ডাক্তার সংকট ও নষ্ট যন্ত্রপাতির কবলে আলফাডাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ভোগান্তিতে রোগীরা 

রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ, আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর)
  প্রকাশিত : ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১৬:৪৯
অ- অ+

প্রায় দুই লাখ জনসংখ্যার বসবাস ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায়। ৬টি ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভার জন্য রয়েছে একটিমাত্র ৫০ শয্যার হাসপাতাল। অকার্যকর যন্ত্রপাতি, ডাক্তার সংকট ও নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত ৫০ শয্যার এ হাসপাতাল। রোগী আছে, চিকিৎসক নেই এভাবেই খুঁড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা।

এ অবস্থায় চিকিৎসা নিতে আসা লোকজন নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কয়েক মাস ধরে মাত্র চারজন চিকিৎসক ও দুজন কমিউনিটি স্বাস্থ্য উপ-সহকারী কর্মকর্তা দিয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন অনেক আগেই বিকল হয়ে পড়ে আছে। নেই কোনো টেকনিশিয়ান। বাড়তি টাকা খরচ করে রোগীদের প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে এক্স-রে করতে হচ্ছে। ছোটখাটো অস্ত্রোপচারের জন্য রোগীদের যেতে হচ্ছে সদর হাসপাতালে কিংবা প্রাইভেট ক্লিনিকে। বেহাল হাসপাতালটি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নানা দুর্নীতির অভিযোগে দফায় দফায় ছাত্রআন্দোলন হয় সাবেক আলফাডাঙ্গা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজমুল হাসানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর এ মাসেই তাকে বদলি করা হয়েছে।

দূরত্ব কম হওয়ায় পাশের উপজেলা বোয়ালমারী ও কাশিয়ানীর থেকেও অনেক রোগী আসেন আলফাডাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। অথচ চিকিৎসক সংকটে ধুঁকে ধুঁকে চলছে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম। অন্যান্য জনবল সংকটও রয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সদের বেশ কিছু কোয়ার্টার এখন আর ব্যবহার হচ্ছে না। চিকিৎসক না থাকায় কোয়ার্টার এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে মোট ২২ জন চিকিৎসক থাকার কথা। দন্ত চিকিৎসকসহ আছেন পাঁচজন। এর মধ্যে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সপ্তাহে তিন দিন অফিসে আসেন। বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পেষণে রয়েছে পাঁচজন চিকিৎসক। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বদলি হওয়ার জন্য মেডিকেল অফিসার তানজিন জাহান জিনিয়াকে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। বিভিন্ন সময় তাকে উপজেলা ও জেলা সিভিল সার্জন অফিসে যেতে হচ্ছে কাজে। গাইনি, চক্ষু, কার্ডিওলজি, অর্থপেডিক্স, শিশু, ইএনটি, মেডিসিন, চর্ম ও যৌন, এমও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে।

শুধু তাই নয়, পাঁচজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকার কথা, আছেন দুজন। এ ছাড়া চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংকটও রয়েছে। মোটকথা হাসপাতালটি চালু রেখেছেন চারজন চিকিৎসক ও দুজন কমিউনিটি স্বাস্থ্য উপ-সহকারী কর্মকর্তা।

হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ থেকে প্রতিদিন প্রায় সহস্রাধিক ব্যক্তি চিকিৎসা নেন হাসপাতালে। চিকিৎসক সংকট থাকায় যেকোনো রোগী এলেই জরুরি বিভাগ থেকে তাদের স্থানান্তর করা হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গুরুতর রোগী স্থানান্তর নিয়ে বিপাকে পড়ে যায় দরিদ্র পরিবারগুলো। স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা না হওয়ায় মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েন অনেক রোগী। হাসপাতালে নেই কোনো ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন। এক্স-রে মেশিনটি অকার্য হয়ে পড়েছে বহুদিন ধরে।

আলফাডাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (আবাসিক মেডিকেল অফিসার (বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক) ডা. তানজিন জাহান জিনিয়া বলেন, জনবল সংকট ও প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম চিকিৎসক রয়েছেন। কর্তপক্ষের কাছে চিকিৎসক সংকট নিরসনের আবেদন করা হয়েছে। তারা আশ্বস্ত করেছেন। আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসকসহ শূন্যপদে জনবল বাড়াবেন।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ফরিদপুরের সিভিল সার্জন সাজেদা বেগম পলিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আলফাডাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল সংকটের বিষয়ে আমরা অবগত রয়েছি। বারবার নতুন করে চিকিৎসক চাওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে পার্শ্ববর্তী বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে একজন চিকিৎসককে আলফাডাঙ্গায় সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রেষণে থাকা চিকিৎসকগণ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিজেদের মতো করে বদলি হয়েছেন। সেখানে আমাদের কোনো হাত নেই।

(ঢাকা টাইমস/২৬অক্টোবর/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে হবে, প্রবেশ করা যাবে না বাসায়, থাকছে যেসব নিষেধাজ্ঞা
২২ বছর পর ৫ মে স্কাইপ চিরতরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে
দোহার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল হক গ্রেপ্তার
‘প্যালেস্টাইন-২’ হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালাল ইয়েমেন
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা