দেশে জিকা ভাইরাসের গুচ্ছ সংক্রমণ শনাক্ত

দেশে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্তের এক দশক পর এবার ভাইরাসটির গুচ্ছ (ক্লাস্টার) সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। একই এলাকার পাঁচ ব্যক্তির সংক্রমণের বিষয়টি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)।

সোমবার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানানো হয়। তাদের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে সংগ্রহ করা নমুনা পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানান বিজ্ঞানীরা।

ক্লাস্টার বা গুচ্ছ সংক্রমণ হলো এক স্থানে একাধিক ব্যক্তির শরীরে ভাইরাসটির সংক্রমণ।

২০১৬ সালে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালিত একটি পর্যালোচনা গবেষণায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি উঠে আসে।

দেশে এই ভাইরাসের গুচ্ছ সংক্রমণের বিষয়ে আইসিডিডিআরবির ওয়েবসাইটে বলা হয়, বাংলাদেশি এই স্ট্রেইন (অণুজীবের উপপ্রকার) এশিয়ান লাইনেজের অন্তর্গত। এতে আক্রান্ত হলে মাইক্রোসেফালি ও অন্যান্য স্নায়বিক রোগের মতো গুরুতর সংকট দেখা দিতে পারে। এই স্ট্রেইন ২০১৯ সালে কম্বোডিয়া ও চীনে দেখা যায়।

বাংলাদেশের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু, উষ্ণ তাপমাত্রা ও দীর্ঘ বর্ষাকাল এডিস মশার জন্য সর্বোত্তম প্রজনন পরিস্থিতি তৈরি করে উল্লেখ করে আইসিডিডিআরবির ওয়েবসাইটে বলা হয়, এ কারণে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত অনেক রোগ হয়। জিকাও ভাইরাসও এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এর লক্ষণ ডেঙ্গুর মতো হলেও ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই ধরা পড়ে না। বছর জুড়ে মানুষের শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। জিকা ভাইরাসে আক্রান্তের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমেও সংক্রমিত হওয়া ঝুঁকি থাকে। জিকা আক্রান্ত হয়ে গর্ভবতী হলে অথবা গর্ভবতী জিকা আক্রান্ত হলে শারীরিক নানা জটিলতা নিয়ে শিশুর জন্ম হয়।

ক্লাস্টার সংক্রমণের বিষয়ে আইসিডিডিআরবি বলছে, গবেষকেরা ২০২৩ সালে তাদের ঢাকার রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে আসা রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করেন। জ্বর আক্রান্ত ১৫২ জন রোগীর শরীরে জিকার লক্ষণ রয়েছে এমন সন্দেহে তাদের নমুনা পিসিআরভিত্তিক পরীক্ষা করা হয়। এতে পাঁচজনের নমুনায় জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়। এই পাঁচজন রোগী এক কিলোমিটারের মধ্যে বসবাস করতেন। তাদের কেউ-ই দুই বছরের মধ্যে বিদেশ ভ্রমণ করেননি। এসব রোগী একই সময়ে পরীক্ষা করিয়েছেন। ফলে বিষয়টি একই সংক্রমণ চক্রের অংশ হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। এ ছাড়া পাঁচজন আক্রান্তের মধ্যে একজন ডেঙ্গু ভাইরাসেও সংক্রমিত হয়েছিলেন।

১৯৪৭ সালে প্রথম উগান্ডায় বানরের শরীরে ধরা পড়ে জিকা ভাইরাস। ১৯৫২ সালে প্রথম শনাক্ত হয় মানবদেহে। এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

(ঢাকাটাইমস/৩মার্চ/মোআ)