ফেনীতে সুবিধাবঞ্চিত তিন হাজার দৃষ্টিহীন

এম শরীফ ভূঞা, ফেনী
  প্রকাশিত : ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১৮:১৬
অ- অ+

আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতের কথা বিভিন্ন সময় আলোচনায় উঠে এলেও এখনো পিছিয়ে ফেনীর তিন হাজার দৃষ্টিহীন মানুষ। নানা প্রতিবন্ধকতায় তারা ঘরে-বাইরে সব জায়গায় থাকছে অবহেলিত। প্রযুক্তিগত বিষয়েও নেই তাদের কোনো ধারণা। মাঠপর্যায়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের পক্ষ থেকে এ নিয়ে দেখা যায়নি কোনো উদ্যোগ। প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা গেলে তারা স্বাবলম্বী হবে ও ভিক্ষাবৃত্তি নিরুৎসাহিত হবে।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, ফেনীতে মোট প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ২০ হাজার ৫০৮ জন। তবে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের একটি তথ্যে দেখা গেছে, জেলায় প্রতিবন্ধী ভাতা পান মোট ২৩ হাজার ১৩৯ জন। মোট দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর সংখ্যা তিন হাজার ২৩০ জন। অনেকে মনে করছেন এ সংখ্যা আরো বেশি। দৃষ্টিহীন জনগোষ্ঠীর বড় একটা অংশ পরিবার ও সমাজ থেকে অবহেলা আর উপেক্ষার শিকার।

জানা যায়, ফেনীতে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে মোট জনগোষ্ঠীর ৭৩ দশমিক ৬১ শতাংশ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। আবার ৫২ দশমিক ৩ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। তবে এখানেও দৃষ্টিহীন জনগোষ্ঠীর নির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য মাসিক ভাতা, শিক্ষা উপবৃত্তি, সুদমুক্ত ক্ষুদ্র ঋণ, সহজে বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিতে সুবর্ণ নাগরিক কার্ড ও সাদাছড়ি প্রদান করা হয়। তবে এসবের নির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। দৃষ্টিহীনরা ঘরে-বাইরে সব জায়গায় অবহেলিত। রাস্তায় বের হলেও বেশির ভাগ সময় চালকরা গাড়তে নিতে চান না।

দৃষ্টিহীন জীবনে দুর্ভোগ নিয়ে ফেনীর বিজয় সিং এলাকার চল্লিশোর্ধ্ব রেজিয়া আক্তার জানান, ‘বাইরে বের হলে সাদাছড়িই আমার একমাত্র ভরসা। তবে নানা প্রতিবন্ধকতায় ঠিকভাবে চলাফেরা করতে পারি না। ফুটপাতে বৈদ্যুতিক খুঁটি, ব্যবসার পসরা চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। আবার কিছু জায়গায় ফুটপাত কোনো বাড়ি বা ভবনের গেটের সামনে কাটা থাকে। ফুটপাত দিয়ে চলাচল করাও আমাদের জন্য অনিরাপদ।’

পড়াশোনা করার অনেক ইচ্ছে থাকলেও চোখে দেখেন না বলে সেটি থেকে বঞ্চিত সদর উপজেলার মাথিয়ারা এলাকার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হামিদুল্লাহ। বলেন, ‘এখন আশপাশের সবাই মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে, কিন্তু আমি পারছি না।’

ছেলে-মেয়েরা সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত বলে উল্লেখ করে রেহানা আক্তার নামে আরেক দৃষ্টিহীন নারী বলেন, ‘সংকেত দেওয়া সাদাছড়ির কথা শুনেছি। তবে কখনো এ বিষয়ে কেউ বুঝিয়ে বলেনি। লাঠিতে ভর করেই একা একা জীবন কাটাতে হচ্ছে।’

অন্ধ জীবনে অন্যের ওপর নির্ভর করেই চলতে হচ্ছে পরশুরামের বৃদ্ধ জাফর আহম্মদকেও। তিনি বলেন, ‘কত প্রযুক্তির কথা শুনি, কিন্তু আমাদের জন্য কেউ কিছু করে না। এসব অক্ষমতায় কখনো পড়াশোনা করারও সুযোগ পাইনি। আগে ভাতার টাকা পেলেও তা এখন বন্ধ। শেষ বয়সে এসে খুব কষ্টে দিন পার করছি।’

জেলা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ক্ষুধা নিবারণ সমিতির সভাপতি নাসির উদ্দিন ভূঁইয়া সবুজ বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের সুরক্ষায় দেশে আইন বা নানা সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ থাকলেও তা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে এ জনগোষ্ঠীকে সমাজ থেকেই একরকম আলাদা করে দেওয়া হয়েছে।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের হাতে কলমে কোনো ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে তারা কর্মসংস্থানের মাধ্যমে কিছু একটা করতে পারবে বলে জানান এফবিএম ফাউন্ডেশন উপদেষ্টা একরামুল হক। বলেন, অনেকে নিরুপায় হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান নিশ্চিত করা গেলে অনেক সমস্যা কেটে যাবে।

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ চলমান রয়েছে। কোনো আবেদন বা তথ্য পেলে বিভিন্ন উপলক্ষে তাদের সাদাছড়ি দেওয়া হয়। ভাতাসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন প্রতিবন্ধিরা।

(ঢাকাটাইমস/২৭অক্টোবর/মোআ/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
কারাগারে সেলিনা হায়াৎ আইভী, যে মামলায় গ্রেপ্তার
মির্জাপুরে উদ্ধার হওয়া গরু ফিরিয়ে দিতে ৫০ হাজার টাকা চাইলেন এসআই
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর: তাদের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, তবুও বহাল...
পাকিস্তান থেকে চার্টার্ড ফ্লাইটে ফেরানো হবে রিশাদ ও নাহিদকে!
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা