লোটাস কামালের সেই অবৈধ টাওয়ার এখন...
বাংলাদেশের লুটপাটের অন্যতম বিশেষজ্ঞ বলা হয় তাকে। আর্থিক খাত ধ্বংসের হোতাও তিনি। তবে পাঁচ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। পাসপোর্ট কিনে নাগরিকত্ব নিয়েছেন দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতুর।
বিতর্কিত এই ব্যক্তি হলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আহম মোস্তফা কামাল। দেশের পট পরিবর্তনের আগে স্বপরিবারের দেশ ছাড়লেও এখনো রয়ে গেছে তার কুকীর্তির নিদর্শন। ঘুষ, দুর্নীতি, দখল, অবৈধ কাণ্ডের নানা কীর্তি এখন দৃশ্যমান। তেমনই একটি নজির হলো- গুলশানের এই টাওয়ার। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়, নিয়মের তোয়াক্কা না করে, কীভাবে সুউচ্চ এই ভবনটি গড়ে তোলা হয়েছিলো, দর্শক আপনাদের তা দেখাবো।
রাজধানীর অত্যন্ত দামি জায়গা হলো গুলশান। গুলশান অ্যাভিনিউ থেকে এক থেকে দুই নম্বরের দিকে যেতেই ৫৯ ও ৬০ নম্বর প্লটে নির্মাণ করা হয়েছে বহুতল এই ভবনটি। সেখানে এখন শপিংমল, অফিসসহ জমজমাট অবস্থা। কিন্তু এই ভবনটি নির্মাণের পেছনে রয়েছে বিরাট গলদ।
প্রথমে ১৪ তলার অনুমতি নিয়ে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এরপর নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে ১৪ তলার ওপর একে একে বানানো হয় আরো ছয়টি তলা, যেগুলো পুরোপুরি অবৈধ।
আর এই অবৈধ কাজ, বৈধ করতে এক অভিনব কৌশল অবলম্বন করা হয়েছিল। তখন ২০২১ সাল। লোটাস কামাল আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী; তার নেতৃত্বে সে সময় চলছিলো আর্থিক খাত খেয়ে ফেলার মহাভোজ। স্বাভাবিকভাবেই তখন বিপুল ক্ষমতা ও প্রভাবের অধিকারী ছিলেন লোটাস কামাল।
ঠিক সে সময় বহুতল ওই ভবনের অবৈধ ছয়তলা বৈধ করার উদ্যোগ নেয়া হয়। রাজউকে আবেদন করেন কামালের স্ত্রী কাশ্মীরী কামাল এবং দুই মেয়ে কাশফি কামাল ও নাফিসা কামাল।
সেই আবেদনে জরিমানা দেয়ার মাধ্যমে ১৪ তলার ওপর আরো ৬ তলাকে অনুমোদন দেয়ার জন্য চাপ দেয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে বেশ জটিলতায় পড়ে যায় রাজউক। বিষয়টি উত্থাপন করা হয় পাঁচ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন কমিটিতে।
এরপর রাজউক থেকে নেয়া হয় কৌশলি অবস্থান। ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, প্রকৌশলী ও স্থপতির লে-আউট নকশা, রাজউকের বৃহদায়তন প্রকল্পের অনুমোদন এবং ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের জন্য কাঠামোগত উপযোগিতার বিষয়ে স্থাপত্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে বলে লোটাস কামালের পরিবারকে জানান রাজউক কর্মকর্তারা।
রাজউকে সূত্রে জানা যায়, ভবনটি নির্মাণে অনিয়ম হয়েছে পদে পদে। সবচেয়ে বড় লঙ্ঘন হলো- অনুমোদন না নিয়ে ভবন সম্প্রসারণ করা। এই ব্যয়ের জন্য অভিযুক্তদের সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে লোটাস কামালের কি দণ্ড হবে? পটপরিবর্তনের আভাস পেয়ে আগেই বিদেশে কেটে পড়েন দুর্নীতির এই শিরোমনি।
কুমিল্লা-১০ আসনের পাঁচবারের এমপি লোটাস কামাল পেশায় ছিলেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। ক্রিকেট সংগঠক হিসেবেও পরিচিতি আছে তার। কিন্তু সব পরিচয় ছাপিয়ে তিনি একজন অর্থনীতিবিদ। আর তার হাতেই দেশের অর্থনীতি পঙ্গুত্ব বরণ করেছে সমালোচনা আছে।
অভিযোগ রয়েছে, লোটাস কামাল শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন। মালয়েশিয়ায় কর্মী রপ্তানি সিন্ডিকেটের মাধ্যমেও হাতিয়েছেন বিপুল অর্থ। নিয়ন্ত্রণ করতেন আর্থিক ও ব্যাংক খাত। পেতেন তদবির, নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি বাণিজ্যের কমিশন। নিজের ও স্বজনের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন।
লোটাস কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামালের সম্পদও কম নয়। সাবেক এ অর্থমন্ত্রী স্ত্রী, দুই মেয়ে ও পাঁচ নাতি-নাতনির নামে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশে হাজার-হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/২৫জানুয়ারি/আরবি)

মন্তব্য করুন