকে মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ কেটে অসাধু ব্যবসায়ীরা ওষুধ বিক্রি করে থাকে। মানহীন এসব ওষুধ কিনে মানুষ প্রতারিত যেমন হচ্ছে, ঠিক তেমনিভাবে এসব ওষুধ সেবন করে রোগী নিরাময়ের পরিবর্তে আরও জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

অনেকেই কিছু খাবার, যেমন প্যাকেটজাত দুধ, টিনের কৌটার খাবার, মাংস ইত্যাদির তারিখ মেয়াদোত্তীর্ণ হলে তা নষ্ট হয়েছে কি না, পরীক্ষা করেন এবং খাওয়া থেকে বিরত হন। সবাই জানেন, এগুলো খাওয়া অবশ্যই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ খেলে তা কি ক্ষতিকর হয়, এটি অনেকেই জানেন না। সবার আগে ওষুধের মেয়াদ শেষ হওয়ার অর্থ কী তা জানা জরুরি। ওষুধের প্যাকেটের গায়ে দুটি তারিখ লেখা থাকে। প্রথমটি হলো উৎপাদনের তারিখ, দ্বিতীয়টি হলো মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ।

মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ বলতে এই বোঝায় না যে ওষুধের কার্যকরী ক্ষমতা শেষ হয়ে গেছে। এর অর্থ হচ্ছে- এই তারিখের পর ওষুধের প্রভাবের গ্যারান্টি প্রস্ততকারক কোম্পানি গ্রহণ করবে না।

বেশিরভাগ ওষুধে রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়। রাসায়নিক উপাদানের বিশেষত্ব হলো- সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার প্রভাব পরিবর্তিত হয়। ওষুধের ক্ষেত্রেও তাই। বাতাস, আর্দ্রতা, তাপ ইত্যাদির কারণে অনেক সময় ওষুধের কার্যকারিতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। যার কারণে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হতে পারে। সেজন্য সব ওষুধ কোম্পানি তাদের পণ্যের একটি নির্দিষ্ট তারিখ লিখে দেয়। যাতে করে যেকোনো আইনি ঝামেলা এড়ানো যায়।

মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ওষুধ খাওয়া যাবে কিনা। এ বিষয়ে খুব বেশি তথ্য নেই। তবে জানা গেছে, কোনো ওষুধ যদি ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল আকারে হয়, তাহলে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও এর ক্ষমতা আরও অনেক দিন থাকবে। কিন্তু সিরাপ, চোখের ড্রপ এবং ইনজেকশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ব্যবহার করা উচিত নয়।

এদিকে মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রস্তাবিত কিছু ওষুধ রয়েছে, যা মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ব্যবহার করা যাবে না। এগুলো হচ্ছে- ডায়াবেটিস রোগীদের ওষুধ। সেগুলো মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নষ্ট হতে শুরু করে।

এছাড়া, হৃদরোগীদের ওষুধও খোলার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত এর কার্যকারিতা হারায়। রক্ত, ভ্যাকসিনের মতো ওষুধগুলো নির্ধারিত সময়ের পর ব্যবহার করা উচিত নয়।

মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার না খাওয়াই ভাল। তবে একান্ত যদি ফেলতে মায়া হয়, সে ক্ষেত্রে খেয়ে নেওয়া যেতে পারে। তা সঙ্গে সঙ্গে খারাপ হয়ে যায় না। বর‌ং পচনশীল নয়, এমন খাবারের ক্ষেত্রে মান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি। মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যাকেট থেকে মুচমুচে চিপ্‌স পাওয়ার আশা না করাই ভাল কিংবা মেয়াদ উত্তীর্ণ বিস্কুটের স্বাদেও হেরফের হতে পারে। কিন্তু, সেই সব খাবার খেলেই যে পেটের সমস্যা হবে তেমনটা নয়।

কিন্তু যে সব খাবার পচনশীল, যেমন প্যাকেটজাত দুধ, পনির, দই, ইয়োগার্ট, মাছ, মাংস, ডিম, সব্জির মতো খাবার কিন্তু মেয়াদ পেরোলেই বিপদের বাসা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই ধরনের খাবারের মধ্যে ব্যাক্টেরিয়া খুব সহজেই বাসা বাঁধতে পারে। তাই মায়া করে ফেলতে না পারলে পেট বেহাল হবে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ গমজাত খাবার খেলেও কিন্তু পেটের সমস্যা হতে পারে।

কোন ওষুধ কীভাবে সংরক্ষণ করতে হবে, সে সম্পর্কেও সবার জানা দরকার। ফার্মাসিস্টরা বলতে পারেন কোন ওষুধ কীভাবে রাখা দরকার। যেমন কিছু ওষুধ রেফ্রিজারেটরে রাখতে হবে। এর বাইরে সব ওষুধই আসলে কোনো অন্ধকার জায়গায়, যেখানে গরম বা আর্দ্রতা কম থাকবে, সেখানে রাখা দরকার।

ওষুধ কেনার আগে প্রথমেই (বিশেষ করে বোতলজাত ওষুধের ক্ষেত্রে) দেখে নিন সিলের কোথাও কোনো সমস্যা আছে কিনা। ওষুধের ক্ষেত্রে প্যাকেজিং দেখে নিতে হবে। বানান, রং, আগে যদি সেই ওষুধ কিনে থাকেন, তার সঙ্গে মোড়কটি মিলিয়ে নিতে হবে কোনো সংশয় হলেই।

মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ কেনার সময় সবচেয়ে বেশির নজর দিতে হবে ওষুধের মেয়াদের দিকে। কারণ মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ হতে পারে মৃত্যুর কারণ।

গবেষকরা বলেন, ‘একটি ওষুধ কতদিন কার্যকরী থাকবে তা আসলে একটা অঙ্কের মতো। যেহেতু ওষুধে নানাবিধ রাসায়নিক দ্রব্য থাকে, সেহেতু একটা সময়ের পর দেখা যায় ওই ওষুধের টক্সিক প্রভাব অর্থাৎ বিষাক্ত গুণাগুন বাড়তে থাকে।

সেই কারণেই ওষুধের গায়ে কতদিনের মধ্যে ওষুধ খেতে হবে তা লেখা থাকে। এটার মানে ওষুধের সেই কম্পোজিশনগুলো কতদিন ঠিক থাকবে তার ঘোষণা। একে বলে এক্সপায়ারি ডেট। সহজ ভাষায়, এক্সপায়ারি ডেট হলো একটা ওষুধের কার্যকরী থাকার নির্দিষ্ট সময়।

যার মানে ধরে নেওয়া হয়, এরপর ওই ওষুধ খারাপ হয়ে যায়। সব ওষুধেরই এক্সপায়ারি ডেট থাকে। সঙ্গে থাকে সাবধানবাণী। ইঞ্জেকশন, ট্যাবলেট, ওয়েন্টমেন্ট, স্প্রে ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘ওই তারিখটা পেরিয়ে যাওয়ার পর ওই ওষুধ খেলে ক্ষতি হতে পারে।

রাসায়নিক সংমিশ্রণে পরিবর্তনের কারণে মেয়াদোত্তীর্ণ চিকিৎসা পণ্যগুলো কম কার্যকর বা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কিছু মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির ঝুঁকিতে থাকে এবং উপ-শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকগুলো সংক্রমণের চিকিৎসা করতে ব্যর্থ হতে পারে, যা আরও গুরুতর অসুস্থতা এবং অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের দিকে পরিচালিত করে। একবার মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ পেরিয়ে গেলে ওষুধটি নিরাপদ এবং কার্যকর হবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। আপনার ওষুধের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে, এটি ব্যবহার করবেন না।

কেনার সময় অবশ্যই ঔষধের মেয়াদ দেখে কিনতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ ব্যবহারের ফলে প্রায়ই নানা মারাত্মক অসুবিধায় পড়তে হয়। মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ খেয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে এবং অনেকেই দীর্ঘমেয়াদে নানা রোগে ভুগেছেন।

(ঢাকাটাইমস/১৯ অক্টোবর/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মানুষের কিছু ভুলে বাড়ছে অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার! জানুন, সাবধান হোন
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ঘন কুয়াশায় পাঁচ গাড়ির সংঘর্ষ, আহত ২০
দিল্লিতে ৪ মাত্রার ভূমিকম্প, উত্তর ভারতজুড়ে তীব্র কম্পন
দুদিনের কর্মসূচি শুরু আজ: দাবি আদায়ে সরকারকে চাপ প্রয়োগসহ বিশ্বে তুলে ধরা হবে তিস্তার দুঃখ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা